১) আমার বোন যখন গত বছর মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল, তখনই ব্যাপারটা প্রথম নজরে পরে। এটা হল- কঙ্কাল বাণিজ্য। প্রথমে দেখি, সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেলের অসাধু কর্মচারীরা কি করে নতুন ও পুরাতন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মধ্যস্ততার নাম করে হাজার-হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শুধু পাঠ্যসহায়ক একটি কঙ্কাল কেনার জন্য। যে কঙ্কাল শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকায়, আজ ৫-৬ দফা হাত ঘুরে সেটা ৩০০০০ টাকা! এর পেছনে শুধু ঐসব লম্পট কর্মচারীদের দোষ আছে বললে ভুল হবে, কঙ্কাল বিক্রেতা ছাত্র-ছাত্রীও আসলে এদেশেরই মানুষ- তারা তাদের রক্ত থেকে লোভের জীবাণু ধ্বংস করতে পারেনি।
কয়েক মাস আগে টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখে আরো ভয়াবহ ব্যাপার জানলাম।
ঢাকার মেডিকেলগুলোতে মেডিকেলের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেওয়ারিশ লাশ-দাফনকারী সংস্থাগুলোর যোগসাযশে বেনামী লাশগুলোকে গরম পানিতে সিদ্ধ করে মাংস থেকে কঙ্কাল আলাদা করে ফেলা হয়। পরে শুধু মাংসগুলোকে কোনমতে সেলাই করে কবর দেওয়া হয়।
মূলধনবিহীন আদমব্যবসা! এই আদমব্যবসায়ীদের একজনকে হাতে-নাতে ধরে চ্যালেঞ্জ করলে সে উত্তরে বলে, "আপনারা তদন্ত করেন, মামলা করেন, তারপরে আসেন। " সেই ব্যাটায় জানে, আমাদের দেশের তদন্ত-রিপোর্টগুলোও এক-এক্টা বেওয়ারিশ লাশ!
২) আমার এক ভাই সোলার সেলের ডিস্ট্রিবিউটর। তার অফিসে কাজের সুবাদে প্রায় সময় যাই।
সেদিন গিয়ে টেবিলে একটি ম্যাগাজিন পরে থাকতে দেখি- বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিন বলতে ১০-১২ পাতা লেখা, বাকি ৯০%-ই বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন।
আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ওর সাথে সংস্থাটির কি সম্পর্ক। ও ম্যাগাজিনের শেষের দিকে একটা বিজ্ঞাপন দেখালো, ওর সোলার-সেল ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানীর বিজ্ঞাপন, খুব বাজেভাবে ছাপানো বিজ্ঞাপন, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, অবশ্য বাকি বিজ্ঞাপনগুলোর-ও একই দশা।
আমি মনে করলাম, ওর পরিচিত মানুষ, তাই ফ্রি বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে দিয়েছে।
ভাইয়া বলল উলটা কথা; যারা এসেছিল, তারা পিডিবির মহৎ প্রকৌশলীগণ, এই তুচ্ছ বিজ্ঞাপন-এর জন্য ১০০০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা; কারণ হিসেবে যা দেখিয়েছেন তা শুনে পিলে চমকে উঠলাম।
তারা বলেছেন- আমার ভাই সৌরকোষের বিপণন ও বন্টনের ব্যবসা করেন, তার কারণে পিডিবি অনেক বিল থেকে বঞ্চিত হয়। পিডিবি চুপ থাকার কারণে আমার ভাই ব্যবসা করতে পারছেন, তার জন্যই এই দশ হাজার টাকার মুচলেকা।
দেশের প্রচলিত বিদ্যুত খাতের উপর চাপ কমিয়ে সোলার সেলের মত নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য সরকারকে যেখানে নমনীয় হওয়া দরকার, সেখানে সরকারী এই প্রতিষ্ঠানটির ভদ্র চাঁদাবাজির কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না।
