রাজধানীর সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, শাহজাহানপুর ও রামপুরা থানাজুড়ে মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেছেন টুন্ডা জসিম। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঢাকার নারী অপরাধীদের সম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত ৪৮ মামলার আসামি মাফিয়া চুন্নি। দুজন মিলে অপ্রতিরোধ্য এক মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তাদের সিন্ডিকেটে অন্তত ১৫ জন পাইকারি এবং অর্ধশতাধিক খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন। প্রতিদিন পাঁচ হাজারেরও বেশি ফেনসিডিলের বোতল ও ছয় হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করছে এ চক্র।
নিয়মিতভাবে মাদক সরবরাহে একটি পিকআপ ভ্যান ও দুটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়।
জানা গেছে, টুন্ডা জসিমের সঙ্গে থানা পুলিশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা ও শাহজাহানপুর থানার ওসি-সেকেন্ড অফিসাররা মোটা অঙ্কের মাসহারা নেন। অন্য পুলিশ অফিসাররা ডিউটিমাফিক দৈনিক হারে টাকা পান। সবুজবাগ থানায় জসিম ও তার সহযোগীরা বিশেষ মর্যাদা পান বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে র্যাবের অভিযানে জসিম ও তার সহযোগীরা কয়েক দফা গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তিনি আস্তানা পাল্টিয়ে পার পেয়ে যান।
র্যাব ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে মুগদা বিদ্যুৎ গলিতে মূল আস্তানা ছিল জসিমের। সেখান থেকেই মতিঝিলসহ আশপাশের সর্বত্র মাদক সরবরাহ করা হতো। এলাকাবাসীর প্রতিবাদ এবং র্যাবের ঘন ঘন অভিযানের মুখে তিনি গাঢাকা দেন।
পরে আস্তানা গড়েন সবুজবাগের আহমেদবাগে। সেখানেও র্যাবের তৎপরতার মুখে মাদারটেক বাগানবাড়ি মহল্লায় তৃতীয় আখড়া বানান জসিম। সেখানকার বাসিন্দারা জোটবদ্ধ হয়ে হামলা চালান এবং র্যাবের সহায়তায় এ আস্তানাটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
সবশেষে টুন্ডা জসিম নন্দীপাড়া ব্রিজের অদূরে আমুলিয়া গ্রামে বড় আকারের ফেনসিডিল আখড়া গড়ে তুলেছেন। প্রতি রাতে মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের তালপট্টি, চৌদ্দগ্রামের ফরেস্ট, শিবেরবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল আনা হয়।
এগুলোর বণ্টনে মধ্যরাত থেকেই পাইকারি ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের ভিড় জমে আমুলিয়ায়। চট্টগ্রাম ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকেও হাজার হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আসে। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের বণ্টন ও সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে নন্দীপাড়া ব্রিজে রাতভর পুলিশ ভ্যান অবস্থান করে। আশপাশেই থাকে সিভিল পুলিশের বিশেষ 'জেমিনি টিম'। পুলিশ ভ্যান নিয়ে ডিউটিরত টিমের ইনচার্জকে প্রতি রাতে তিন হাজার টাকা এবং জেমিনি টিমের ইনচার্জকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট থেকে আমদানি করা ফেনসিডিল ও ইয়াবা ট্যাবলেট আমুলিয়া গ্রামের আস্তানায় পৌঁছার পর সেগুলো ভোরের আলো না ফুটতেই সেলসম্যানদের হাতে সরবরাহ দিতে রীতিমতো ছোটাছুটি চলতে থাকে। ম্যানেজার জাহাঙ্গীর রুটিনমাফিক একেকটি গাড়ি একেক পথে পাঠাতে থাকেন। পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসের মাধ্যমে মাদক পেঁৗছে যায় সবুজবাগ, মুগদা, খিলগাঁও, শাহজাহানপুরের অলিগলিতে। সবুজবাগের মাদক আখড়া খ্যাত বাসাবো ওহাব কলোনিতে মাদক সরবরাহকারী এজেন্ট হিসেবে রয়েছেন মনু মিয়া। তার মাধ্যমে ওহাব কলোনির সর্বত্র মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন দেলু, ডিস্কো ও বাবু।
সেখানে প্রতিদিন এক হাজার বোতল ফেনসিডিল ও অন্তত দুই হাজার পিস ইয়াবা কেনাবেচা হয়। মুগদায় টুন্ডা জসিমের মাদক ব্যবসা দেখভাল করেন তাবিজ স্বপন, মোখলেস ও কামরুল। বৌদ্ধ মন্দির ও বালুর মাঠ এলাকায় শওকত, শকু, মেট্রো, আলী, খিলগাঁওয়ে হোন্ডা মিলন, কমলাপুর ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় ওয়াসিম, কদমতলায় রানু, মজিদ, রনি, আবেদ আলী মাদক সরবরাহ ও কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করেন। মাফিয়া-টুন্ডা সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান যাচ্ছে মুগদা, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, সবুজবাগের ৪০টি পয়েন্টে। শাহজাহানপুর, শান্তিবাগ, শহীদবাগের গলিতে গলিতে ইয়াবা বিক্রির জমজমাট আখড়া গড়ে উঠেছে।
শাহজাহানপুর থানা গেটের ঠিক উল্টোপাশেই ঝুপড়ি বস্তির ঘরগুলোয় হরদম চলে ইয়াবা সেবনের আসর।
সূত্র জানায়, টুন্ডা জসিম-মাফিয়া চুনি্নর মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টুঁশব্দটি করলেই বিপদ নেমে আসে। টুন্ডার বাহিনী প্রতিবাদকারীর বাড়িঘরে হামলা চালায়, মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেওয়ারও নজির রয়েছে। সোর্সদের কেউ র্যাব বা ডিবিকে খবর দিয়ে মাদক আস্তানায় হানা দেয়ালে তাকে মাদক বা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাজানো মামলায় ফাঁসানোর উদাহরণ আছে।
র্যাবের সহায়তায় অন্তত দুই দফা টুন্ডার মাদক আখড়া গুঁড়িয়ে দেন ভিআইপি সোর্স খ্যাত মুগদার খোকন মিয়া।
এর জেরে সম্প্রতি তাকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। টুন্ডার আক্রোশে আহমেদবাগের জহিরুল, বাবু, বাসাবোর ছোট বাবু, রানা, বালুর মাঠ এলাকার সোহেল, মাইনুদ্দিন, খিলগাঁওয়ের রিয়াজ, মিঠু, স্বপন, মুগদার নাসির, নয়নসহ ২০ জনেরও বেশি যুবক নানা ধরনের হয়রানি ও মামলার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে সবুজবাগ থানার ওসি বাবুল মিঞা বলেন, 'কোনো মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশের সুসম্পর্ক থাকার প্রশ্নই ওঠে না। পুলিশি তৎপরতার মুখে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে মাফিয়া চুনি্ন লাপাত্তা রয়েছেন, টুন্ডা জসিমও সবুজবাগ এলাকায় থাকেন না। ' অসংখ্য মামলা থাকার কথা স্বীকার করে ওসি বলেন, 'তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।