খেলা মহাকালের সঙ্গে ব্যক্তির সঙ্গে নয়
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক, কবি-ঔপন্যাসিক-শিশুসাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক। কাব্যনাট্য-চিত্রনাট্য-সিনেমা-চিত্রকলা-ভাস্কর্যসহ শিল্পকলার বিবিধ শাখা প্রশাখায় একজন সফল কারিগর। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদানীন্তন রংপুর জেলার কুড়িগ্রামে জন্মেছেন এই সব্যসাচী লেখক। ১৯৪৮ এ তিনি ঢাকায় এলেন। চোখের সামনে দেখলেন একটি ছোট ছিমছাম ঢাকা শহর কীভাবে বড় হতে হতে এক মহানগরীতে পরিণত হলো।
দেখলেন, ভাষার জন্য রাজপথে আত্মাহুতি ছিল বাংলার মানুষ, দেখলেন কীভাবে একটি দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীনতার পর চারদশক পেরিয়ে এসেও সদা প্রাণবন্ত সৈয়দ হক এখনো সচল লেখক। মাঝখানে লন্ডনেও ছিলেন বেশ কিছু বছর। এখনো দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শুরু করে ইউরোপ-আমেরিকার নানামুখী অনুষ্ঠানে হরহামেশা উপস্থিত থাকছেন। আসন্ন ২৭ ডিসেম্বর বাংলা ভাষায় এই মুখর সৃজনকার জীবনের ৭৮ বছরে পৌঁছাচ্ছেন।
নিয়ত সৃষ্টিশীল অগ্রজের প্রতি শুভেচ্ছা জানাবার জন্যে অর্থনীতি প্রতিদিন-এর পক্ষে একটা কথোপকথনের দায়ভার আমাকে দিলেন কবি-প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ। মজিদ মাহমুদ আলাপ করলেন হকের সঙ্গে, ফোনে কথা হলো আমার সঙ্গেও। সে অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর শীতবেলার বারোটায় গিয়ে পৌঁছলাম সৈয়দ হকের বাড়িতে। আমার সঙ্গে অর্থনীতি প্রতিদিনের সাব এডিটর মাহাবুব রাহমান। মাহাবুব আলোচনাটি রেকর্ড করেছেন।
হকের সঙ্গে আমার কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকে রচিত নিরবতা ভাঙায় দোহার হয়ে উঠেছেন কখনো। এবং আলোচনাকালীন আমরা হকের বাড়ির নিচতলার ছোট বৈঠকখানায় বসে লুচি, মিস্টি ও চা খেয়েছি। আলোচনা গম্ভীর হতে হবেÑ এটি কোনোভাবেই আনুষ্ঠানিকমাত্রার লক্ষ ছিল না, কথা ছিল হাসতে হাসতে কথাচ্ছলে। ছিল দৈনন্দিনতার মধ্যেও হঠাৎ একটু ফিরে দেখার মতো। সৈয়দ হকের বাড়ির নিচতলায় ছোট বৈঠকখানায় বসে অপেক্ষা করছি।
আমার কাছে ক্যানন ৪০০। কথা বলার পর কবির ছবি তুলব। মাহবুবের কাছে অডিও রেকর্ডার। হকের বাড়ির দেয়ালে চিত্রকলা, মেঝেতে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম। সাউন্ডপ্রুফ ড্রয়িং রুম।
আমি আর মাহবুব পুটুরপুটুর করছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হক ভাই ঢুকলেন, ‘এসেছ?’ আলাপের আগেও একটি আলাপ থাকে, শুরু হলো সেই আলাপ। পুরো সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ ছাপা হলোÑ টোকন ঠাকুর
প্রশ্ন : হক ভাই, ৭৭ শেষ করে ৭৮ এ পা দিচ্ছেন। ২৭ তারিখ আপনার জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
কিছু কথাবার্তা শুনব আমরা। আমি কোনো গোছানো প্রশ্ন করব না। আপনিও খোলামেলা বললেই ভালো। কারণ, দেখা যায় প্রথাগত প্রশ্ন যাকে করছি তিনিও তৈরি হয়ে নিচ্ছেন কীভাবে উত্তরটি দিতে হবেÑ প্রশ্নের ভেতরেই উত্তর তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা ওসবের মধ্যে যাব না।
স্বতঃস্ফূর্ত আলাপচারিতার মাধ্যমে একটা সহজ মাত্রায় পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারি।
সৈয়দ শামসুল সৈয়দ শামসুল হক : হ্যাঁ, বল না বল। আমি তো সাক্ষাৎকার দিচ্ছি নাÑ একজন কবির সঙ্গে কথা বলছি। আড্ডা দিচ্ছি।
প্রশ্ন : কালকে রাতে আমার মনে হচ্ছিল আপনার উদ্দেশে কয়েকটা প্রশ্ন লিখি।
প্রথম প্রশ্নটা লিখলামও। লেখার পর মনে হলোÑ না না এ রীতিতে যাব না। তো সেই প্রশ্ন যেটা লিখছিলাম সেটা হচ্ছে এ রকম, এই যে আপনি সাতাত্তর বছর বয়স পার করলেনÑ এ রকম বয়সে বাংলাদেশের জীবনে মানুষ সাধারণত ঝিমিয়ে পড়ে। সেই জায়গায় আপনার মধ্যে যে রকম তারুণ্য, স্বতঃস্ফূর্ত তারুণ্য, সদা তারুণ্যÑ এটা কি আপনার নিজের জীবনেরই সঞ্চিত তারুণ্য খরচ করে চলেছেন নাকি আজকের তারুণ্য থেকে তারুণ্যটা লুট করে নিচ্ছেন? এ তারুণ্যের উৎস কোথায়?
