...
প্রাগৈতিহাসিক এক সফরের গল্প (১২ই জুলাই, ২০১৩)
****************************
১৮৭৭ সালে অফিসিয়ালি প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার নয় বছর আগে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড সফরে যায় অস্ট্রেলিয়া। চার্লস লরেন্স ছিলেন সে দলের কোচ এব্ং অধিনায়ক। ১৪ সদস্যের সে দলে শুধু লরেন্সই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার। বাকি সবাই ভিক্টোরিয়ার আদিবাসী! ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত চার্লস ডারউইনের 'অরিজিন অব স্পেসিসে'র ধাক্কায় তখন গোটা ইউরোপ তোলপাড়। লরেন্সের ইচ্ছা ছিল, আদিবাসী ক্রিকেটারদের দিয়ে ইংলিশদের মনে 'বাহারি উপজাতি' সম্বন্ধে একটা ধারণা দেওয়া।
মানতেই হবে, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সে প্রচেষ্টায় তিনি সফল হয়েছিলেন শতভাগ !
( ১.ইংল্যান্ড সফরে আসা অষ্ট্রেলিয়া আদিবাসি ক্রিকেট দল। ২. আদিবাসিদের গতিসম্রাট জেলেনাচ (জন কিউজেন্স), ভাল ব্যাটও করতেন। ----ছবিঃ বিবিসি)
সফরটি শুরুর আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কারণ, ভিক্টোরিয়ার আদিবাসীদের রক্ষায় কেন্দ্রীয় বোর্ড জানায়, ইংল্যান্ডের বেতাল আবহাওয়ার সঙ্গে আদিবাসীরা খাপ খাওয়াতে পারবেন না। আগের বছর সিডনি সফর হয়েছিল চার আদিবাসী মারা যাওয়ায়।
তাদের অন্তত দু'জনের মৃত্যুর কারণ ছিল নিউমোনিয়া। তবু লরেন্স একপ্রকার বাধ্য হয়ে ভিক্টোরিয়া থেকে ওই ১৩ আদিবাসীকে সিডনি পোতাশ্রয় পর্যন্ত নিয়ে আসেন সম্পূর্ণ চোরাকারবারির কায়দায়! সেখান থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পশমি সুতো বহনকারী পালতোলা জাহাজে চেপে তিন মাসের বেশি সময় সাগরে ভেসে ১৩ মে ইংল্যান্ডের গ্রেভসন বন্দরে পেঁৗছান লরেন্স ও তার আনকোরা ক্রিকেটাররা।
প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়ায় ২৫ মে ওভালে সারের বিপক্ষে। ওই ম্যাচসহ পরপর টানা পাঁচটি ম্যাচে লরেন্সের দল হারলেও তারা প্রতিদিন গড়ে আট হাজার দর্শকের হৃদয় ঠিকই জিতে নেন। বেশির ভাগ ম্যাচই ছিল দু'দিনের।
তৃতীয় দিনে ক্রিকেট খেলার বদলে মাঠে আদিবাসী ক্রিকেটাররা নানা রকম কসরত দেখাতেন। এর মধ্যে ছিল ১০০ গজ পেছনে দৌড়ানো, বুমেরাং (এক ধরনের ছুরি) ছোড়া ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, আদিবাসীদের অদ্ভুতুড়ে সব নাম উচ্চারণ করতে না পারায় ইংলিশ দর্শকরা মাঠে তাদের কসরত দেখে আলাদা আলাদা উপাধি দেয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন 'ডিক-এ-ডিক'। তার কাজ ছিল, ছোট্ট খুপরির মতো একটি শিরস্ত্রাণ পরে মাঠে দাঁড়ানো, আর দর্শকরা তাকে উদ্দেশ করে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কোণ থেকে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট বল ছুড়ত।
১২৬ দিনব্যাপী গোটা ট্যুরে দর্শকরা মাত্র একবারই তার মাথায় বল লাগাতে পেরেছিল!
ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে অন্তত একটি ম্যাচ খেলতে মরিয়া ছিলেন লরেন্স। মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) প্রথমে নিমরাজি থাকলেও পরে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। তৃতীয় দিনে আদিবাসীদের কসরত দেখানো নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। লর্ডসের পরিবেশের সঙ্গে নাকি তা খাপ খায় না। একজন আর্ল এবং কাউন্ট নিয়ে গঠিত ইংলিশ দলের বিপক্ষে দেড় দিনের মধ্যেই লরেন্সের দল হার মানে।
বেঁচে যাওয়া সময়টুকুতেই বিভিন্ন কায়দা-কসরত দেখিয়ে লর্ডসের মন জিতে নেন আদিবাসীরা। পরে এমসিসিও তাদের বিবৃতিতে বলতে বাধ্য হয়, 'আদিবাসীদের ওই অংশটুকু না থাকলে দর্শকরা আশাহত হতো। '
হর্ষধ্বনি পাওয়ার সঙ্গে লরেন্সের দলে ট্র্যাজেডিও ভর করে। তাদের সেরা ফিল্ডার কিং কোল কাঁধে আঘাত পেয়ে আহত হওয়ার পর যক্ষ্মা ও নিউমোনিয়ার প্রকোপে মারা যান। তবে সবমিলিয়ে মোট ৪৭টি ম্যাচের মধ্যে ১৪টি জয়ের পাশাপাশি ততসংখ্যক ম্যাচ হারে লরেন্সের দল।
বাদবাকি ম্যাচগুলো ড্র হয়। অফিসিয়ালি ওই ট্যুরে ২ হাজার ১৭৬ ইউরো লভ্যাংশ এলেও তার একটি কানাকড়িও আদিবাসীদের দেওয়া হয়নি। ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসী প্রতিরোধ আইন হওয়ায় পর থেকে বহির্বিশ্বে তাদের আর ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়নি। এর ঠিক ১২৮ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ফের দেখা যায় একজন আদিবাসীকে, তিনি জ্যাসন গিলেস্পি।
প্রথম সে সফরে আদিবাসীরা অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও তাদের মানসিক অবস্থার দারুণ বর্ণনা দিয়েছিলেন সাবেক অসি টেস্ট ক্রিকেটার অ্যাশলে মেলেট।
লরেন্সের দলের ওই সফর নিয়ে ২০০২ সালে তার লেখা 'লর্ডস ড্রিমিং' বইয়ের কিছু লাইন এরকম_ 'তারা সুখী ছিল। কারণ অষ্ট্রেলিয়ায় তখন আদিবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হতো। বর্ণবৈষম্য ছিল সমাজের নিয়তচিত্র। তুলনা দিতে গেলে বলতে হবে, সিডনি বন্দর থেকে তারা যেন মহাকাশযানে চেপেছিল চাঁদে যাওয়ার উদ্দেশে!'
ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি (২৫ নভেম্বর, ২০১৩)
**************
১৮৬৪ সালে লন্ডনের ব্যাটারসিয়া পার্কে সেক্রেটারি একাদশ বনাম প্রেসিডেন্ট একাদশের মধ্যকার ম্যাচটি দিয়েই এফএর বেঁধে দেওয়া নিয়মে প্রথমবারের মতো ফুটবলের পথচলা শুরু। তারপর কত কিছুই তো ঘটে গেল।
প্রাণঘাতী সংঘর্ষ থেকে শুধু পেলের খেলা দেখতে আফ্রিকায় সাময়িক যুদ্ধবিরতিও। কিন্তু এটা তো মুদ্রার এক পিঠ মাত্র। অপর পিঠে অসংখ্য বিজয়গাথার মাঝে আজও স্বমহিমায় টিকে আছে এমন একটি ম্যাচ, যার ফলাফলে কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য!
