আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোদিকে মডারেট পথেই চলতে হবে

ভারতের সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামো ও জনগণ বিশেষত তরুণ সমাজের আগ্রহ-চাহিদা বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মডারেট (উদারপন্থা) পথেই চলতে হবে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, 'মোদিকে নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের ভেতরেও একটা সংশয়-শঙ্কা আছে। এখন অনেক ধরনের কথা বললেও মানুষের আস্থা অর্জনে মোদি নিশ্চয়ই মডারেট পথে চলবেন এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী হবেন। '

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গতকাল আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন হুমায়ূন কবির। বাংলাদেশ-ভারত বর্তমান সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'বর্তমানে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক এমন একটা স্থিতাবস্থায় আছে, যেখানে কোনো অগ্রগতিও নেই আবার পেছনেও যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের মৌলিক আগ্রহের দুই ইস্যু তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল অনুসমর্থনের কোনো অগ্রগতি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রুটিন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তবে এ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। সব মিলিয়ে এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্থিতাবস্থাই মনে করি। আর এখন যেহেতু ভারতে নির্বাচন সামনে, তাই নতুন করে কোনো অগ্রগতির এখনই সুযোগও নেই।

' হুমায়ূন কবির বলেন, 'বিজেপি বড় দল হিসেবে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভারতের এখনকার যে জনমত তাতে হয়তো তারাই সরকার গঠন করতে পারে। বিজেপি সরকার গঠন করলে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটা সুযোগ আছে। বাংলাদেশের জন্য তা কেমন হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে মোদির অতীত রেকর্ড দেখে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবশ্যই এক ধরনের সংশয় আছে।

এমনকি ভারতেও অনেকের মধ্যে এ নিয়ে শঙ্কা আছে। আরেকটি বিষয় হলো, মোদি বা বিজেপির পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয়নি। ইশতেহার প্রকাশের বিলম্ব থেকে বলা যায়, বিজেপির ভেতরেও এমন একটা দ্বন্দ্ব-সংঘাত আছে যে, আসলে বিজেপি কোন দিকে যাবে- হিন্দুত্ববাদ নাকি অন্যকিছু। মোদি যেটা বলার চেষ্টা করছেন তা হলো তিনি সুশাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, চাকরি নিশ্চিতকরণ, এ বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেবেন। সেক্ষেত্রে আমার ধারণা, সামগ্রিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কাঠামো ও ভারতের মানুষ বিশেষত তরুণ সমাজের আগ্রহ-চাহিদা বিবেচনায় মোদিকে মডারেট পথেই চলতে হবে।

যদিও নির্বাচনের জন্য তিনি এখন অনেক কথা বলছেন। তবে মোদি প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার) হিসেবে যেসব বলছেন, তাতে এটা মনে হচ্ছে তিনি অর্থনৈতিক দিকগুলোতেই বেশি জোর দেবেন। সে হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে চাইলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি হবে। কারণ প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যেতে পারবেন না। সব বিবেচনায় দুটি সম্ভাবনাই আছে।

এক, মোদির ইশতেহার এখনো না আসায় শঙ্কা আছে। দুই, যেহেতু অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছেন, সেহেতু শান্তির পথে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। আর ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়া মানেই অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। '

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হুমায়ূন কবির বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদের সবচেয়ে বড় দুটি বিষয় হলো, তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল। বিজেপি যদি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার জায়গাটা পূরণ করতে চায় বা আস্থা অর্জন করতে চায়, তাহলে হয়তো বা তারা এ দুটো বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও করতে পারে।

সেটা মোদি সরকারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটা পদক্ষেপ হবে। তখন বিজেপির যে সুবিধাটা থাকবে তা হলো কংগ্রেস ইতোমধ্যেই সীমান্ত প্রটোকল অনুসমর্থনের বিষয়ে সম্মত। এখন বিজেপি যদি এটি উত্থাপন করে সমর্থন করে তাহলেই হলো। আবার তিস্তা পানিবণ্টনের ক্ষেত্রেও তারা যদি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনা করে বণ্টনের একটা সমাধানে যেতে পারে তাহলেই হলো। আমার ধারণা বিজেপি এই ক্রেডিটটা নিতে পারে।

তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গতি সঞ্চারের একটা অস্পষ্ট সুযোগও তৈরি হবে। ' তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে হুমায়ূন কবির বলেন, 'মমতা ব্যানার্জি ভারতের রাজনীতির কোন পক্ষের সঙ্গে যাবেন, তা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ তিনি এর আগে এনডিএ ও ইউপিএ উভয় জোটের সঙ্গেই ছিলেন। আবার এখন বিজেপির জোট কত শতাংশ আসন পাবে, সেটার ওপরও অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আবার মমতাকেও তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটা চিন্তা মাথায় রাখতে হবে।

কারণ পশ্চিমবঙ্গে মমতার প্রায় ২৭-২৮ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে। তিনি রাজ্য রাজনীতির আলোকেই নিশ্চয় সিদ্ধান্ত নেবেন। আসলে সীমান্ত চুক্তি যদি ভারতের পার্লামেন্টে অনুসমর্থন হয় তাহলে নতুন করে একটা আবহ সৃষ্টি হবে। ' সাবেক এ কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গভীর আগ্রহ নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ছাড়া আসলে আর কিছুই করার নেই। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই ভারতের সব পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী।

ভবিষ্যতেও সেটাই হবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.