সৈয়দ শামসুল হক মুচকি মুচকি হাসলেনÑ
সৈয়দ শামসুল হক : তুমি যদি চাও তবে তোমার সাক্ষাতে না হয় ঝিমিয়ে পড়ি।
খুব স্বাভাবিক, আমি ও মাহবুব হা হা করে হাসতে থাকি।
হাসতে থাকেন সৈয়দ হকও।
সৈয়দ শামসুল হক : না, ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়টা দেখ এভাবে দেখতে হবে, সেটা হচ্ছে এমন, তোমার চারপাশে যা ঘটছে, যার ভেতর দিয়ে তুমি যাচ্ছ তা তুমি তোমার ভেতরে অনুভব করতে পারছ কি না। ঃযব সরহঁঃব রং ঃড়ঢ় ৎবংঢ়ড়হফরহম ঃড় ুড়ঁৎ ংঁৎৎড়ঁহফরহমং, ঃড় ুড়ঁৎ ঃরসব ঃড় ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব সেই মুহূর্তেই তুমি ঝিমিয়ে পড়ছ, তুমি মৃত। আর যদি বল সতেজ আছি কি নেইÑ আমি এভাবে দেখি না। আমি কাজ করে যাচ্ছি।
সেই জীবনের প্রথম যে কাজ শুরু করেছিলামÑ লেখার কাজ, এ কাজ তো কেউ আমাকে দেয়নি, আমিই আমার নিজেকে দিয়েছি এবং আমার কারো কাছে অবসর নেওয়ারও নেই। কারণ কাজটা আমিই আমাকে দিয়েছি এবং সেই কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কাজটা কী? কাজটা হচ্ছে লেখার ভেতর দিয়ে আমার জীবনের অনুভবকে প্রকাশ করা। আমি যে বেঁচে আছি প্রথমত এটা আমাকে অনুভব করতে হয়। দ্বিতীয়ত সেই অনুভবটা আমার ভেতরে কিছু শব্দের জন্ম দেয়, কিছু চিত্রের জন্ম দেয়, কিছু উপমার জন্ম দেয়।
তুলনা, প্রতিতুলনা করি। এর সবটা মিলিয়ে যে কাজ সেটিই আমার কাজ।
প্রশ্ন : কাজের প্রসঙ্গেই যখন বললেনÑ তাহলে বলি, সৈয়দ শামসুল হকের কাজের ধরন কেমন? লেখালেখির ভাষায় আপনি সব্যসাচী। আপনার গল্প-কবিতা-উপন্যাস শিশু সাহিত্য-নিবন্ধ-জার্নাল বা কতরকম রচনাÑ চিত্রকলার প্রতি আগ্রহ, ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিতে কাজ করা, মঞ্চনাটকের জন্য প্লে রাইটিং অর্থাৎ বহু শাখায়ই নিজেকে চারণ করিয়েছেনÑ তারপরও সৈয়দ হককে কবি হিসেবে গোপনে গোপনে আমার ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু শিল্প-সাহিত্যের যে এত শাখা-প্রশাখায় কাজ করলেন, এরপরও কি আপনার পিপাসা মেটে না?
