বাংলাদেশী নারী পুরুষ মাত্রই ভ্রমন বিলাসী এবং কবি! আমার বয়স তো কম হল না! আমি এই বয়সে এখনো একজন বাংলাদেশী পেলাম না, যিনি ঘুরতে পছন্দ করেন না। ঘুরে ঘুরে আমাদের বাংলাদেশীরা এভারেস্টও জয় করে ফেলেছে! এটা সহজ কথা নয়! আমি নিজেও ঘুরাঘুরি পছন্দ করি, এবং অনেক ঘুরেছি। তবে আমার সেই সময় গুলোতে নেট লাইন না থাকার কারনে, বাংলা টাইপ না জানার কারনে ইচ্ছা থাকলেও লিখতে পারি নাই। আজকাল সামান্য ঘুরেই লিখে ফেলি! আর মোবাইল দিয়ে তো ছবি তোলাই যাচ্ছে!
যাই হোক গত কয়েক দিন আগে, কথা বার্তা নেই, রেলের টিকেট কেটে কলকাতা রাওয়ানা হয়ে গেলাম, রেল পথে আমি আগে কখনো কলকাতা যাই নাই, ফলে এই লাইনটা আমার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তবে তেমন কোন কারন ছিল না, শুধু পাসপোর্টে ভিসা থাকা এবং সেটা কাজে লাগানোই উদ্দেশ্য! যাই হোক আমার ইচ্ছা ছিল চার দিন থেকে আসবো! ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ মার্চ! কিন্তু কলকাতায় গিয়ে যথা সময়ে ফিরতি টিকেট না পেয়ে ২১ ঘন্টার মধ্যেই বিমানে ফিরে এসেছি! সে এক বিরাট ইতিহাস! সেই দিকে না যাওয়াই ভাল।
শুধু বলি, নট ব্যাড! রেলে যেয়ে বিমানে চক্কর মন্দ না! এক ডিলে দুই পাখি!
ভিসা মেনেজ হয়ে গেলে, আপনিও রেলে খুব কম টাকায় টিকেট কেটে নিতে পারেন। ঢাকায় রেলের টিকেট কাটা যায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে আর কলকাতায় কাটা যায় ফেয়ারলী প্লেস থেকে। এছাড়া কলকাতায় রেল থেকে নেমে চিতপুর ষ্টেশন থেকেও আগেই টিকেট কেটে নিতে পারেন। তবে আমি মনে করি, আসা যাওয়ার টিকেট এক সাথে পাওয়া গেলে ভাল হত! এই ঝামেলা দুই দেশ কবে মিটাবে কে জানে!
এই রেল কমলা পুর থেকে ছাড়ে না! ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেল ষ্টেশন থেকে সপ্তাহে দুই দিন সকাল ৮.১০ মিনিটে ছাড়ে। অপর দিকে কলকাতা থেকেও সপ্তাহে দুই দিন, ছাড়ে চিতপুর থেকে সকাল ৭.১০ মিনিটে! একটা ট্রেন বাংলাদেশের অন্যটা ইন্ডিয়ার!
আমার ভাগ্যে ইন্ডিয়ার ট্রেনটাই পড়েছিল।
যাত্রী যারা বলাবলি করছিল, বাংলাদেশের ট্রেন্টাই নাকি নুতন এবং পরিস্কার। হ্যাঁ, পরে প্রমান পেয়েছিলাম।
শুরুটা আমি চা দিয়েই শুরু করেছিলাম। ১০ টাকায় চমৎকার চা।
আমার সিটের সামনেই একটা পরিবার বসেছিল, তাদের দুই ছেলের ছোট বিচ্ছু এটা! সারা পথ আমাকে জ্বালিয়েছে! তবে চলতি পথে আমাদের মাঝে একটা যোগসুত্র হয়ে গিয়েছিল।
আমরা দুইজন দুই ধর্মের হয়েও বেশ আনন্দ করছিলাম। ছেলেটার নাম ছিল দেবরাজ। আমি আমার খাবারও তার সাথে শেয়ার করেছি, সেও আমাকে একটা কমলা খাইয়েছিল।
এই হচ্ছে রেলওয়ের কিচেন, রান্নাঘর। স্বাভাবিক ভাবে আমি এই এলাকায় অনেক বার গিয়েছি, এটা ওটা কিনার উচ্ছুলায় ওদের সাথে কথা জমিয়েছি! চশমা পরা লোকটা হচ্ছে হেডকুক, ইনচার্জ।
আমি অবাক হয়ে উনাকে দেখছিলাম, রান্না ও সার্ভিস একই সাথে দিয়ে যাচ্ছিলেন যাত্রীদের। তিনি নিজেই খাবার ওয়ার্ডার নিয়েছিলেন, টাকা নিয়েছেন এবং খাবার দিয়েছেন। আমি বিরানী খেতে চাইছিলাম এবং সে মোতাবেক পেয়েছিলাম। দাম ১৫০ টাকা, এক বোতল পানি সহ। দুঃখের কথা আমি হেডকুক সাহেবের নামটা জানতে ভুলে গিয়েছিলাম।
আমাদের দেশের লোকজন যে কি স্মার্ট তার জলন্ত উদাহরণ তিনি। ভবিষ্যতে আপনারা যারা রেলে যাবেন, তারা আমাদের রেল অংশে উনাকে পাবেন, দেখে নিতে পারেন। আমি ভুল বললাম কি না!
