রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে যেতেই রাতের বেলা মানুষের দৃষ্টি কাড়ে পিরামিড আকৃতির সাতটি রঙিন আলো ঝলমলে স্তম্ভ। বিশ্বরোড হয়ে বনানীর দিকে যেতে এবং হোটেল র্যাডিসনের একটু সামনেই নগরীর নতুন এ স্থাপনা ইতোমধ্যে রাজধানীবাসীকে আকর্ষণ করেছে। সন্ধ্যা নামতেই উৎসুক লোকেরা একে ঘিরে ভিড় জমান। নতুন এ স্থাপনাটির নাম 'বীর সপ্তক'। মুক্তিযুদ্ধে সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাখা হয়েছে আলোকোজ্জ্বল স্থাপনার নাম।
রাজধানীর উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগের 'গেটওয়ে' হিসেবে কাজ করবে 'বীর সপ্তক'। অন্যদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কংক্রিট উপকরণ ও গাছ-ফুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশালাকৃতির কৃত্রিম গাছ। স্তম্ভটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা একে 'ঢাকা গার্ডেন' বলছেন। বলা যায়, সবুজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীকে এবার চমকে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেড় বছর আগে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এ স্থাপনাটির উদ্বোধন দুই মাসের মধ্যে হবে এমনটি আশা করা হচ্ছে।
জানা যায়, সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখা, স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন করপোরেশন অব বাংলাদেশ আর্মি এ স্তম্ভ নির্মাণের জন্য স্থাপত্য নকশার দায়িত্ব দিয়েছে এহসান খান আর্কিটেক্ট লিমিটেডকে। এর প্রধান স্থপতি হাতিরঝিলের নকশার পরিকল্পনাকারী এহসান খান। স্থপতি এহসান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কাজটি দেড় বছর আগে শুরু হয়। আশা করি ছয় মাসের মধ্যেই 'বীর সপ্তক' পরিপূর্ণতা পাবে। সে ক্ষেত্রে দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি জানান, 'বীর সপ্তক'-এর কোনাকৃতির সবচেয়ে উঁচু স্তম্ভটির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফিট এবং নিচুটির ৩০ ফিট। এ স্থাপনার চারদিকে বেষ্টনী থাকলেও এতে দর্শকের জন্য দুটি গেট রয়েছে। রয়েছে ছবি তোলার জন্য প্লাটফরম। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, 'বীর সপ্তক' নির্মাণের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন।
এখন কিছু স্তম্ভের লাইটিং ও গাছ লাগানোর কাজ চলছে। 'বীর সপ্তক' ঘিরে থাকা এলাকা দূর্বাঘাসে ঢেকে ফেলার প্রস্তুতি চলছে। লোহার তৈরি কংক্রিটের খাঁচায় ধাপে ধাপে বসানো হয়েছে টব। এগুলোয় টগর, নয়নতারা, ডায়মন্ডিয়াসহ বিদেশি ফুলের গাছ লাগানো হবে। ফুলের গাছে বিশেষ ব্যবস্থায় পানি দেওয়া হবে।
মূলত বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভার তৈরির পর বিমানবন্দর সড়কের এ অংশের জায়গাটি বেশ ফাঁকা হয়ে পড়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এখানে কিছু নির্মাণের কথা ভাবে। তখন সেনাবাহিনী থেকে এহসান খান আর্কিটেক্ট লিমিটেডকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ স্থাপনা সংস্থাটি সেখানে কংক্রিট ও প্রকৃতির মিশেলে খোলা বাগান তৈরির পরিকল্পনা করে। যেহেতু পাশেই ক্যান্টনমেন্ট এবং এটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক সে কারণে জটিল কোনো স্থাপনায় না গিয়ে এহসান খান ও তার দল সবুজ গাছপালা প্রাধান্য দিয়ে স্থাপনাটি তৈরি শুরু করেন। এর মাধ্যমে পাশে কংক্রিটের ফ্লাইওভার ও আশপাশের স্থাপনার মধ্যেও পরিবেশগত একটি সমন্বয় করা সম্ভব।
রাজধানীর উত্তরাংশ এখন যেমন আধুনিক আগে তা ছিল না। সে ধারণা নিয়েই ব্যতিক্রমী এ 'ঢাকা গার্ডেন' তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে রাজধানীর দক্ষিণের বাসিন্দাদের সঙ্গে উত্তরের যোগাযোগ আরও আনন্দদায়ক হবে। তারা আশা করছেন ছয় মাসের মধ্যেই এটি একটি গাছের স্তম্ভের মতো হয়ে উঠবে। দেশের ইতিহাসে যা হবে প্রথম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।