লিফটের দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লেন শোয়েব আকতার। 'পিন্ডি এক্সপ্রেস'কে লক্ষ্য করে সাংবাদিকদের কেউ একজন বললেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পারবে তো আজ? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর, 'পাকিস্তান জিতে গা'। শেষ পর্যন্ত শোয়েব আকতারের কথাই সত্যি হলো। 'পাকিস্তান জাতীয় দিবসে' আফ্রিদিরা হারবেন তা কি হয়! টি-২০ বিশ্বকাপের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৬ রানে হারিয়ে বিশেষ দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। সেই সঙ্গে জিইয়ে রাখলেন সেমিফাইনালের আশাও।
কাল ছিল আবার বিশ্ব আবহাওয়া দিবসও। বৈশ্বিক উষ্ণতা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের ১৮৯টি দেশ দিবসটি পালন করে। কিন্তু কাল অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা যেন দিবসটির তাৎপর্যের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন! তাই তো চার-ছক্কার সুনামি-জলোচ্ছ্বাসে কাল তারা ভাসিয়ে দিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩৬৬ রান, ৩৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা ১৩টি। যেন ভরপুর বিনোদনের এক টি-২০ ম্যাচ।
পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হলেও কাল লড়াই হয়েছে মূলত দুই দেশের দুই অঙ্গরাজ্যের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী অঙ্গরাজ্য ভিক্টোরিয়া বনাম পাকিস্তানের পাঞ্জাব। একদিকে ভিক্টোরিয়ার দুই তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যারন ফিঞ্জ, অন্যদিকে পাঞ্জাবের আকমল ভ্রাতৃদ্বয় ও সাঈদ আজমল। শেষ পর্যন্ত জয় পাঞ্জাবের। পাকিস্তানের জয়ে বড় ভূমিকা ছিল ব্যাটিংয়ে দুই ভাই কামরান আকমল ও উমর আকমলের ৫১ বলে ৯৬ রানের জুটি।
আর আজমলের ক্যারিশম্যাটিক এক ওভার। জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৩১ রান। সাঈদ আজমল এসে ১৮তম ওভারে মাত্র ১ রানের খরচে নিলেন ৬৫ রানে অপরাজিত থাকা অ্যারোন ফিঞ্জের উইকেট। মূলত তখনই কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
কাল সিভিয়ার ট্রফিক্যাল সাইক্লোনে উত্তাল ছিল ভারত মহাসাগর! 'আকমল ভ্রাতৃদ্বয়' নামক সাইক্লোনটি প্রথম আঘাত হানে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায়।
উমর আকমল ও কামরান আকমল আগ্রাসী ব্যাটিং করে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার দুই বোলার কুল্টার নাইল ও ব্রাড হগকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন। আউট হওয়ার আগে ৫৪ বলে খেললেন ৯৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ৯টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি বিশাল ছক্কা। মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলেও পাকিস্তানকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে তিনি ক্রিজ ছাড়েন উমর। কামরান করে ৩১ বলে ৩১ রান।
এই জুটিতে ভর করেই ১৯১ রানেই পাহাড়সম এক স্কোর করে পাকিস্তান।
গত এশিয়া কাপে মিরপুরের এই উইকেটেই বাংলাদেশের করা ৩২৬ রানের পাহাড় টপকে জিতেছিল পাকিস্তান। তাই অস্ট্রেলিয়ার সামনে হাফিজদের ১৯১ স্কোরকে খুব একটা নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। তাছাড়া গ্লেন ম্যাঙ্ওয়েল ব্যাট হাতে নেমে শুরুতে তাণ্ডব চালিয়ে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দেন। মাত্র ৩৩ বলে করেন ৭৪ রান।
পাকিস্তানি বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। ভিক্টোরিয়ার ছেলে ম্যাঙ্ওয়েল ছক্কাগুলো এতোই বিশাল ছিল যেন মিরপুরের গ্যালারিতে নয় বল আছড়ে পড়ছে ভারত মহাসাগর, তাসমান সাগর কিংবা প্রবাল সাগরে। পাক বোলার বিলাওয়াল ভাট্টির করা প্রথম ওভার থেকেই তিনি নেন ৩০ রান। ভাট্টির ওভারের পঞ্চম বলে লং অন দিয়ে যে ছক্কাটি হাঁকালেন সেটি সত্যিই অসাধারণ। ম্যাঙ্ওয়েল যেন বলকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে।
এই ছক্কাতে হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ হয়ে যায় অসি এই ব্যাটসম্যানের। তাও কিনা মাত্র ১৮ বলে। টি-২০র পরিসংখ্যানে চতুর্থতম দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি এটি। ম্যাক্সওয়েলের মতো আগ্রাসী না হলেও ভিক্টোরিয়ার আরেক তারকা অ্যারন ফিঞ্জও কাল হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ৫৪ বলে করেছেন ৬৫ রান।
কিন্তু এই দুহাফসেঞ্চুরি হার এড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।