আমাদের ট্রেন এগিয়ে চলছিলো। অলস সময় কেটে যাচ্ছিলো, আমার এবং অন্যদের।
দুরের যাত্রা পথে আপনি যদি এই রকম যাত্রী আপনার পাশে পেয়ে যান তবে আপনার যে অভিজ্ঞতা হবে তার বর্ননা করার মত হবে না! ১৪ ঘন্টার যাত্রায় আমি প্রায় ১০ ঘন্টাই ট্রেনে হেঁটে বেড়িয়েছি! বসার জায়গা কম!
বেলা দুইটার দিকে আমাদের খাবার এসে গেল।
পোলাউ ঝরঝরে তবে চিকেনে প্রচুর ঝাল ছল। দেবরাজকে শুধু ডিম খাওয়াতে পেরেছি, ঝাল চিকেন দিতে ইচ্ছা হয় নাই।
সময়টা হিসাবে রাখি নাই, মোটামুটি বেলা ৩টার দিকে মনে হয় আমরা আমাদের বাংলাদেশের শেষ সীমায় পৌঁছে যাই, দর্শনা। এখানেই আমাদের ইমিগ্রেশন! (মুখটা খারাপ করে অনেক কথা আমাদের ইমিগ্রেশন ভাইবোনদের নিয়ে লিখতে ইচ্ছা হল, এই লেখার পাঠকদের কথা ভেবে গালি দিচ্ছি না) প্রায় ৩০০ যাত্রীর জন্য তিনজন ইমিগ্রেশন অফিসার। এদের কমনসেন্স দেখে অবাক হয়েছিলাম।
প্রায় আমাদের তিনঘণ্টা সময় নষ্ট করে দিল! দুনিয়ার কত জায়গায় গেলাম, কত জায়গার ইমিগ্রেশন দেখলাম, বাংলাদেশের এই ইমিগ্রেশন দেখে, মনে হল ওদের কানের নিচে একটা করে বোম সেট করে দেই! মানুষের কষ্ট, বুড়োদের দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট, শিশুদের কান্না দেখার কেহ নেই। এরা আরো একটিভ হলে বা আরো কয়েকজন কাজ করলে অন্তত ৩০/৪০ মিনিটেই আমরা ইন্ডিয়াতে প্রবেশ করে ফেলতে পারতাম।
যাই হোক, বাংলাদেশে প্রচুর সময় নষ্ট করে ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করলাম। ইন্ডিয়ান পুরানো ইঞ্জিনে আমরা হেলে দুলে ‘গেদে’ রেল ষ্টেশনে থামলাম। অনেকটা জেলখানা টাইপ ইমিগ্রেশন! তবে আমাদের তুলনায় সময় কম নিয়েছে! বাদ বাকী কাষ্টম চরিত্র মোটামুটি দুই দেশের একই! যাই হোক, এখানে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।
হিন্দী ভাষা ভারতের রাষ্ট্রভাষা হলেও প্রদেশ গুলোতে প্রদেশিক ভাষার গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়, আমি মনে করি, এটাই ঠিক। যার মায়ের ভাষা যা তার জন্য তাই গর্ব। আমাদের দেশের সরকার গুলো এই কথাটা কখনোই বুঝতেও চেষ্টা করে নাই, করেও না। বিশেষ করে সরকার তো প্রায় ভুলেই যায় যে, এই দেশে অনেক আধিবাসী আছে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়।
ইন্ডিয়ার রেলষ্টেশন গুলো আমাদের চেয়ে পরিস্কার এবং সুন্দর।
রেল পুলিশ গুলো বেশ স্বাস্থ্যবান এবং লাঠি হাতে বেশ মানায়! যার ডিউটি যেখানে সে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে!
ওহ, হ্যাঁ। আপনাদের ইন্ডিয়ার রেলের ওয়াসরুম না দেখিয়ে পারলাম না! আমি শিকল দিয়ে মগ বেঁধে রাখাটা দেখে হেসেই ফেলেছিলাম।
রাতের কারনে ইন্ডিয়ার অন্য রেল স্টেশনের ছবি তুলতে পারি নাই। তা ছাড়া আমাদের রেল দুই একটা জায়গায় থেমে ছিল শুধু সিগন্যালের জন্য। তবে চলতি পথে আমি রাতে রেলস্টেশনের যা অবস্থা দেখলাম, তা আমাদের মতই মনে হল!
ঠিক ইন্ডিয়ার রাত ১০টায় আমরা কলকাতার চিতপুর রেলষ্টেশনে নেমে পড়লাম।
রেল ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এত রাতে কোথায় যাই, কি খাই! তবে এই দেশে আগেও বহুবার এসেছি বলে, ভয়ের কিছু নেই! সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।
(চলবে)
ছবি গুলো আছে গল্প ও রান্না 'য়! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।