সৈয়দ শামসুল হক : আমার কাজ তো হচ্ছে উপকরণের দিক থেকে ভাষা মাধ্যমে কাজ করা।
ভাষা মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে ভাষার যতগুলো সৃজনশীল প্রকাশক্ষেত্র আছেÑ কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধÑ সবগুলোতেই আমি কাজ করেছি, কাজ করে যাচ্ছি। এটা এ রকম যে আমি আলাদা করে দেখি না কোনো একটি মাধ্যমকে। আমি মনে করি যে কিছু বলবার কথা আছে এবং সেই বলবার কথাটি বলবার জন্যই সমূহ যে মাধ্যমটি আমার কাছে সবচেয়ে উপযোগী মনে হয় সেটিকে ব্যবহার করি। কখনো সেটি কবিতায় আসে, কখনো সেটি গল্পে আসে, কখনো উপন্যাসে আসে, কখনো নাটকে। এবং প্রতিটি মাধ্যমই কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে সমান শক্তিশালী।
এটা আমি কখনই বলি না যে, এটা বড়, ওটা ছোট।
প্রশ্ন : মাধ্যমের ছোটবড়র কিছুই নেই বলছেন?
সৈয়দ শামসুল হক : না না না, হ্যাঁ; এটা আমি কখনই বলি না। কিন্তু তারপরও বলব, কবিতাই হচ্ছে ভাষার সর্বোত্তম সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে সাংকেতিক ব্যবহার। সেটি আমি যখন করি বা সেটি যখন কেউ খুব সফলভাবে করেন যিনি অন্য মাধ্যমে কাজ করছেন তিনিও মূলত কবি, প্রধানত একজন কবি। তার সেই কবিসত্তা থেকেই উৎসারিত হয় সবগুলো মাধ্যমের দিক।
প্রশ্ন : হয়তো তিনি হতে পারেন একজন ভাস্কর, তারপরও তিনি কবি!
সৈয়দ শামসুল হক : হ্যাঁ, তারপরও। তবে ভাস্কর্য বা চিত্রকলার কথাই যদি বলি সেটা কিন্তু ভাষা থেকে একেবারেই ভিন্ন একটি মাধ্যম। কীভাবে? এটি আমরা দেখি, চোখে দেখি। অর্থাৎ ভরৎংঃ পড়হঃধপঃ রং বুব পড়হঃধপঃ। আবার ভাস্কর্য দেখ ঘুরেফিরে দেখতে হয়।
এটার কিন্তু একটা কোনো দৃষ্টিকোণ নেই, দৃষ্টিপথ নেই। আবার আঁকা ছবিতে তুমি একটি দ্বিমাত্রিক ছবির সামনে দাঁড়াচ্ছ এবং একবারে নিচ্ছ। একটা কবিতা তোমাকে প্রথম থেকে শেষঅব্দি পড়ে তবে ভেতরে নিতে হচ্ছে। কিন্তু ছবি, একবারেই আমার সামনে চলে আসছে, এক দেখাতেই। এবং তারপর আমি বিশেষভাবে দেখি।
এবং সেইখানে হচ্ছে ওই সৃজনশিল্পী ওই চিত্রকরের বিশেষ শক্তির পরিচয় যে তিনি আমার চোখটাকে কীভাবে ভ্রমণ করাচ্ছেন সমগ্র ছবিটাতে। এটা কিন্তু আলাদা কাজ। আমি নিজে যে অবসরে ছবি আঁকি, আমার আপন আনন্দে ছবি আঁকি, সেখানে আমার ভেতরের কিছু রং আমার ভেতরের কিছু বিন্যাস মনের ভেতরে আসে...
প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে জলরঙের প্রতি বেশি ভালো লাগা কাজ করে কি না?
সৈয়দ শামসুল হক : না না। আমি প্রধানত কাজ করেছি অ্যাক্রেলিকে। অ্যাক্রেলিকে দুটো সুবিধা আছেÑ সেটা হচ্ছে আমার মতো অবসরের চিত্রকরÑ সময়টাকে আমি খুব দ্রুত ব্যবহার করতে পারি।
আমার ভেতরে যা রং এবং বিন্যাসের যে ছবিটা রয়েছে, যে জমিটা আমার ভেতরে রয়েছে সেই জমিটাকে এক চাপেই আমি এনে ফেলতে পারি। রংটা দ্রুত শুকোয়, রংটাকে ইচ্ছে করলে জলরঙের আকারেও ব্যবহার করা যায়, প্রকারেও ব্যবহার করা যায়। আবার তেলরঙের ঘনত্বেও ব্যবহার করা যায়। তুমি তো নিজে ছবি আঁকো, তুমি তো জানো যে অ্যাক্রেলিকের এই সুবিধা আছে। এবং জলরঙ হিসেবেও কিন্তু এটাতে কাজ করা যায়...