আমার ভাই-এর ভাষায়- "এটাই নিয়ম!" চারদিকে তো এটাই দেখছি, "ভুল"-কে ফুল দিয়ে বরণ করা হচ্ছে।
৩) আমাদের পরিচিত এক ভাই সামনে কাউন্সিলর পদে দাঁড়াবেন এই উপলক্ষে আমাদের ওয়ার্ডে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ওয়াই-ফাই এর ইলাবোরেশন না জানলেও এতটুকু জানেন তাকে "ডিজিটাল" কিছু একটা করতে হবে। এই মহৎ কাজে তার তেমন একটা খরচ হবে না, কিন্তু অনেক বড় স্বার্থসিদ্ধি হবে।
পাড়া-মহল্লার ছিঁচকে-পুঁচকে পোলাপাইনগুলোই যেকোন নির্বাচনে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তাদের কলার-তোলা আর পিচিক-পিচিক থুতু ফেলা স্মার্টনেসের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে যোগ হয়েছে হাতে স্মার্টফোনের বাহার।
সেই স্মার্টফোনে তারা ৫-৬টা ফেসবুক আইডি খুলে ১০-১২টা লাইন ফিট করে, স্কাইপেতে ভিডিও কলিং করে অসম্ভবকে সম্ভব করে (!), রাগিনি এমএমএস-টু এর এডভান্সন ভার্সন দেখে, ইত্যাদি-ইত্যাদি।
আর অন্যদিকে-
মানুষ বাসা-বাড়িতে সময়মত পানি-গ্যাস পায় না,
স্টিট লাইটগুলো দিনের বেলাতেও জ্বলে,
ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র ডাস্টবিনে ভরপুর,
প্রধান সড়কগুলোর কিছু কিছু পয়েন্টে রাস্তার দুই ধারে বাজার, সিএনজি-রিকশা পার্কিং,
আন্ডার-কন্সট্রাকশন বিল্ডিং-এর ইট-বালু-সিমেন্টে রাস্তা ও ফুটপাত দখল,
রাস্তার ধারে ধারে হকার নাকি হকারদের সাম্রাজ্যে মাঝে চিকন রাস্তা বোঝা দায়,
খাল-নালাগুলোতে কোনদিন কেউ পানি বইতে দেখেনি, সর্বদা জমাটবদ্ধ,
সন্ধ্যা থেকে মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ,
চাঁদাবাজি-ছিনতাই তো সাধারণ ঘটনা।
আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সাহসী হতে পারলো না। নেতা হতে হলে মানুষের ভুলগুলো তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়। আমি বলছি না, সব কাজ কাউন্সিলরের, মেয়রের, প্রশাসনের।
যার যার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে। কিন্তু মানুষকে আসল কথা না শিখিয়ে, ভোটের জন্য তাদের পায়ে গড়াগড়ি খাওয়া, ভোট পাওয়ার জন্য সাময়িক এন্টারটেইনমেন্ট দিয়ে ভুলিয়ে রাখা, আর নির্বাচিত হয়ে গেলে সব টাকা উসুল করে নেওয়ার জন্য পঞ্চবাৎসরিক বাণিজ্য করা- এসব তো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
______________________________________________
বিস্তারিত না লিখতে চেয়েও একে একে অনেক লিখে ফেললাম। সাধারণ মানুষের সমস্যা এটাই, তাকে ক্ষোভ জাহির করার সুযোগ দিলে কাউকে ছাড়ে না। কিন্তু দিন শেষে তার কথাও কেউ শুনে না।
সরকারের রোষানলের ভয়ে কোন পাবলিক প্ল্যাটফর্মেও সরকারের সমালোচনাকারী কোন বক্তব্য ছাপা হয় না।
আর ফেসবুকে সবাই লাইক দিয়ে যান সেইসব সেলিব্রিটির স্ট্যাটাসে যারা চেতনার কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন, স্বাধীনতার কথা বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতাবেশী অধর্মের কথা বলেন, নিজেদের এজেন্ডার পিছনে ফুয়েল দেন।
মানুষকে দুইটা মিনিট শান্তিতে থাকতে দেন। ভোট-ও পাবেন, লাইক-ও পাবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।