আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ অপারেশন জাতিসংঘ গ্যারেজ

Never lose hope...., Never Stop Expedition.... আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন একেকটা অসামান্য বীরত্বের অমরগাথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জাতিসংঘ বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ ও যানবাহন পাঠিয়েছিলো। কিন্তু জাতিসংঘের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীরা তাদের নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারেনি। নিরপেক্ষতা বর্জন করে তারা সহযোগিতা করেছিলো পাক বাহিনীকে। জাতিসংঘের গাড়িতে চড়ে পাক হানাদাররা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করতো শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে।

জাতিসংঘ বাহিনীর এ আচরণে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা এর উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্য প্রতিজ্ঞা করলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম ছিল ১নং সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অপারেশনের দায়িত্ব নেন। তিনি টার্গেট করেন চট্টগ্রাম শহরের সার্কিট হাউসের পেছনের মাঠে অবস্থিত জাতিসংঘের যানবাহন গ্যারেজকে।

টার্গেট ঠিক করে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বেশ কয়েকদিন ছদ্মবেশে রেকির কাজ শেষ করেন। এরপর সহযোদ্ধাদের সাথে বসে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক সেপ্টেম্বর মাসের এক সন্ধ্যায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর সহযোদ্ধা জাকারিয়া, সেলিম উল্লাহ ও ফিরোজ আহমেদকে নিয়ে যাত্রা করেন টার্গেটের দিকে। সাথে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক। লক্ষ্য একটাই- পাক হানাদার ও তার নির্লজ্জ দোসরদের একটা শিক্ষা দেওয়া।

পাহারাদারদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাঁরা প্রবেশ করেন গ্যারেজের অভ্যন্তরে। এরপর তাঁরা বিস্ফোরক স্থাপন করতে থাকেন। কিন্তু এ সময় গ্যারেজের কয়েকজন ড্রাইভার তাঁদের দেখে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায় এবং সার্কিট হাউসে অবস্থানকারী পাক বাহিনীকে খবর দেয়। খবর পেয়েও পাক হানাদাররা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গ্যারেজে আসতে কালক্ষেপণ করে। আর এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা কাজ শেষ করে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসতে সক্ষম হন।

পাকিস্তানি বাহিনী এসে পুরো গ্যারেজের চারদিক ঘিরে ফেলে এবং সার্চলাইট ফিট করে পুরো গ্যারেজে আলো ফেলে। তারা গ্যারেজে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের তন্নতন্ন করে খুঁজেও ব্যর্থ হয়। পড়ে অবশ্য তারা বিস্ফোরক খুঁজে পায় এবং তা অপসারণ করে। অপারেশনটি আক্ষরিক অর্থে ব্যর্থ হলেও সফলতা আসে অন্যদিক থেকে। জাতিসংঘের ত্রাণ কর্মকর্তারা এরপর থেকে আর হানাদার বাহিনীকে তাদের যানবাহন ব্যবহার করতে দেয়নি।

তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধারা পরে তাদের আরেকটা ভুল খুঁজে পান। আর তা হল- পূর্বেই বিস্ফোরকগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিলো। আর তাই নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলেও সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। আমাদের বাংলাদেশিদের একটা জিনিস সবসময়ই স্মরণে রাখা উচিৎ, সাফল্য-ব্যর্থতা, চড়াই-উৎরাই, ভুল-শুদ্ধ এই নিয়েই রচিত হয়েছিলো আমাদের গৌরবোজ্জ্বল উত্তাল একাত্তর।

সূত্রঃ ১. বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস – সেক্টর এক ২. মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক অপারেশন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.