আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে দ্বিতীয় ধাপে ৫২ জেলার ১১৭ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাই ৪ ফেব্রুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এ তফসিল ঘোষণা করেন। এর আগে গত রবিবার প্রথম ধাপে ৪০ জেলার ১০২টি উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। এদিকে উপজেলা নির্বাচনেও মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। উপজেলা সদরে অবস্থান করবেন তারা। তবে উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা করছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গতকাল কমিশনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এ তথ্য দেন। সহিংসতার আশঙ্কা না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইসির চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। ভোটগ্রহণের আগে ও পরে পাঁচ দিনের জন্য (যাতায়াত সময় ছাড়া) সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা ও নৌ) সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ইসির পরবর্তী বৈঠকে অবস্থানের সময়সীমা চূড়ান্ত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে অবস্থান করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশ সদস্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘটে যাওয়া ব্যাপক সহিংসতা ও সংঘাতের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবির মহাপরিচালক, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, এসবি ও ডিজিএফআইয়ের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে একযোগে সব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছিল। এবার ছয় ধাপে ৪৮৭ উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ও গ্রাম পুলিশ। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৪ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়াও উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে এবং বিশেষ এলাকাগুলোতে (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর) সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ও চৌকিদার-দফাদারসহ ১৭ জন ফোর্স দায়িত্ব পালন করবেন।
চার উপজেলায় ভোট হচ্ছে না : সিইসি বলেছেন, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন। স্থগিত উপজেলাগুলো হলো- রংপুর সদর, কাউনিয়া, গঙ্গাচরা ও পীরগাছা উপজেলা। এ ছাড়া ১৫ মার্চ ৭৪ উপজেলা, ২৫ মার্চ ৭২ উপজেলা, ৩১ মার্চ ৬৫ উপজেলা ও ৩ মে ৫৭ উপজেলা নির্বাচন করার কথা রয়েছে ইসির।
সিইসি বলেন, এ পর্যন্ত যে খবরাখবর পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন খুব ভালো হবে। আশাকরি খুব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারব।
স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবে
স্থানীয় সরকারের উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা এ নির্বাচনে পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিনিধি পদে থেকে অংশ নিতে পারবে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ধরনের সহযোগিতা নিতে পারবে না।
১১৭ উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে সেগুলো হল_ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া; ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকাইল, বালিয়াডাঙ্গী; দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, ঘোড়াঘাট, বিরামপুর; নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা; লালমনিরহাটের হাতীবান্দা, পাটগ্রাম, সদর; রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা; কুড়িগ্রামের রাজিবপুর, নগেশ্বরী, রাজারহাট; গাইবান্ধার পলাশবাড়ী; জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, কালাই, সদর; বগুড়ার কাহালু, শিবগঞ্জ, আদমদিঘী, শাজাহানপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর; নওগাঁর আত্রাই, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, বদলগাছি, সদর, সাপাড়ার; রাজশাহীর বাঘা; নাটোরের বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, লালপুর, সদর; সিরাজগঞ্জের তাড়াশ; পাবনার চাটমোহর, ভাংগুড়া; মেহেরপুরের গাংনী, মুজিবনগর; কুষ্টিয়ার কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর; ঝিনাইদহের মহেশপুর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, বাঘাপাড়া, শার্শা; মাগুরার মোহাম্মদপুর, শালিখা; বাগেরহাটের কচুয়া, ফকিরহাট; খুলনার ডুমুরিয়া; সাতক্ষীরার শ্যামনগর; ভোলার চরফ্যাশন, বোরহানউদ্দিন; বরিশাল সদর; পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর; টাঙ্গাইলের সখিপুর; জামালপুরের ইসলামপুর, বকশিগঞ্জ, মেলান্দহ; শেরপুরের ঝিনাইগাতি; ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা, সদর; নেত্রকোনার কলমাকান্দা, খালীয়াজুরি, পূর্বধলা, বারহাট্টা; মানিকগঞ্জের সদর, হরিরামপুর; মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সদর; ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সাভার; নরসিংদীর শিবপুর; ফরিদপুরের নগরকান্দা, বোয়ালমারী, সালথা; গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, সদর; মাদারীপুরের রাজৈর, শিবচর; সুনামগঞ্জের দিরাই, সদর; সিলেটের বালাগঞ্জ; হবিগঞ্জের চুনারুঘাট; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল; কুমিল্লার দেবীদ্বার, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম; চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, মতলব (উ.) মতলব (দ.), সদর, হাইমচর; ফেনীর পরশুরাম, সদর; নোয়াখালীর কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, চাটখিল, সদর, সোনাইমুড়ী; চট্টগ্রামের পটিয়া, লোহাগড়া; কঙ্বাজারের পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়া; খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি; রাঙামাটির কাপ্তাই, নানিয়ারচর এবং বান্দরবানের থানছি, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।