প্রশ্ন : এবং দ্রুত করা যায়।
সৈয়দ শামসুল সৈয়দ শামসুল হক : দ্রুত করা যায়, শুকিয়ে যায়, সময় নেয় কম।
এ সময় একজন তরুণী চলে আসেন আমাদের আলাপের মধ্যে। তিনি রেখে যান প্লেটভরা লুচি, চমচম ও চা। গ্লাস ভর্তি পানি। সৈয়দ হকই প্রথম লুচিটা তুলে নিয়ে মুখে পুরে দিলেন কামড়।
লুচি মুখের মধ্যে রেখেই ফের কথা বলতে শুরু করেনÑ
সৈয়দ শামসুল হক : খেতে থাকো এবং এর মধ্যেই কথা বলো।
প্রশ্ন : হক ভাই এবার একটু অন্য কথা বলি। ঢাকা শহরে আপনার আগমন কোন সময়কালে? তখনকার ঢাকা নিয়ে আমরা কিছু কথা শুনব। আপনাদের ছাত্রজীবন বা তখনকার সামাজিক-সংস্কৃতি, আজকের সামাজিক-সংস্কৃতি এসব জায়গায় একটু কথায় কথায় ঘুরে আসতে চাই।
সৈয়দ শামসুল হক : এই শীতসকালে একেবারে পেছন ফিরে তাকাতে বলছ?...
শীতের মাস।
এই শীতের ভেতরে কুড়িগ্রামের কথা মনে পড়ে। ঘন কুয়াশা, কী শীত কী শীত! হিমালয় তো খুব কাছে। আর বরফ পড়ে না বটে কিন্তু ভোরবেলাতে ঘাসের ওপর শিশির জমে কাচের মতো প্রায় স্বচ্ছ হয়ে যায় এবং সেই শিশির বোধ হয় কাচের মতো নিরেট কাঠিন্য থাকে। হাঁটলে পায়ের নিচে মর্মর মর্মর করে সেই জমাট শিশির ভেঙে যায়। সেটি মনে পড়ে।
মনে পড়ে বাবার সঙ্গে বেরিয়ে ভোরবেলায় হাঁটতে হাঁটতে ধরলা নদীর পাড় পর্যন্ত যেতাম, ফুল কুড়োতাম, কচুর গুঁড়ি নিয়ে আসতাম, শিউলি ফুল নিয়ে আসতাম মায়ের জন্য। কেন? ওই শিউলির বোঁটা, মা ওগুলোকে শুকোবেন। শুকিয়ে পায়েসে যাবে, পোলাওতে যাবে, রং হবে। গরিবের ঘরে আর জাফরান কোথায়? ওই শিউলির বোঁটাই খাবারের রং। আমি কিন্তু একেবারেই নি¤œমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।
খুব কষ্টের ভেতর দিয়ে দিন গেছে। বিশেষ করে আমার মনে পড়ে ১৯৪৩ সাল, পঞ্চাশের মন্বন্তর। ওই সময় আমার বয়স সাত সাড়ে সাত। সেই সময় একবেলা খাচ্ছি, লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেখছি নিরন্ন অনাহারী শীর্ণ কঙ্কালসার মানুষ সারি দিয়ে বসেছে।
এক খাবলা খিচুড়ি পড়ছে কলার পাতে। তাই কি গোগ্রাসে খাচ্ছে এবং তার ভেতর থেকে বাঁচিয়ে মুড়ে আবার রেখে দিচ্ছে যে পরের বেলা খাবে। এ বেলা না হয় আধাপেটাই খেলাম। আমি চিন্তা করি আমার বাবার না জানি কত কষ্ট হতো, আমার মায়ের বুক ভেঙে যেত যে সন্তানের মুখে দুবেলা দুটো ভাত গুঁজে দিতে পারছেন না। ছোট ছোট আলু হতো, বড়ির মতোÑ সেই আলুসেদ্ধ, ছোলাসেদ্ধ কোনোরকমে খাচ্ছি আরেক বেলা ফেনাভাত একটুখানি, তাও ভরপেট নয়।
প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে শীতকালটা নিয়েও একটা প্রশ্ন হয়ে আছে। আপনার জন্ম এমন সময় যখন বাংলাদেশে শীতকাল এবং এ মুহূর্তেও শীতকাল। এবং উত্তরবঙ্গে বা কুড়িগ্রামের দিকটায় শীত একটু বেশিই পড়ে। আপনার কবিতায়...
সৈয়দ শামসুল হক : শীত আমার খুব পছন্দ। কিন্তু আমার কবিতায় গ্রীষ্ম এবং বৈশাখ বহুবার করে এসেছে।
আমার তো একটি দীর্ঘ কবিতাই আছে...