১৯৫৩ সাল। ওয়েম্বলিতে এক লাখ কুড়ি হাজার দর্শক। বেশিরভাগেরই প্রত্যাশা ছিল 'ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স'দের হার।
কারণ ওয়েম্বলিতে তখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারেনি। যদিও প্রতিপক্ষ দল তিন বছর ধরে অপরাজিত থাকা ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরি। তখন ফুটবলকে একান্তই নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করা চলা নাক-উঁচু ব্রিটিশদের বিপক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক দলটির মুখোমুখি হওয়াকে গণমাধ্যমগুলো তকমা দেয় 'ম্যাচ অব দ্য সেঞ্চুরি'।
স্ট্যানলি ম্যাথুজ, আলফে রামসিদের আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি ছিল না। কারণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য তখনও অস্ত যায়নি।
উপমহাদেশ হাতছাড়া হলেও ব্রিটিশদের করতলে ছিল আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশ। তা ছাড়া কয়েক মাস আগেই মাউন্ট এভারেস্টকে পদানত করে ব্রিটিশরা। পক্ষান্তরে হাঙ্গেরির অবস্থা তথৈবচ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। জোসেফ স্ট্যালিনকে অনুসরণ করে হাঙ্গেরিকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন নতুন কমিউনিস্ট নেতা রাকোসি।
হাঙ্গেরির তখনকার কোচ গুস্তাভ সেভেস নিজেও ছিলেন সরকারদলীয় সদস্য। মনেপ্রাণে সমাজতান্ত্রিক সেভেস মন্তব্য করেছিলেন, 'পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের লড়াইটা শুধু সমাজেই নয়, বরং মাঠেও হবে। '
সামরিক বাহিনীতে কিছুদিন থাকায় দেখতে খাটো ফেরেঙ্ক পুসকাসকে সবাই তাকে ডাকত 'গ্যালোপিং মেজর' (ক্ষুদে কামান)। গোল করতে কষ্মিনকালেও কখনো ডান পা কিংবা মাথা ব্যবহার করেননি। শুধু বাঁ পা-কে সম্বল করে ৮৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি কীভাবে ৮৩ গোল করেছিলেন, তা আজও ফুটবলপণ্ডিতদের গবেষণার বিষয়; সেই পুসকাসকে তাক করে ইংলিশ খেলোয়াড়রা টিটকারি মারে_ 'ওই হোৎকা ক্ষুদে ছোকরাটাকে দেখ।
' জবাবে ম্যাচ শুরুর ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় ইংলিশদের জালে বল পাঠিয়ে দেন পুসকাস। ২৮ মিনিট পর ইংল্যান্ড ১ :হাঙ্গেরি ৪। হাঙ্গেরি শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জেতে ৩-৬ ব্যবধানে। কিন্তু টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যাচের ফলাফলটা হতে পারত ইংল্যান্ড ৩ : হাঙ্গেরি ১২!
শেষ বাঁশি বাজার পর ওয়েম্বলি এতটাই চুপসে গিয়েছিল যে, মাঠে একটা পিনপতন শব্দেও তারা হয়তো কেঁপে উঠত। কয়েক মাস পর হাঙ্গেরির 'নেপস্ট্যাডিওনে (জনগণের মাঠ) আবারও পুসকাসদের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড।
এবার হারের ব্যবধান ৭-১! 'থ্রি লায়নস'দের ইতিহাসে আজও সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের কলঙ্ক তিলক এই হার।
১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত ব্রিটিশরা বিশ্বকাপে অংশ নিত না এই ভেবে যে, নন-ব্রিটিশদের সঙ্গে খেললে তাদের সম্মান ভুলুণ্ঠিত হবে; কিন্তু হাঙ্গেরির বিপক্ষে ওই দুটি হারের পর ব্রিটিশদের দিবাস্বপ্ন ভেঙে যায়, যার ব্যাখ্যায় ইংরেজ ইতিহাসবিদ এরিক হবসওয়াম বলেছিলেন_'ব্রিটিশরা খেলাটিকে দুই মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। সে কারণে তারা নিজেদের মাপত আলাদা উচ্চতায়; কিন্তু ওই ম্যাচের পর তাদের সে বিশ্বাসে চিড় ধরে। '
ম্যাচটিকে পুঁজি করে ১৯৯৯ সালে একটি ছবি তৈরি করেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক পিটার টিমার। ছবিটির নামও ৬ :৩।
হাঙ্গেরীর ফুটবলে পুসকাসের অবদানটা এক কথায় বর্ণনা করেছেন দেশটির খ্যাতনামা লেখক পিটার এসত্রানজি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল_ বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কে? এসত্রানজি জবাব দেন_ 'কে আবার, পুসকাস। '
ইতিহাস পাল্টে দেয়া সেই ম্যাচটার ষাট বছর পূর্তি আজ!
ফুটবলে থেমেছিল মহাযুদ্ধ ! (২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩)
*******************
নাইজেরিয়া তখন গৃহযুদ্ধে কাঁদছে, যার হোতা ছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াকুবু এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওজুকু। রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের মাঝেই লাগোস বিমানবন্দরে অবতরণ করে সান্তোস। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির উদ্দেশ্য বিশ্বসফরের অংশ হিসেবে একটি প্রীতিম্যাচ খেলা।
শেষ পর্যন্ত সান্তোসের একজন খেলোয়াড়কে কেবল একনজর দেখার জন্য ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিলেন দুই সমরনায়ক। ফুটবলে যাদের অরুচি আছে, তারাও জানেন সেই খেলোয়াড়ের নামটা_ এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো। সবাই ডাকে 'পেলে'।
লিভারপুলের কিংবদন্তি ম্যানেজার বিল শ্যানকি একবার বলেছিলেন, 'কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, ফুটবলের মহিমা জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে তুলনীয়। তাদের এ মানসিকতায় আমি খুবই মর্মাহত।
কেননা, ফুটবল এর চেয়েও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। '
আবেগমথিত বাক্যে ১৯৬৭ সালে পেলের ঘটনাটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন শ্যানকি। স্কটিশ ওই ভদ্রলোক বিশ্বাস করতেন, সামান্য চর্মগোলক দিয়ে যুদ্ধের ভয়ঙ্করতাকেও রুখে দেওয়া সম্ভব। তিনি শিখেছিলেন ইতিহাস থেকে। ৯৯ বছর আগে পৃথিবীতে এমন একটা মুহূর্ত এসেছিল, যখন ফুটবল কিছুক্ষণের জন্য হলেও থামিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ!
