বস্ত্র ও পাটপ্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নিজ এলাকা জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে আজ সোমবার বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারছেন।
ভোটাররা ভোট দিতে গেলে তাঁদের ভোট দিতে না দিয়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারও কারও কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরাই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে সরেজমিনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল ও অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফায়েজুল ইসলাম।
সকাল নয়টার দিকে পৌর এলাকার সন্ধ্যা চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যন প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের কর্মী-সমর্থকেরা প্রায় সবগুলো ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারছেন।
বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফায়েজুল ইসলামের লোকজন বাইরে এসে অভিযোগ করেন, তাঁদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সমীর কুমার বসাক বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ’
সকাল নয়টার মধ্যেই এ কেন্দ্রের দুই হাজার ৬০৫ ভোটের মধ্যে প্রায় ৯০০টি ভোট পড়েছে।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পৌর এলাকার নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মহিলা (ডিগ্রি) কলেজকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মহিলাদের একটি ভোট কক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রতীকের ব্যাচ পরে এক পুরুষ প্রকাশ্যে সিল মারছেন।
বাইরে কয়েকজন নারী ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফায়েজুল ইসলামের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। রাশেদুল ইসলাম নামে এক এজেন্টের অভিযোগ, ‘তাঁকে শুধু ভয়ভীতি নয়, গায়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। ’
কেন্দ্রের বাইরে একদল নারী ভোট দিতে বাধা পেয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে ফেরত যান। শিখা ও জয়নব নামের দুজন জানান, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর তাঁদের চলে যেতে বলেন সরকারি দলের লোকেরা।
রফিকুল ইসলাম নামের একজন জানান, মা ও ভাবিকে নিয়ে তিনি ভোট দিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন তাঁদের চলে যেতে বলেন।
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মশিউল আলম বলেন, ‘আমি কী করব? এজেন্টরা কেন বাধা দিচ্ছে না?’
সকাল পৌনে ১০টার দিকে পৌর এলাকার জুনাইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও প্রকাশ্যে সিল মারছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে যান বাদশাহ মিয়া ও তাঁর ছেলে রাকিবুল হাসান। এ সময় তাঁদের ভোট না দিয়ে চলে যেতে বললে তাঁরা এর প্রতিবাদ জানান।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ভোটকক্ষের ভেতরে তাঁদের মারধর করে বের করে দেন। রাকিবুল ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভোট আমি দিতে পারব না?’
এ সময় পুলিশের একটি দল ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুরুজ জামান বলেন, ‘প্রথম এক ঘণ্টায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছিল, কিন্তু এরপর হঠাত্ করে সমস্যা দেখা দেয়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ’
বেলা ১১টার দিকে পৌর এলাকার গাবের গ্রামে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র মোশাররফ হোসেনের বাসার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ফায়েজুল ইসলাম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অভিযোগ করেন, ‘মাদারগঞ্জে মোট ৫১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৯টি কেন্দ্র ক্ষমতাসীনরা দখল করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও তারা ছিল নির্বিকার। এতে দেখা যাচ্ছে, মানুষের মতের প্রতিফলন হচ্ছে না। এ জন্য নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।