আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থের অভাবে বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না খালেদা জিয়া

অর্থাভাবে প্রায় তিন বছর বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা হারে বাড়ি ভাড়া ছাড়াও তার অনেক খরচ রয়েছে। তিন মেয়াদের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংক হিসাবগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দীর্ঘ ৭ বছর জব্দ থাকায় তার সংসারে চলছে এখন টানাপড়েন। মাত্র ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের যে অনুমতি রয়েছে, তা দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার আয়কর আইনজীবী এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে সাক্ষাতের জন্য বার বার সময় চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আহমেদ আজম খান। তার আইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান 'আজম খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস' বেগম খালেদা জিয়ার কর-সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলো দেখভাল করছে। এনবিআরের প্রতি অভিযোগের কথা জানিয়ে আহমেদ আজম খান আরও বলেন, গত এক মাস যাবৎ এনবিআর চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ চাচ্ছি। কিন্তু পাচ্ছি না। সর্বশেষ এনবিআর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তিনি চলতি মাসের ১৭-১৮ তারিখ সময় দিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, বেগম খালেদা জিয়ার জব্দকৃত ৮টি ব্যাংক হিসাব খুলতে নানা টানাপড়েন চলছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে। কোনো কর মামলা না থাকা সত্ত্বেও বিগত ৭ বছর যাবৎ ওই ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ রয়েছে। ২০০৭ সালের শেষের দিকে এ ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করেছিল এনবিআর। তখনকার ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করতে নেপথ্যে ভূমিকা রাখে। পরে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব খোলা হলেও, জব্দ রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার হিসাব।

তিন মেয়াদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদন তিন বছর ধরে আটকে আছে এনবিআরে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব অবমুক্তকরণ নিয়ে এনবিআরের কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টি এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরও মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেয়নি। কর প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, ওই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্তকরণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রভাবশালী দফতর এবং একজন মন্ত্রীর আপত্তি রয়েছে। আপত্তি আছে সরকার সমর্থক একজন প্রভাবশালী আয়কর পরামর্শকেরও।

অনেকে মনে করেন, এনবিআরের অনেক সিদ্ধান্তই ওলট-পালট হয় ওই আয়কর পরামর্শকের ইশারায়। যিনি এখন নতুন একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও।

তথ্যমতে, এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা 'সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স সেল'র (সিআইসি) তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের কাছে ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দিতে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বর্তমানে এনবিআরের সদস্য। ওই আবেদনে বলা হয়, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সমুদয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করা আছে, যাহা ইতোপূর্বে একাধিক আবেদন করা সত্ত্বেও অবমুক্ত করা হয় নাই।

বেগম খালেদা জিয়ার নামে যেহেতু এনবিআরের কোনো মামলা নেই, তাই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্ত করতে আইনগত বাধা নেই'।

আবেদনে আরও বলা হয়, 'বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কারণে তার বসবাসের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িটি প্রতি মাসে দুই লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি ভাড়া ও সাংসারিক খরচসহ মোট দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন প্রয়োজন। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টেনমেন্ট শাখায় বেগম খালেদা জিয়ার হিসাব নম্বর (...) হতে টাকা উত্তোলনের অনুমোতি দেওয়া হোক'। এ আবেদনের পর দুই বছর অতিবাহিত হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেয়নি এনবিআর।

সূত্র জানায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা। পরে এ বছরের শেষের দিকে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তখন সংসারের খরচ চালানোর জন্য নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেওয়া অথবা প্রতি মাসে ৫০ হাজারের পরিবর্তে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি এনবিআরে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর আইন পরামর্শক আহমেদ আজম খান। সূত্র জানায়, ওই আবেদন এনবিআর পর্যালোচনা শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।

সেখানে তিন বছর যাবৎ ফাইলটি আটকে আছে বলে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড প্রশাসনের সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। সভায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে এনবিআরের সব সদস্য একমত পোষণ করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য আবেদনের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইল নিয়ে কথা বলতে নিজের অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে আহমেদ আজম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমি নিজে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এর আগে যিনি ছিলেন, তার সঙ্গে সশরীরে হাজির হয়ে অথবা টেলিফোনে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আপনি যোগাযোগ রাখুন।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.