ভারতে ক্ষমতার পালাবদল হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নীতির পরিবর্তন হয় না। সদিচ্ছা থাকলেই উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষার মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। গতকাল ঢাকায় আয়োজিত এ লেকচারে হাইকমিশনার এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) 'ভারত এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক' শীর্ষক এ লেকচারের আয়োজন করে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বাংলাদেশ-ভারতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রায় সব বিষয় নিয়েই কথা বলেন পঙ্কজ শরণ। এ সময় সম্পর্কে সব দিকের কথা উল্লেখ করে পঙ্কজ শরণ বলেন, আগামী ১৭ মে ভারতের নতুন সরকার দায়িত্ব নিলেই এগুলো হারিয়ে যাবে না। প্রতিটি দেশেই কিছু স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে। এগুলো আসলে কোনো অবস্থাতেই পরিবর্তন হয় না। সরকার পরিবর্তন হলে আমরা নিশ্চয়ই বিদ্যুতের লাইন গুটিয়ে নিচ্ছি না।
আমরা নিশ্চয়ই মৈত্রী এঙ্প্রেস বন্ধ করে দিচ্ছি না। এগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এটাই নতুন বাস্তবতা। হাইকমিশনার বলেন, ভারতের এ উদ্যোগগুলো যতক্ষণ বাংলাদেশে প্রয়োজনীয়তা আছে ঠিক ততক্ষণই চলতে থাকবে। যখন বাংলাদেশ সরকার বলবে, তোমাদের সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ। তখনই আমরা সব গুটিয়ে নিয়ে চলে যাব।
অন্য কথায়, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে শান্তি ও জনগণের প্রত্যাশামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাব। সম্প্রতি ভারতের সমর্থনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের বর্জনের মুখেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর ছিল এবং করেছে- এমন প্রশ্নের মুখে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত সব সময়ই যে কোনো দেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা ও তা বজায় রাখে। ভারত সেটাই করে যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করতে পারে। যদি কোনো কিছু জনগণের প্রত্যাশার পূরণ করতে না পারে তাহলে অবশ্যই আমরা তা বন্ধ করে দেব এবং নিজেদের জিজ্ঞাসা করব কেন এই ভুল করলাম। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পর্কের ভিত্তিগুলো সুদৃঢ় থাকে এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না।
আসলে সম্পর্ককে সরকার ও রাজনীতির বাইরের দৃষ্টিতেই দেখা উচিত। দুই দেশের সম্পর্ক গত ২৫-৩০ বছরের অবস্থা থেকে এখন একটা নতুন মাত্রায় পেঁৗছেছে। এখন একে অপরের বোঝাপড়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা একে অপরকে চিনতে পারি, কিন্তু আমরা আসলে একজন আরেকজনকে কতখানি বুঝতে পারি সেটাই প্রশ্ন। এ জন্য নিজেদের প্রতিদিন প্রশ্ন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ভারত একটি স্থিতিশীল ও উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চায়- এটা শুধু বাংলাদেশের স্বার্থেই নয়, এটা পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য জরুরি। আমরা গুটিকয়েক মানুষকে পুরো দেশ বা জাতিকে অস্থিতিশীল করতে দিতে পারি না। নিরাপত্তা সহযোগিতা অর্থ কোনোভাবেই কারও সার্বভৌমত্ব নষ্ট হওয়া নয় বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
বাংলাদেশ-ভারতের তিস্তা নদীর পানি চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া এবং সীমান্ত প্রটোকল অনুসমর্থন এখনো না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে হাইকমিশনার বলেন, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের চেষ্টার পরও চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া এবং প্রটোকল অনুসমর্থন না হওয়া পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। তবে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, ভারত এই অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইতোমধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে তা থেকে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের প্রস্তাব সুচিন্তিতভাবেই পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে পুনরায় উত্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে লোকসভার মেয়াদের সঙ্গে সঙ্গে এর কার্যকারিতা শেষ হবে না। নতুন সরকার গঠনের পরও আইনগতভাবে এটি বৈধ থাকবে।
টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে হাইকমিশনার বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।
তারা পরস্পর তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করেছেন। আমার জানা মতে সেখানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, ভারতের বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশে আসার জন্য রীতিমতো অপেক্ষা করে আছেন।
তবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা কম হওয়ায় বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতার তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে দুই দেশের আরও কাজ করার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মতো পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয় হাইকমিশনারকে। জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তানের সীমানার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমানা মেলানো যায় না। আর পাকিস্তানের নিরাপত্তা ধারণার সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ধারণাও মিলবে না।
বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডরের বিষয়ে ভারত সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, এ বিষয়ে আমরা বেশ কিছু ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। আগামী জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকও বেশ কার্যকরী হবে বলে ভারত আশা করে। আমরা আসলে এই দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাজধানীর ইস্কাটনে বিআইআইএসএসের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত লেকচারে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ। বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ।
সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্যরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।