গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড-গুম, গার্মেন্ট এই তিন ইস্যুতে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান তুলে ধরবে। এসব ইস্যু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে বিরোধী পক্ষ। পাল্টা যে অবস্থান সরকারের নেওয়ার কথা তা পুরোপুরি না হওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরও ভূমিকা রাখতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় বিদেশি মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনে এ সংক্রান্ত অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সরকারের শীর্ষসূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল সরকার। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখলেও তার পরিসর খুবই সীমিত। তাদের পক্ষ থেকে শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিষয়ে স্পষ্ট আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর এ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সিনেট, কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত লবিং করছে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ। বিএনপির প্রবাসী শাখার নেতা-কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে সর্বদাই লবিংয়ে ব্যস্ত। এমনকি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ব্যস্ত আছেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায়। অন্যদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিচার বন্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপকারী লবিস্ট টবি ক্যাডম্যানও তৎপর রয়েছেন। 'ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিয়শন ফর ফ্রিডম অব রাইটস' নামে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে সম্প্রতি নেদারল্যান্ডের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন টবি ক্যাডম্যান। জামায়াতের আরেক লবিস্ট স্টিভেন কে কিউসি বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি এবং সংশোধনীগুলো সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য বিভিন্ন টিভি, পত্রিকা, টক শো, জার্নালে প্রচার করছেন। বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশের সরকার ও আইনের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সরকারের 'দুর্বলতম অবস্থান'র তিন ইস্যু ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড-গুম, গার্মেন্টকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার পক্ষ এক্ষেত্রে এক হয়ে কাজ করছে। এ নিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এক ধরনের চাপের মধ্যেও আছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়গুলোর সম্পর্কে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না। যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণে বিভিন্ন ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই নেওয়া হলেও তার সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ জন্য আরও বিস্তৃত পরিধিতে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাংলাদেশের সব দূতাবাস ও হাইকমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের ও সংবিধানের বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে কেন ও কোন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন করতে হয়েছে, সে বিষয়ে বিদেশের মিশনগুলোতে অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে এর ভিত্তিতে বিশেষভাবে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অভিযোগ ওঠা বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বর্ণনা করে তা অভিন্ন অবস্থানপত্রে তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পরে মিশনগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বহির্বিশ্বের দেশগুলোকে জানাবে। অন্যদিকে গার্মেন্ট খাত নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিবিষ্টভাবে কাজ করছে। তবে এর বিষয়ে অপপ্রচার রুখতে বিজেএমইএকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের চলমান উদ্যোগ জোরাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম দেশগুলোর মিডিয়াতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলমান অপপ্রচারের বিষয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য জোরালভাবে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক ও উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সেই দেশগুলোর মিডিয়াতেও সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলবে। এ জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে নতুন প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগকে ইতোমধ্যেই শক্তিশালী করা হয়েছে। আর বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে এতদিন নিযুক্ত থাকা ব্যর্থ প্রেস উইংয়ে ব্যর্থ কর্মকর্তাদেরও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, অবশ্য তাদের মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।