আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
-তুই এখনও ঘুমাইতাছোস ?
নিশি প্রতিদিন যখন ঘুমাতে যায় মনে মনে একটা প্রার্থনা করে প্রতিদিন কার মত সকালের ঘুমটা যেন ঐ ছাগলটার ফোন না পেয়ে ভাঙ্গে ! কিন্তু প্রতিদিন সেই একই কাজ ! নিশির প্রতিদিনকার ঘুম আবীরের ফোন পেয়েই ভাঙ্গে ! আজও তাই হল !
নিশি এক চোখ খুলে দেখলো কয়টা বাজে ! আট টা বিশ ! এতো সকালে শয়তানটা ফোন দিয়েছে !
নিশি আবার চোখ বন্ধ করলো । চোখ বন্ধ করা অবস্থায় ফোন কানে নিয়ে বলল
-বল !
-আরে এখনও ঘুমাচ্ছিস ?
-কি করবো তা ! আজকে ছুটির দিন না ? ঘুমাইতে দে !
আবীর ওপাশ থেকে বলল
-আরে আমি যে কথাটা বলবো তাতে তোর ঘুম নিমিষের ভিতরে গায়েব হয়ে যাবে !
-কি ?
-বলবো ?
-দেখ আবীর ঢং করিস না । বলতে হলে বল ! না হলে আমি ফোন রেখে দিচ্ছি !!
নিশি ফোন রেখে দেয় না। নিশি খুব ভাল করেই জানে আবীর যতক্ষন না নিশিকে কথাটা বলবে ততক্ষন আবীর ওকে শান্তি দিবে না !
আবীর আবার বলল
-বলব?
-আরে বাপ ! বল !
-তোর অপু তানভীরের খোজ পেয়েছি !
নিশির বুকের ভিতরটা যেন দুম করে বেজে উঠল ।
ঠিক শুনল তো ! ততক্ষনে ওর ঘুম চলে গেছে পুরোপুরি ! নিশি বিছানার উপর এক লাফে উঠে বসল ।
বলল
-কি বললি ? আবর বল ?
আবীর বলল
-কি ন? ঠিক মত শুনতে পাস নাই । অপু তানভীরের খোজ পেয়েছি ।
-কোথায় ?
-ফেসবুকে !
-দুরররররর!!
নিশির মনে যেমন করে আশার জাগরিত হয়েছিল । তেমন করে আবার আশাটা নিভে গেল । এবার নিশিএকটু বিরক্ত হল ।
বলল
-তুই এই খবর দেওয়ার জন্য আমার ঘুম ভাঙ্গালী ? অপুকে তো আমি নিজেও ফেস বুকে পেয়েছি । ওর একটা ফেসবুক পেজ আছে না ?
-আরে নারে ? পেজ না । অপু তানভীরের ফেসবুক প্রোফাইল । ওর নিজের একাউন্ট !
-সিওর তুই ? একেবারে ১০০ পার্সেন্ট !
নিশি একটু যেন আগ্রহ বোধ করছে ! যদি নিজের একাউন্ট হয় তাহলে তো কথা নাই । তবুও নিশির মনে একটু সন্দেহ দেখা দিল ।
বলল
-তুই কিভাবে সিওর হলি ?
-আরে একাউন্ট টা খুব সিকিউর ! দেখলেই বোজাহ যায় ! আর কালক রাতে ওনার পেজে যে গল্পটা লিখেছে না সেখানে ওনার একাউন্টের লিংক আছে !
-তাই নাকি ? কই আমি তো দেখলাম না ।
-তা দেখবা কেন ? তুমি তো কেবল ওর লেখাই দেখ ! আশে পাশে কি আছে তার দিকে তোর চোখ পড়ে না । আমি বুঝি না কি পাশ তুই ঐ ফাউল লেখার ভিতর ?
-এই খবরদার ফাউল কথা বলবি না ! বাসায় আয় ! তারপর দেখছি তোকে !!
-আচ্ছা বাবা ! আসছি । কিছু বলারও উপায় নাই । হায় মাইয়া মানুষ ! যারে জীবনে দেখলি না তার জন্য কি দরদ !
-চুপ থাক !
নিশি ফোন রেখে দেয় ! আসলেই ওর ভাবতে মাঝে মাঝে অবাক লাগে ।
যে মানুষটাকে ও একদিনও দেখেনি সেই মানুষটার জন্য এতো মায়া কেন অনুভব করে ! আশ্চার্য লাগে !
অনেক ভেবেছে নিশি ছেলেটাকে নিয়ে ! কিন্তু সঠিক কোন উত্তর পায় নি । একটা কারন হতে পারে ছেলেটার গল্পের নায়িকার নাম থাকে নিশি !
এই জন্য হয়তো নিশির ভাল লাগে !
এটা একটা কারন হবে হয়তো ! কিন্তু আসল কারন আরো আছে !
অপু তানভীর গল্পে যা লেখে নিশির চিন্তা গুলো ঠিক সেই রকমই !
নিশি যে ভাবে চিন্তা করে, ও যে জিনিসটা আশা করে যে রকম স্বপ্ন দেখে অপু গল্পে ঠিক সেই ভাবেই সেই জিনিসটাই তুলে ধরে ! এটাই সব থেকে ভাল লাগে !
বাস্তব জীবনে অপু তানভীর নিশ্চই চমৎকার একজন মানুষ হবে ! অনার টিয়াপাখি নিশ্চই খুব লাকি হবেন যে এমন একজন মানুষ তাকে ভালবাসে ! কিন্তু তবুও নিশির খুব ইচ্ছা করে অপু তানভীরের সাথে কথা বলতে ।
দেখা করতে মন চায় !!