সালটা ১৯১৪।
প্রথম মহাযুদ্ধের পাঁচ মাস চলছে। ইতিহাসখ্যাত ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে জার্মান ও ব্রিটিশ সেনাদের রক্তে সিক্ত হয়ে উঠছিল ফ্লান্ডার্সের মাটি। এরই মধ্যেই এলো বড়দিন। এই উপলক্ষে দুই শিবিরকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠান স্বয়ং পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট। বলেছিলেন, 'দেবদূতদের গান গাওয়ার রাতে থেমে যেতে পারে অস্ত্রের ঝনঝনানি।
' কিন্তু তার আকুতি কোনো পক্ষই কানে তোলেনি।
সেই ফ্লান্ডার্সেই ২৪ ডিসেম্বর মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির সৈন্যরা হার মানিয়ে দেয় কল্পনাকেও। ক্রিসমাস ইভিনিংয়ে বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল জার্মান সেনারা। তাদের সাজানো ক্রিসমাস ট্রির আলো ও প্রার্থনাসঙ্গীতের শব্দ শুনতে পায় ব্রিটিশ সেনারা। তারাও বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
ব্রিটিশ সার্জেন্ট ক্লেমেন্ত বার্কারের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়, সাদা পতাকা হাতে ট্রেঞ্চ থেকে সর্বপ্রথম 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এ বের হয়ে আসেন এক জার্মান সেনা। সে আমাদের বলল, তোমরা এখন গুলি থামালে আমরাও সকালে (বড়দিন) গুলি করা বন্ধ রাখব। ' ব্যস, এরপর আর থামাথামি নেই। অস্ত্র রেখে পিলপিল করে বেরিয়ে আসে দু'পক্ষের সেনারা। কিছুক্ষণ আগেও যারা মেতে উঠেছিল পাইকারি হত্যাযজ্ঞে, তারাই বড়দিনের উপহার হিসেবে নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করে খাবার, সিগারেট, অ্যালকোহল, জামার বোতামসহ নানা প্রয়োজনীয় বস্তু।
বার্কারের পাঠানো ওই চিঠি থেকে জানা যায়, নো ম্যানস ল্যান্ডে ভোজবাজির মতো ফুটবল উপস্থাপন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সেনা। কোত্থেকে তিনি বলটা পেয়েছিলেন, তা অবশ্য জানাননি বার্কার। ফুটবল পেয়েই অস্ত্র রেখে ব্রিটেন এবং জার্মানি ভাগ হয়ে পড়ে দুটি দলে। তার আগে অবশ্য নো ম্যানস ল্যান্ডে পড়ে থাকা ৬৯টি মৃতদেহ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করে দু'পক্ষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি শেষ পর্যন্ত হার মানলেও ওই ফুটবলযুদ্ধে তারা ব্রিটেনকে পরাজিত করেছিল ৩-২ ব্যবধানে।
ঘটনার শতবর্ষ পূর্তি হবে ২০১৪ সালে। সে উপলক্ষে ফ্লান্ডার্সে একটি ফুটবল মাঠ বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার বছর ১১ মাসব্যাপী সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহতের সংখ্যা দেখে এতটুকু কেঁপে ওঠেননি বিখ্যাত স্কটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। বরং ওই ফুটবল ম্যাচটাকে একমাত্র সুখস্মৃতি হিসেবে রেখে শার্লক হোমস স্রষ্টা মন্তব্য করেছিলেন, 'এতসব নৃশংসতার মাঝে শুধু ওই একটা মনুষ্যত্বের পর্বই (ফুটবল ম্যাচ) মুছে দিতে পারে যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি। '
(সবগুলো লেখাই বেশ পুরোনো।
ভাল লাগতে পারে ভেবে ভাগাভাগি করে নিলাম)
ছবিঃ ইন্টারনেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।