প্রশ্ন : বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালাÑ
সৈয়দ শামসুল হক : ... এটা, বৈশাখের কি বিবরণ ওর ভেতরে আছে সেটা সন্ধান করবার আগে এটা বলা ভালো যে গরমের ভেতরে আমি খুব উত্তেজিত বোধ করি। কিছু লেখার জন্য, কিছু করার জন্য, কিছু বলার জন্য, এমনকি কিছু আঁকার জন্যও।
মাহাবুব রাহমান : তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন কি আপনার ভেতরের রুদ্ররূপটা ওই সময়ে ধরা পড়ে?
সৈয়দ শামসুল হক : রুদ্ররূপ আমি বলব না। আমি বলব যে আমার মধ্যে একটা মানুষ কাজ করে যে মানুষটা অনুরণিত হয় চারদিকের বাস্তব দিয়ে।
প্রশ্ন : বাংলা কবিতা প্রসঙ্গে আসি।
বাংলা কবিতার এখনকার তরুণরা যা করছে সেক্ষেত্রে তরুণদের প্রতি আপনার যে পর্যবেক্ষণ তা থেকে কি মনে হচ্ছে উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধতর একটি জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পেরেছি? নাকি কিছুটা অ্যানার্কি ও তৈরি হয়ে গেছে বা হচ্ছে?
সৈয়দ শামসুল হক : একদম পরিষ্কার ভাষায় বলি। অত্যন্ত বেশি প্রাণশক্তি রয়েছে, খুব প্রাণশক্তি আমি লক্ষ করি। কিন্তু একই সঙ্গে কিছু মনোযোগের অভাবও আমি লক্ষ করি এর নির্মাণের দিকটায়, যাকে বলি আঙ্গিক। কী বলছি, কীভাবে বলছিÑ দুটিই কিন্তু সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এবং কীভাবে বলছি এটাকে আমার মনে হয় একটু...
প্রশ্ন : মনোযোগী হওয়ার আছে।
সৈয়দ শামসুল হক : একটু নয় অনেকখানি মনোযোগী হওয়ার আছে। যেমন কবিতার কারিগর হিসেবে দুয়েকটা দিক আমি বলতে পারি। এ মুহূর্তে করছিÑ যেমন তুমি যখন কবিতায় একটি চিত্রকল্প আনছ... সেই চিত্রকল্পের আওতাধীন ক্ষেত্র তা থেকেই বাকি চিত্রকল্পগুলো উঠে আসবার কথা। কিন্তু দেখা যায় সে রকম হচ্ছে না। তার মানে মনোযোগী নয়।
প্রশ্ন : একটু উল্লম্ফন বা একটু অমনোযোগী হয়ে গেলেই তো তার কেটে যাওয়া...
সৈয়দ শামসুল হক : তার কেটে যাওয়া না, একদম ভিন্ন ক্ষেত্রে চলে যাচ্ছে। এক জায়গায় নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে ছন্দজ্ঞানÑ ছন্দ এ রকম নয় যে আমি পয়ার অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্তের কথা বলছি তা না। ছন্দÑ গদ্যে লিখলেওÑ যে স্পন্দন...
প্রশ্ন : মানে বুননের মধ্যেই যে ছন্দ থাকে...
সৈয়দ শামসুল হক : যে স্পন্দনটা আছে যে ধ্বনিস্পন্দন সে সম্পর্কে আমার মনে হয় মনোযোগী হওয়ার আছে। এখানে যথেষ্ট মনোযোগ পায় না।
আরেকটি বিষয় পায় না, সেটি হচ্ছে যে একটি রচনা কখন সম্পূর্ণ হয়। ... কখনো কখনো কোনো কবিতা আমার মনে হয় ভালো লাগছে; কিন্তু একটু অতিকথন। আবার কখনো মনে হয়Ñ না, শেষ করতে পারল না। ভারি সুন্দর এগুচ্ছিল; কিন্তু শেষ করতে পারল না। এটি কিন্তু সাধারণভাবে বলছি।
আবার কিছু রচনা আমি এমনও দেখছি, পেয়েছি, পাচ্ছি যে সেটি শব্দের দিক থেকে তৃপ্তিকর। কিন্তু এটা সার্বিকভাবে যদি আমাকে বলতে হয় তো আমি বলব যে, যেমন প্রচুরভাবে আমি প্রাণশক্তি লক্ষ করি যে একটা নতুন কণ্ঠস্বর নতুনভাবে অবলোকন, এর যে একটা ভেতরের আকাক্সক্ষা এটি যেমন ছত্রে ছত্রে পাই, তেমনি কীভাবে বলছি এটিকে এখনো অনেকখানি প্রত্যাশিত রয়ে গেছে বলে আমি মনে করছি।
প্রশ্ন : গদ্যের ক্ষেত্রে আপনার মূল্যায়ন...
