বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দেশে ফেরা অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নতুন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ায় তারেক-কোকো দেশে ফিরলে 'চরম' হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তা ছাড়া বেগম জিয়াও চান না এ মুহূর্তে তার দুই ছেলে দেশে আসুন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমান এখনো শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। ২১ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ। বেগম জিয়ার ছোট ছেলে কোকোকে দুর্র্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সরকারের এই মেয়াদে তারেক-কোকোর দেশে ফেরা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারেক-কোকোর দেশে ফেরার অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে 'মিথ্যা' মামলাসহ সরকারের অনমনীয় মনোভাবই দেশে ফেরার ক্ষেত্রে বাধা বলে তারা মনে করছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের বিচার শুরু হওয়াকে এক ধরনের হয়রানি বলেও মনে করেন নেতারা। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে ২৬টি মামলা রয়েছে।
এসব মামলার মধ্যে সাতটি বর্তমান সরকারের আমলে করা। বাকিগুলো গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। এসব মামলার মধ্যে একটিতে তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন এবং অন্য একটি মামলায় কোকোর সাজা হয়েছে। তবে তারেক রহমানের খালাস পাওয়া মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে তা এখন বিচারাধীন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ভাই আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় আদালতে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তার পরও আমাদের আইনি লড়াই চলছে। যথাসময়ে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান দেশে ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
তারেক রহমানের ১৭ মামলা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং তাতে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। একটি হত্যা ও আরেকটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলা।
বর্তমান সরকারের আমলে এ দুটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডির দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমান ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এদের নিয়ে মোট আসামির সংখ্যা ৫২। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিশেষ এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলছে। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায়ে খালাস পান তারেক রহমান। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা ২০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। তারেক ও তার ছোটভাই কোকোর বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় ২০১২ সালের ২ অক্টোবর।
ঋণখেলাপের অভিযোগে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত আছে। এগুলোর মধ্যে আটটি চাঁদাবাজির মামলা। ২০০৭ সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান, কাফরুল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানায় মামলাগুলো করেন।
এ ছাড়া কাফরুল থানা পুলিশ বাদী হয়ে করা জরুরি ক্ষমতা আইনে একটি, দুদক বাদী হয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাফরুল থানায় করা একটি মামলায় স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও আসামি। পরের বছরের ৪ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা করে।
কোকোর সাত মামলা : সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী প্রয়াত আকবর হোসেনের ছেলে সায়মন হোসেনকেও আসামি করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়।
তাতে পলাতক দেখিয়ে কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরই মধ্যে সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে কোকোর পাচার করা অর্থের একটা অংশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ এনবিআর একটি মামলা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক একটি মামলা করে।
আর সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপের মামলায় ভাইয়ের সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মায়ের সঙ্গে কোকোও আসামি। এ প্রসঙ্গে জিয়া পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন, তা আইনানুগ হয়নি। তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করবেন। তার আশঙ্কা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কয়েকটি মামলা গতি পাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।