দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইনটারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) প্রতিবেদনে সংসদ সদস্যদের বিশেষ অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে স্পিকারের রুলিংও দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ সেলিম বলেন, “টিআইবি সীমা লংঘন করেছে। তারা বলেছে এই সংসদ ক্ষণস্থায়ী। খালেদা আর টিআইবির কথা একই। ”
টিআইবির টাকায় জঙ্গি অর্থায়ন হয় কি না তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য।
মঙ্গলবার নবম সংসদের ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এ সংসদে বিরোধী দল নেই। সংসদে সরকারি দল রয়েছে। বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সে বিরোধী দল নেই।
“আমরা আশা করি, দশম সংসদের ব্যতিক্রমী এ চরিত্রটি হবে সাময়িক। সংসদে কার্যকর বিরোধী দল আসবে।
”
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শেখ সেলিম বলেন, “টিআইবির কী অধিকার আছে সংবিধান, সংসদ, রাজনীতি নিয়ে কথা বলার। তারা সংসদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। ”
টিআইবির অর্থ জঙ্গিদের দেয়া হয় কি না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানকে (টিআইবি) যে কাজে অনুমতি দেয়া হয়েছে তার বহির্ভূত কাজে যে টাকাগুলো আসে সেই টাকা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দেয়া হয় কি না, দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা হয় কি না, কোথা থেকে এই টাকা আসে সেগুলো এনজিও ব্যুরোকে তদন্ত করার অনুরোধ করবো। ”
টিআইব কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তথাকথিত এই সুশীল সমাজ, এদের আয় কোথা থেকে আসে? বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে। এর টাকা কোথা থেকে পায়? এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকেও অনুরোধ করবো একটি প্রতিবেদন এই সংসদে উপস্থাপন করা হোক।
”
বিএনপির সংসদ বর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ সেলিম বলেন, “তাদের চোখ অন্ধ। এখানে বিরোধী দলীয় নেত্রী বসে আছেন সেটা তারা দেখে না। তারা নির্বাচনের কথা বলেছে। কিসের জন্য নির্বাচন, কার জন্য নির্বাচন?”
এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের যদি রাজনীতির এতই খায়েশ থাকে তবে ১৯ দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ২০ দল হন।
আপনাদের কেরামতি দেখা যাবে। ”
শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের পর স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, “টিআইবির বক্তব্য জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সংসদের দায়িত্ব সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। সংসদ সেই দায়িত্ব পালন করবে। ”
অনির্ধারিত এই আলোচনায় অংশ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “টিআইবি এই নির্বাচন চায়নি।
তারা একটি বিশেষ দল ক্ষমতায় আসুক সেটা চেয়েছিল। সেজন্য তখনই নির্বাচন বন্ধ করার জন্য বলেছিল। তারা চেয়েছিল অসাংবিধানিক পথে দেশ এগিয়ে যাক। ”
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, “আমরা সাংবিধানিক ধারা রাখতে চাই। রুল অব ল তে বিশ্বাস করতে হবে।
আইনের শাসনে বিশ্বাস করি বলেই উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কেয়াটেকার সরকার বাদ দেয়া হয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাস করে-এমন একটি সংগঠনের ব্রাঞ্চ টিআইবি। কিন্তু তারা সেটা করছে না। ”
নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা নিয়ে কথা না বলায় টিআইবির সমালোচনা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “বিএনপি মানুষ মারছিল, পেট্রোল বোমা মারছিল তখন কেন আপনারা কথা বলেননি, সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা হতে পারে না। সেদিন তো আপনারা চুপ করে ছিলেন।
”
টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে দাবি তুলে তিনি বলেন, “তারা চায় সহিংসতা। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। তারা যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে সংসদের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে মাননীয় স্পিকারকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ”
অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির হুইপ শওকত চৌধুরী টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের বক্তব্যের নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, “সংসদে বিরোধী দল মানে কি কাগজ ছুড়ে মারা? সংসদে না এসে কোটি কোটি টাকা নেয়া? আমরা নতুন সংস্কৃতি গড়তে চাই। সরকারের সঙ্গে থেকে দেশ গড়তে চাই। ”
তিনি বলেন, “দেশের ক্ষতি করে এমন বিরোধিতা আমরা করবো না। উনারা উন্নয়ন দেখে না। উনাদের চোখে টিনের চশমা।
”
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।