সৈয়দ শামসুল হক : গদ্যের খুব খারাপ অবস্থা বাংলাদেশে। খুব খারাপ অবস্থা। আর গদ্য তো কেবল সাহিত্যে কেন সারা দিন সারা জীবন ভরেই দেখ না, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখ না, গদ্যের খুব খারাপ অবস্থা।
বাংলা রাষ্ট্র ভাষার জন্য রাজপথে রক্ত দিয়েছি, বড় বড় কথা বলিÑ শব্দ ব্যবহারে অসচেতনতা। যারা সৃজনশীল গদ্য লেখক তাদের গদ্যে আমি দেখতে পাই অমনোযোগিতা। পদবন্ধ, বাক্যের পর বাক্যে যে একটা স্পন্দন তৈরি হয়Ñ কোথায়? পাই না।
প্রশ্ন : এগুলো না থাকার কারণ কী? এদের পাঠের অভিজ্ঞতা কম নাকি মনোযোগের অভাব?
সৈয়দ শামসুল হক : মনোযোগ মনোযোগ। মুশকিলটা কোথায় জান? মুশকিলটা হচ্ছে ভাষাকে আমরা প্রতিদিনের জীবন নির্বাহে ব্যবহার করিÑ অফিস-আদালত বাজার-সংসার সবই ভাষায় করছি।
আবার যখন লিখতে বসি তখন ভাষাতেই লিখি। কিন্তু দুটো ভাষা আলাদা। সৃজনশীল মুহূর্তে ভাষা কিন্তু প্রতিদিনের ভাষা থেকে বিযুক্ত। আবার প্রতিদিনের ভাষার ভেতর থেকেই কিন্তু তার উদ্ভব। শুধু এটাকে ব্যবহার করতে হয় কীভাবেÑ তুমি তো ছবি আঁক।
ছবি আঁকার মানুষ, কবিতাও লেখ বা কবিতাই লেখ ছবি আঁক খুব কমÑ তোমাকে বলি ভাষায় একজন লেখক কীভাবে শব্দ ব্যবহার করেÑ চিত্রকর যেমন তার রংকে, নর্তক যেমন তার হাতের মুদ্রা, পায়ের মুদ্রা, শরীরের ছন্দÑ ভাস্কর যেমন তার পাথরকে, ঠিক সে রকমভাবেÑ বা সংগীত যিনি করেন তিনি স্বরগ্রাম সেই সপ্তস্বরকে যে রকমভাবে ব্যবহার করেন ঠিক সে রকমভাবে ভাষাকেও লেখক ব্যবহার করেন কিছু একটা বলার জন্য। কিন্তু সেটা ব্যবহারিক ভাষা নয় এটা বুঝতে হবে।
প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষার একটি বড় জায়গা, সাবেক বড় জায়গা বলব পশ্চিমবঙ্গÑ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাষা বিশেষ করে আজকের দিনে তরুণদের একটা বিভাজন হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি। আপনাদের সময় তো এটা শুরু হয়েছে, সেটার উত্তরাধিকার বহন করার ভেতর দিয়ে আজকের প্রজন্ম হয়তো খানিকটা স্বাধীনতা নিয়ে ফেলে এবং সেক্ষেত্রে কিছু জায়গায় হয়তো অভিজ্ঞতারও অভাব থাকে। আমি নিজেকে দিয়েই টের পাই এবং এটাও টের পাই যে আজ বোধ হয় আর সেদিন নেই যে পশ্চিম বাংলা থেকে আগত কোনো ঔপন্যাসিকের উপন্যাস বা কবির কবিতার বই পড়ার মধ্য দিয়েই যেমন একসময় এখানকার পাঠকের স্বাদ, এমনকি লেখকেরও লেখক হয়ে ওঠার এক ধরনের প্রস্তুতি থাকত।
এখন আর সে অবস্থায় বাংলাদেশ নেই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাহিত্য কবিতাÑ এ মুহূর্তে আমি বলতে পারি আমার সামনে বসে আছেন আপনিÑ সৈয়দ শামসুল হক; যার হাতে সাহিত্যের নানা শাখায় নানাভাবে সমৃদ্ধতর সাহিত্য হয়েছে, হয়ে যাচ্ছে এবং যার ভিত্তিতে নতুন লেখক নিজেদের প্রস্তুতিকালীন ব্যবস্থাটি গড়ে তুলতে পারছে নিজেদের মধ্যে। তো সেখানে বাংলা ভাষা এগুচ্ছে মানে বাংলাদেশের তরুণদের হাতেই এগুচ্ছে। তারপরও আপনি যা বলেছেন আমার মনে হয় যে সে অভিযোগ সত্য। মনোযোগের অভাব আছে।
থাকতে পারে। কিছু স্বাধীনতাও মনে হয়... যেমন আজকে ভাষায়...
