লেবাসধারীতা থেকে মুক্তি পাওয়ার এক যন্ত্রনায় ছটফট আমার আর্তনাদ। “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও আমার দেশের কাণ্ড!” মাহমুদ মেননের লেখাটি আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলানিউজ২৪.কম-এ ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত লেখাটির বেশিরভাগ উপসংহারের সাথে আমার মতদ্বৈততা সুস্পষ্ট এবং কিছু প্রশ্ন জেগেছে। এই দায়িত্ববোধ থেকে “মাহমুদ মেননের ঈর্ষা না অজ্ঞতা???" -এ মতদ্বৈততার বিবরণ ও প্রশ্নগুলো উথাপন করতে চেষ্টা করেছি।
আমার দেশ-এ প্রকাশিত আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কথোপকথন ইতোমধ্যে শুধু সারা দেশে নয় সারাবিশ্বেও আলোচিত ও আলোড়িত একটি ঘটনা।
এই সংবাদ প্রকাশের পর বর্তমানে বিষয়টি আদালতে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। আদালতের মামলায় আমার দেশ- সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারা এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২৪(এ) ও ৫০৫(এ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৩৯ নং ধারা, তথ্য অধিকার আইনের ৪ নং ও ৬ নং ধারা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারা, বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১২৪ (এ) ও ৫০৫ (এ) ধারায় সুস্পষ্ট হয়, আমার দেশ স্কাইপি কথোপকথন সংবাদ প্রকাশ করে জনস্বার্থ বিপন্ন বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কোন ক্ষতি করে নাই। বরঞ্চ জনস্বার্থে সংবাদ প্রকাশ করেছে। শাহদীন মালিক রেডিও তেহরানকে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে হ্যাকিং করাও বৈধ।
’আমার দেশ’ ইতোমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করেছে স্কাইপি কথোপকথনটি দেশের বাইরে থেকে আমার দেশ-এর কাছে এসেছে।
মাহমুদ মেনন “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও আমার দেশের কাণ্ড!” শীর্ষক লেখাটি বাংলানিউজ২৪.কম-এ প্রকাশ করার কিছুক্ষন পর আবার উঠিয়ে নিয়েছে। সৎ সাহস নিয়ে লিখে থাকলে তিনি অবশ্যই এই কাজটি করতেন না। তার লেখায় স্ববিরোধীতা এবং ঈর্ষা ফুটে উঠেছে। শব্দ প্রয়োগে স্পষ্ট হয়েছে তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে এরকম একটি অখাদ্য লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অবশ্যই অখাদ্যটি তিনি গলাধঃকরণ করতে ও করাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এখন কথা হচ্ছে-
§মাহমুদ মেনন হ্যাকারকারী খোজার দায়িত্ব নিতে আমার দেশ’কে আহ্বান করেছেন। মাহমুদ মেনন কি জানেন না, সংবাদপত্র উত্স প্রকাশ করতে বাধ্য নই। একজন সাংবাদিক হয়ে এমন কথা কেউ বলতে পারে তা আমার অবগত ছিল না।
§মাহমুদ মেনন নিউজ অব দ্যা ওর্য়াল্ড এর কথা তুলে ধরে বলেছেন, আড়িপাতার মাধ্যমে নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড দোষী প্রমাণিত হয়েছে।
ঠিক একইভাবে আমার দেশ কেও তিনি একই দন্ডে অপরাধী করতে চেয়েছেন। নিউজ অব দ্যা ওর্য়াল্ড-এর বিষয়টি ভালোভাবে অবগত থাকলে এমন মন্তব্য করতে পারতেন না। কারণ নিউজ অব দ্যা ওর্য়াল্ড ব্যাক্তিমানুষের গোপনীয় (যা জনস্বার্থের বিষয় নয়) এমন বিষয় আড়িপাতায় সংশ্লিষ্ট ছিল। এছাড়াও নিউজ অব দ্য ওর্য়াল্ড অগণিত মানুষের ফোন রেকর্ড করে জীবন বিপন্ন করেছিল। যার প্রমাণ মিলি ডোলার নামে এক তরুণীর খুন।
এবং নিউজ অব দ্য ওর্য়াল্ড ঐ তরুনীর মা-বাবাকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। আর ’আমার দেশ’ এক্ষেত্রে বিপন্ন জীবনকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল।
§বংলাদেশের আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতির বিচারাধীন বিষয়ে বাইরের কারো সাথে আলাপ-আলোচনা কতটুকু বিধিসম্মত সে কথা কেউ এখনো প্রশ্ন করে নি। মাহমুদ মেননের কি এই প্রশ্ন একবারও কি জেগেছিল???
§আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর অধীনে বিচারাধীন একটি গোপনীয় বিষয়ে বিচারপতি ১৭ ঘন্টা আলোপ আলোপনা করেছে। দুইশ’রও বেশি ইমেইল আদান-প্রদান হল।
এটা কি দোষের নয়??? তাহলে বিচারাধীন বিষয়ে আদালতের গোপনীয়তা কোথায়?
§মাহমুদ মেননের চোখে ১৭ ঘন্টা কথপোকথন শুধুই ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা অনেকটা গল্পগুজব। বিচারাধীন কোন বিষয়ে ১৭ ঘন্টা আলাপ কি শুধুই কথোপকথন??? এমনকি যে আলাপে রায়ের ড্রাফটের সার্বিক বিবরণ উল্লেখ থাকে, পঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও আলোচনা সেটাও কি শুধু কথোপকথন??
§স্কাইপি কথোপকথনটি সম্পর্কে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ববিখ্যাত দ্য ইকোনোমিস্ট। পরবর্তীতে দ্য ইকোনোমিস্ট কথোপকথনও প্রকাশ করে। একইসাথে কথোপকথনটি এডিটর’স নোটে প্রকাশ করার কারণ উল্লেখ করে। মাহমুদ মেননের কি এইসব খবর অবগত নয়??? এছাড়াও বাংলাদেশে আমাদেরসময়.কমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বিচারপতি নাসিমের কথোপকথন প্রকাশ করেছে।
কিন্তু মাহমুদ মেনন শুধু দেখলেন আমার দেশ-এর সংবাদ। প্রশ্ন হচ্ছে, দ্য ইকোনমিস্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিড়িয়ার কথোপকথন বিষয়ে তিনি কোন কথা কেন উল্লেখ করেননি???
শেষে বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। কিন্তু বিচারের নামে প্রহসন হবে কেন???
সংবাদকর্মীদেরও জানা উচিত কোন বিষয়ে উপসংহার টানার আগে বিষয়টির বিশ্লেষণ করতে হয়। কারণ শুধু সরলীকরণ দিয়ে বস্তুনিষ্টতা প্রকাশ পাই না। আর সরলীকরণে ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও অজ্ঞতা যোগ পেলে পুরো বিষয়টি হয়ে পড়ে বস্তাপচা দুর্গন্ধযুক্ত কিছু অখাদ্য।
যে অখাদ্য সৃষ্টির কারণে মাহমুদ মেননের লেখাটি অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে বাংলানিউজ কতৃপক্ষ সরিয়ে দিতে বাধ্য হল।
লেখক: সাংবাদিক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।