টি-টোয়েন্টিতে কি বড়-ছোট বলে কিছু নেই? নেই কোনো ফেবারিট-আন্ডারডগ? ক্রিকেটে খুব চালু কথা। টি-টোয়েন্টিতেই যে অঘটনের শঙ্কা বা সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, গতকাল সেটি নতুন করে প্রমাণ করেছে হল্যান্ড। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে টি-টোয়েন্টির জনক ইংল্যান্ডকেই হারিয়ে দিয়েছে ৪৫ রানে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘চুনোপুঁটি’দের কাছে বড় দলগুলোর এমন হার নতুন কিছু নয়।
জিম্বাবুয়ের অস্ট্রেলিয়া-বধ, ২০০৭
প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল লড়াইয়েই অংশ নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
আইসিসির সহযোগী তিনটি দেশের বিপক্ষে খেলে টেস্ট খেলুড়ে একটি দেশের ছিটকে পড়াটা তো একটা অঘটনই বটে। অথচ যে দলটি আজ অঘটনের শিকার, সেই জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনটির স্মৃতি। ২০০৭ বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচেই ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। হারিয়ে দিয়েছিল সেই সময়ের শীর্ষ দল অস্ট্রেলিয়াকে। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসদের মতো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়াকে ১৩৮ রানেই বেঁধে ফেলেছিল জিম্বাবুয়ে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলকে প্রায় একাই জিতিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর। ৪৫ বলে ৬০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এক বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটের জয় পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৭
জিম্বাবুয়ের অস্ট্রেলিয়া-বধের রেশ কাটতে না কাটতেই ২০০৭ বিশ্বকাপে ঘটেছিল আরেকটি বড় অঘটন। এবার ঘাতকের নাম বাংলাদেশ।
শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬৫ রান তাড়া করে যে বাংলাদেশ জয় পাবে, সেটা হয়তো কারোরই মাথায় ছিল না। তার ওপর প্রথম চার ওভারের মধ্যে সাজঘরে ফিরেছিলেন দুই ওপেনার নাজিমউদ্দিন ও তামিম ইকবাল। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ১০৯ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন আশরাফুল ও আফতাব আহমেদ। ২৭ বলে ৬১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন তখনকার অধিনায়ক আশরাফুল।
৪৯ বলে ৬২ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন আফতাব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয়।
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড, ২০০৯
২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশই হয়েছিল অঘটনের শিকার। সাকিব-তামিমদের হেসেখেলেই হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ৯৪ রানেই সাত উইকেট হারানোর পর মাশরাফির ১৬ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটির সুবাদে স্কোরবোর্ডে ১৩৭ রান যোগ করেছিল বাংলাদেশ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে হেসেখেলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছেছিল আইরিশরা। ২৫ বলে ৪০ রান করে জয়ের কাজটা অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিলেন কেভিন ও’ব্রায়েন। শেষ পর্যায়ে নিল ও’ব্রায়েনের ১৭ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে আট বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে শুরু থেকে খোঁড়াতে থাকা বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয়টাকে অঘটনের তালিকায় রাখা নিয়ে আইরিশরা আপত্তি করতেই পারে!
ইংল্যান্ড-হল্যান্ড, ২০০৯
গতকালই হল্যান্ড যেভাবে ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে হারিয়েছে, সেই স্মৃতি তো এখনো তাজা। ২০০৯ সালেও একবার ডাচদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল ইংল্যান্ড।
তা-ও আবার ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে। দুই ইংলিশ ওপেনার রবি বোপারার ৪৫ ও লুক রাইটের ৭৩ রানের ইনিংসে ভর করে স্কোরবোর্ডে ১৬২ রান জমা করেছিল ইংল্যান্ড। চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেষ বলে ইংলিশদের ৪ উইকেটে হারিয়ে চারদিকে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল ডাচরা। টম ডি গ্রুথ খেলেছিলেন ৩০ বলে ৪৯ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। বল হাতে দুই উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতেও ১৭ বলে ২২ রান করে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেছিলেন রায়ান টেন ডেসকাট।
ইংল্যান্ড-হল্যান্ড, ২০১৪
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হল্যান্ড সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামে লর্ডস ফিরে এল আরেকবার। জহুর আহমেদ চৌধুরীতে আরেকটি ডাচ রূপকথার দেখা মিলল। ইংল্যান্ডকে ৪৫ রানে হারিয়ে কমলার নাচন উঠল চট্টগ্রামে। ইনিংসের শুরুতেই ইংল্যান্ডের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিল হল্যান্ড।
ডাচদের দেওয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫.৫ ওভারে ২৬ রান তুলতেই ইংলিশদের ৩ উইকেট শেষ। রবি বোপারা খানিকটা স্বপ্ন দেখালেও কমলা ঢেউয়ের কাছে তা উড়ে গেল মুহূর্তেই। ফন বিকের বলে ১৮ করে ফিরলেন বোপারা। খুঁড়িয়ে চলা ইংলিশদের ইনিংস থামল ১৭.৪ ওভারে ৮৮ রানে। হারতে হলো ৪৫ রানে।
ডাচদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন বুখারি ও ফন বিক। ম্যাচসেরা অবশ্য বুখারি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।