সৈয়দ শামসুল হক : আমি অন্য দিক থেকে বিষয়টাকে দেখছি। আমি বলেছি যে ভাষাকে ব্যবহার করতে হবে চিত্রকরের রঙের মতো, নর্তকের মুদ্রার মতো, সংগীতকারের সপ্তস্বরের মতো ব্যবহার করতে হবে। আর তুমি যে বলছ নতুন কিছু করতে চাচ্ছেÑ না, এভাবে কেমনে এগুবে। আর এখানে পশ্চিমবঙ্গের কথা এনো না।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে ভাষা এক হলেও তার ভেতর ব্যঞ্জনা ভিন্ন হয়ে যায়। বাংলাদেশের রক্ত বললে যা বোঝা যায় পশ্চিমবঙ্গের রক্ত বললে তা বোঝা যায়? তা বোঝা যায় না।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে আপনার কাছে দু-একটি কথা শুনতে চাই। রবীন্দ্রনাথকে আপনি কীভাবে পেলেন, কীভাবে রাখলেন, কীভাবে বিদায় করলেন?
সৈয়দ শামসুল হক : অত দীর্ঘ গল্পে যাব না। রবীন্দ্রনাথের কাছে আমি যা নিয়েছি সেটা হচ্ছে তার বলবার কথা নয়, সেটা হচ্ছে তিনি কীভাবে বলেছেন তার সেই বলবার আঙ্গিকটিকে এখনো আমি পর্যবেক্ষণ করি, বোঝার চেষ্টা করি; কীভাবে তার কাছ থেকে আহরণ করা যায়।
তিনি ভাষার সবচেয়ে বড় কারিগর। এত বড় কারিগর, ভাষার কারিগর আমার ভাষায় আর আসেনি। সেই কারিগরের কাছ থেকে তার কারিগরি দিকটা আমি পাই, নিই, দেখি এবং বুঝে দেখার চেষ্টা করি এবং আমি কি করছি তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে ঈর্ষা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো বিষয় ফিল করেন কি না?
সৈয়দ শামসুল হক : আমার খেলা মহাকালের সঙ্গে, ব্যক্তির সঙ্গে নয়Ñ তিনি যত বড়ই হোন। তিনি শেকসপিয়র হন কি কালিদাস হন কি রবীন্দ্রনাথ হন, বার্ল্টড ব্রেশট হন, কি তলস্তয় হনÑ আমার খেলা হচ্ছে মহাকালের সঙ্গে।
সেখানে আমি এবং মহাকাল; আমরা একটা বিশাল সমুদ্রতীরে বসে গোধূলিলগ্নেÑ গোধূলি মানে ভোর কিংবা সন্ধ্যা দুটিই হতে পারে বাংলা ভাষায়Ñ সেই রকম একটি আলোছায়ার ভেতরে আমরা বসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। দেখি মহাকাল আমাকে বিলীন বিলুপ্ত করতে পারে কি না...
মাহাবুব রাহমান : নাকি কোলে তুলে নেয়।
আবারও একটি হাসির আমেজ রুমের মধ্যে। তিনজনেই হাসছি তখন আমরা। সৈয়দ হক বয়সে তরুণ বলেই তার সঙ্গে আড্ডায় বসে প্রাণ খুলে হাসা যায় সহজেই।
কোনো দ্বিধা লাগে না, বাধা থাকে না। সত্যি সত্যি সৈয়দ শামসুল হককে সবসময় একজন সমৃদ্ধ তরুণ বন্ধু হিসেবে ভাবা যায়, পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : এবার একটি সামাজিক প্রশ্ন। এখনকার যারা কবিতা, গল্প, উপন্যাসের পাঠক; টেলিভিশন এবং নানারকম মাধ্যমের কারণে পাঠের সেই রীতি বোধ হয় ভেঙে যাচ্ছে। সেই সনাতনী পাঠের রীতি এখন আর...
