এই পৃথিবীতে আসা প্রত্যেকটি মানুষ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের এবং স্বতন্ত্র পথের। যেখানে যার গতি, শেষ পর্যন্ত সেখানেই সে যাবে। এর কোনো হেরফের নেই।
দেশের বাইরে আমি আমার অনিচ্ছায় গিয়েছিলাম, আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু ঐ সময় দেশে থাকা অবস্থাতেও আমি অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে চাইতাম, একদম সবার আড়ালে।
কেন?- তা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, কিন্তু পালাতে যে হবেই সেটা ঈশ্বরকে অবিরতভাবে জানাতাম। কী হলো- আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম এবং আমাকে দেশের বাইরে যেতে হলো। প্রথম প্রথম আমার মনে হতো যেন কেউ আমার অনিচ্ছায় কৌশলে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে কোথাও। কিন্তু কয়েকটা মাস চলে যাবার পর আমি উপলব্ধি হতে আরম্ভ করলাম- কেন আসা হলো, কেন এতোদূরে আসতে হলো? আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম এবং এখনও যাই- যা 'হয়', তা ঈশ্বরের পক্ষ থেকেই হয়। কেন হয়? কারণ, 'হওয়াটা' মানুষ তার নিজ কর্ম-পুঁজির প্রতিদান হিসেবেই নিজের জন্য পাওনা রাখে।
আমার অস্থিরতা, অসুস্থতা, চলে যাওয়া, ফিরে আসা, চলতে থাকা কিংবা থেমে যাওয়া; জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই পৃথিবীতে আমার নিজের স্বতন্ত্র পথটা খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে একেকটা অজুহাত কেবল। আমি বিশ্বাস করি, আমি আমার গন্তব্যের পথেই হাঁটছি। এই কয়েকটা দিনের একলা সময় আমাকে নিজের মত করে, নতুন করে চিন্তা ও উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। একটা সময় ছিল, আমি অচেনা ভিড়ে মিশে যাচ্ছিলাম। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু একটা অজুহাতে আমি ভিড় থেকে চলে এসেছি, নিজের গণ্ডীকে বুঝতে শিখেছি, নিজের পথে পা ফেলতে শিখেছি এবং আমি অনেক খুশি এতে।
''আমি আমার পথেই হাঁটবো। সবাই আমার পথে হাঁটবে না এবং আমিও আমার পথে সবার সঙ্গ চাইবো না। ''
এই পৃথিবীতে আসার জন্য আমাদেরকে একটা শরীর ভাড়া করে নিয়ে আসতে হয়। এই শরীরটাকেও তাই নিজের বলা যায় না, এটা যিনি দিয়েছেন তাঁরই আমানত।
আমি তো একটা আত্মা কেবল এবং আত্মারা পৃথিবীতে বেশিদিন থাকতে পারে না। কারণ, আত্মা একরকম হয় আর একে দেয়া শরীরটি আরেকরকম। এই পার্থিব জগতে আত্মাকে অনেক লড়তে হয় তাই নিজের আসল রূপটা বোঝানোর জন্য। আত্মার শরীর সাদা না কালো, ক্ষতবিক্ষত না সুন্দর- তা অনায়েসে সবার চোখে পড়ে। কিন্তু যা চোখে ধরা পড়ে না, তা প্রকাশ করতে তো লড়াই করতেই হয়।
এই প্রকাশের ভাষাটা যেমন সহজ না, তেমনি শরীরের ভেতরে থাকা আত্মাটাকে বুঝে নেবার মত মানুষও সহজলভ্য নয়। তারা খুবই দুর্লভ।
আমাদের শরীরে কোনো আঘাত লাগলে, ক্ষত হলে- আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমই এটাকে সারিয়ে তোলে। বাইরে শুধু দাগ ভেসে থাকে এবং আস্তে আস্তে একদিন সেটাও চলে যায়। শরীরের রঙ-সৌন্দর্য সবকিছুই সহজে পাল্টে যেতে পারে, সুন্দর থেকে সুন্দরতম করা যেতে পারে; কিন্তু চরিত্র-নফসকে খুব সহজেই সুন্দর করা যায় না।
তার জন্য একটা সৎ ইচ্ছার দরকার পড়ে, আপন পথের প্রতি বিশ্বাস আর ধৈর্য্যের দরকার পড়ে।
''আত্মা সুন্দর না কদাকার চরিত্রের, সাদা না কালো রঙের, দুঃখী না সুখী তা বাইরে থেকে শরীর-অবয়ব দিয়ে কখনোই বোঝা যায় না। কখনোই না। আত্মাকে যারা খোঁজে এবং বোঝে, তারা খুবই দুর্লভ। ''
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।