আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবর্ণ বাংলাদেশের প্রতীকও তাঁরাই

বন্ধুত্ব একটা কারণ হতে পারে। তবে একমাত্রও নয়, সবচেয়ে বড় কারণও নয়। সাকিব-তামিম নাম দুটি একসঙ্গে উচ্চারিত হয় মূলত তাঁদের পারফরম্যান্সের সৌজন্যে। গত কয়েক বছরে এই দুজনই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনও।


খেলার মাঠ থেকে রাস্তার পাশের দৈত্যাকার বিলবোর্ড, কিংবা টেলিভিশনের পর্দা—সব জায়গাতেই ক্রিকেটের উপস্থিতি মানে সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল। সাকিব দিনে পাঁচবার হাত ধুলে বাংলাদেশের শিশুরাও পাঁচবার হাত ধোয়। তামিম যে রেজর দিয়ে শেভ করেন, বাংলার প্রতিটি তরুণের স্মার্টনেসেই থাকতে হবে সেই রেজরের ছোঁয়া।
ব্র্যান্ডিংয়ে দুজনের এমন দ্যুতিময় উপস্থিতি হয়তো দেশের ক্রিকেটেরই জয়গান। কিন্তু আসল জায়গায় যে সেই গান প্রায় থেমে যেতে বসেছে! দেশের মাটির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ দলের জন্য শেষ হতে চললেও এখনো জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় সাকিব-তামিম।

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশও যে এখন পর্যন্ত অনুজ্জ্বল, সেটা হয়তো ওই দুজন নিষ্প্রভ বলেই। মাঝে বাংলাদেশ দলে পারফরমারের সংখ্যা বাড়লেও এখনো তো এটাই সত্যি যে সাকিব-তামিম ভালো খেললে বাংলাদেশও ভালো খেলে।
তুণে ব্যাটিং-বোলিং দুটি তিরই থাকাটা সাকিবের জন্য বাড়তি সুবিধা। যে কোনোটিতে কিছু না কিছু করার সুযোগ সব সময়ই থাকে। সাকিব কিছুই করেননি, এ রকম ম্যাচ কমই আছে।

কিন্তু এটুকু ছাড় দিয়েও বলতে হয়, চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিব তাঁর কাছে থাকা প্রত্যাশা খুব বেশি পূরণ করতে পারেননি। প্রথম পর্বে আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে অপরাজিত ১০ ও ৩৭। আর দারুণ শুরুর পরও ৩৪-এ থেমে না গেলে হয়তো হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ওই লজ্জায় পড়তে হতো না। তার পরও তো এসব ছিল ‘মন্দের ভালো’। কিন্তু ব্যাটসম্যান সাকিব যে পুরোপুরি নিভে গেলেন সুপার টেনে এসে! একইভাবে বোল্ড হওয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ০, ভারতের বিপক্ষে ১।


কাল সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটা উঠতেই সাকিব কিছুটা বিব্রত, ‘আমি মাত্র তিন বল খেলেছি দুই ম্যাচে। গত ম্যাচেরটা খুব দুর্ভাগ্যজনক ছিল। ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড হয়ে বোল্ড হয়ে গিয়েছিলাম। আর আগের দিনেরটা খুব ভালো বল ছিল। কিছু জায়গা আছে যেখানে এখনো আমার উন্নতির সুযোগ আছে।

’ সুযোগটা বোধ হয় আছে বোলিংয়েও। আফগানিস্তান ও হংকংয়ের বিপক্ষে তিনটি করে উইকেট পেলেও বাকি তিন ম্যাচে সাকিবের উইকেট মাত্র একটি।
শুধু ব্যাটসম্যান বলে সাকিবের মতো বোলিংয়ে আড়াল খোঁজার সুযোগ নেই তামিমের। তাঁর ভালো খেলা মানে ব্যাটিংয়েই বড় কিছু করা। ওপেনার বলে টি-টোয়েন্টিতেও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ থাকে তামিমের জন্য।

কিন্তু সুপার টেনে এসে তামিম যেন খেলাই ভুলে গেলেন! ঝোড়ো শুরুর পরিবর্তে মাঠে নেমেই ঝড়ের গতিতে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাচ্ছেন প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রথম পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৭ বলে ২১ আর নেপালের বিপক্ষে ২২ বলে ৩০ রান করেছিলেন। হংকংয়ের বিপক্ষে ২ বলে ০। সুপার টেনের দুই ম্যাচেই ১০ বল করে খেলে ৫ ও ৬ রান। ব্যাটিংয়ে যখন এই দুর্দশা, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তামিমের জন্য স্মারক হয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ধরা অসাধারণ দুটি ক্যাচ।


ঘরের মাঠের বিপিএল তো আছেই, সঙ্গে আইপিএল, সিপিএল, বিগব্যাশ, ফ্রেন্ডস লাইফ টি-টোয়েন্টি মিলে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতম খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। অন্য দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলার সুবাদে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে সাকিবের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে পারেন তামিমকে। ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর কাছে প্রত্যাশাও সব সময় বেশি থাকে।
তারপরও বাংলাদেশের জন্য মন খারাপ করা বিশ্বকাপ-অভিযাত্রার প্রতীকী রূপ নিজেদের হারিয়ে ফেলা সাকিব-তামিম। হাতে আর মাত্র দুটি ম্যাচ।

তাঁরা কি পারবেন স্বরূপে ফিরতে?

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।