সৈয়দ শামসুল হক : আমি জানি।
এমন প্রশ্নের সঙ্গে আমি পরিচিত। লোকজন যাই বলুক না কেন, আমি মনে করি না যে সেক্ষেত্রে আমাদের বিচলিত হওয়ার কিছু আছে। প্রযুক্তির একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। কোনো কিছু নতুন নতুন হলে যা হয় এক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। বই বই-ই থাকবে, পড়ার অভ্যাস পড়ার অভ্যাসই থাকবে।
এখনো তো বই পড়েই লেখাপড়া শিখতে হয় শিশুকাল থেকেই। এই যে কবিতার কথা বল, অনেকে বলে যে কবিতা কি থাকবে? আরে, একটা বাচ্চাকে আমরা প্রথম কী শেখাই? কবিতা শেখাই। একজন অতিথি এলে বলি, বাবা একটা কবিতা বলো তো, মা একটা কবিতা তোলো তো। ফলে আমি তো দেখি যে ওখানে এখনো কবিতার কাজ রয়ে গেছে। এখনো যারা প্রেমে পড়ছেন বই কিনে প্রেমিকাকে কবিতা শোনাচ্ছেন, বই উপহার দিচ্ছেন।
এই যে কবিতাও একটি কাজে লেগে গেছে। বই পড়াÑ বই পড়তে সবচেয়ে কম আয়োজনের দরকার হয়। এর জন্য ব্যাটারি লাগে না, ইলেকট্রিসিটি লাগে না। তুমি পড়ছ, ব্যাক নাই ফরোয়ার্ড নাই; ইচ্ছামতো তুমি পড়তে পাচ্ছ। এবং তুমি যে কথা বলছ সেই কথাগুলো কে কীভাবে একজন ব্যবহার করেছে এ একটা আলাদা আনন্দ, এটা একটা আলাদা মজা।
এটি হাজার হাজার বছর টিকে আছে। তখন হয়তো আজকের মতো ছাপা কাগজে বই ছিল না। কিন্তু পাথরের ফলকে, পোড়ামাটির ফলকে, পশুর চামড়ায়, ধাতব পাতের ওপরে লিখেছি, তালপাতায় লিখেছি। এই যে লিখিত যে ভাবনাচিন্তাগুলো রেকর্ডেড থটস, দি রেকর্ডেড ইমাজিনেশন এটার বিকল্প আমার মনে হয় না যে টেলিভিশন বা ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের স্ক্রিন। এগুলো দিয়ে কি হয়? এগুলো দিয়ে হয় না।
প্রযুক্তিতে মেতে ওঠে এখন হ্যাঁ যে ছেলেটি যে মেয়েটি, ত্রিশ বছর আগে বিশ বছর আগে একটা বই নিয়ে বসত; সে হয়তো আজকে ল্যাপটপ খুলে দেখছে কিছু একটা করছে। সময়টা বইয়ে না দিয়ে অন্য কিছুতে দিচ্ছে কিন্তু এটা কেটে যাবে। যেকোনো প্রযুক্তি বিপ্লবেই এটি হয়। প্রথম প্রথম খুব মেতে ওঠে, খুব মাতোয়ারা হয়ে যায়। এই যে নতুন নতুন বিয়ে করলে যেমন হয়Ñ সারাক্ষণ তুমি আমি চলছি, তারপর যখন ওই জিনিসটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে তখন ঘোর কেটে যায়।
এরপর আমরা বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে আমি সৈয়দ হকের বাড়ির সামনের লনে। বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করি তাঁর, তিনিও নানান ভঙিতে পোজ দেন। হাসি হাসি পোজ। বসে, দাঁড়িয়ে পোজ দেন। হঠাৎ বললেন, ‘বিষন্নতা ধরবে না?’ আমার ক্যামেরায় দিলেন বিষন্ন মানুষের অভিব্যক্তি।
তারপর বিদায়। তবে বিদায় নেবার আগে তাকে আমার শেষ প্রশ্ন, শেষ উত্তর, ছিলÑ
প্রশ্ন : এই কথোপকথনের ভেতর দিয়ে আপনার পাঠকের জন্য, বা বিশেষ একেবারেই একান্ত ব্যক্তিগত কারো জন্য কি কিছু বলবেন? হয় না যে আমার একটা বন্ধুর জন্য একটা কথা রাখলাম, বা আমার একটা বালিকা বন্ধুর জন্য একটা কথা বললামÑ এ রকম একটা কথা দিয়ে আজকের কথোপকথন শেষ করতে চাই।
সৈয়দ শামসুল হক : কথার চেয়ে একটা প্রশ্ন করি, সেটা হচ্ছে আমি তো অনুভব করি আমি বেঁচে আছি। আমি তোমাদের মধ্যে বেঁচে আছি তো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।