কদিন আগেও অপু তানভীর কে নিশি চিনতোও না ! আবীর একদিন ওকে অপু তানভীরের ব্লগের খোজ দেয় ! অপু তানভীরের প্রথম যে গল্পটা ও পড়েছিল গল্পটা যেন আজও ওর বুকে আটকে আছে । গল্পটার নাম ছিল আমি বৃষ্টি দেখেছি ! গল্পটা পড়ার পর কিছুক্ষন নিশি চুপ করে বসে থাকলো ! কখন যে ওর চোখ দিয়ে পান পড়তে শুরু করেছে ও নিজেই । কি যে একটা কষ্ট ওর বুকের ভিতর লেগেছিল কয়েক দিন ।
তারপর যতবারই ও গল্পটা পড়েছে ততবারই কেঁদেছে ! তারপর আস্তে আস্তে তার গল্প গুলো পড়তে লাগলো ততই যেন তার গল্পের প্রতি একটা আকর্ষন অনুভব করতে লাগলো ! ভাগ্যভাল যে অপু তানভীর প্রায় প্রতিদিনই গল্প লেখে । এখন এমন হয়ে গেছে যে একদিন তার টার গল্প না পড়লে যেন দিনটাই ঠিক মত যায় না নিশির । কি যেন একটা মিস হয়েছে মনে হয় !
নিশির এই আচরন দেখে সব থেকে বেশি বিরক্ত হয় আবীর । বলে কোন দুঃখে যে তার ব্লগের খোজ তোকে দিয়েছিলাম । তুই তো দিন দিন মেন্টাল হয়ে যাচ্ছিস !
নিশি কিছু বলে না ।
কেবলই হাসে ! কথা মনে সত্যিই । নিশি আসলেই আস্তে আস্তে অপু তানভীরের উপর কেমন যেন একটা টান অনুভব করে । কি সেই টান নিশি নিজেই তা জানে না ! কেবলই অপু তানভীরের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করে !
আবীর ল্যাপটপ নিয়ে হাজির হল কিছুক্ষনের ভিতরেই । আবীর কাছেই থাকে । কেবল দুই ব্লক দুরে ।
নিশি ততক্ষনে ফ্রেস হয়ে নিয়েছে ! আবীর বিছানার উপর বসতে বসতে বলল
-শোন ডিমটা একটু বেশি করে ভাজা দিবি ! আন্টি ডিমের কুসুমটা একদম কাঁচা রাখে !
নিশি আবীরের কথা কিছু বুঝতে পারলো না ! বলল
-মানে ? ডিম ...?
-সে কি রে ! সকাল বেলা করে তোর বাড়িতে আসলাম নাস্তা খেতে দিবি না ? তোর জন্য এতো কষ্ট করে অপু মিয়ার খোজ বের করলাম আর আমি একটু নাস্তাও আশা করতে পারি না ?
-আচ্ছা হয়েছে ! হয়েছে ! এতো ঢং করতে হবে না !
নিশি আবীরের জন্য নাস্তা প্লেট নিয়ে এসে দেখে আবীর ল্যাপটপ খুলে বসেছে । নাস্তা খেতে খেতে নিশি নিজেও ল্যাপটপ খুলে বসলো !
আবীর দেখালো
-এই দেখ অপু তানভীরের ফেসবুক প্রোফাইল ।
নিশির মনে তবুও একটু সন্দেহ রয়েই গেল । বলল
-তুই সিওর তো ?
-হুম সিওর !
-কিন্তু ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাবো কিভাবে ? উনি তো এই অপশনটা বন্ধ করে রেখেছে !
আবীর বলল
-এখানেই তো খেল । বুদ্ধি নিয়েই এসেছি ।
শোন অপু তানভীর ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট অপশনটা বন্ধ রেখেছেন তার মানে একজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড না হলে আমরা রিকোয়েষ্ট পাঠাতে পারবো না !
-এখন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড কই পাই ?
-এই দেখ ?
আবীর ল্যাপটপের স্ক্রীনে দেখালো !
-এই নামটা দেখছিস না সান রাসেল । এনি দেখ অপু তানভীরের পিকচারে কমান্ট করেছে । তারমনে এ হল তার ফ্রেন্ড ! আমরা আগে এর কাছে রিকোয়েষ্ট পাঠবো !
নিশির কেন জানি বুদ্ধিটা পছন্দ হল না । কিন্তু তবুও আবীরে কথা মত রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েই দিল সান রাসেলকে !
-এখন ?
আবীর একটু হেসে বলল
-আমার জন্য আর একটা ডিম ভেজে নিয়ে আয় ! এই টুকু পুচকে ডিম দিয়ে কি আর খাওয়া হয় নাকি ! আর শোন এক কাপ চাও নিয়ে আসিস !
নিশি একটু চিন্তিত বোধ করলো । এভাবে অপরিচিত কাউকে রিকোয়েষ্ট পাঠানো কি ঠিক হল ?
তারপর ভাবলো থাকগে ! কি আর হবে ?
খুব বেশি ঝামেলা হলে একাউন্ট ডিএকটিভ করে দিবে ! আর কি ? রাতে ঘুমানোর আগে নিশি শেষ বারের মত ফেবু চেক করতে গিয়ে দেখলো সান রাসেল ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এক্সসেপ্ট করেছে ।
ঠিক তখনই নিশির বুকে রভিতর ঢিপ ঢিপ করা শুরু হল । অপু তানভীরের প্রোফাইলে গিয়ে দেখলো সেখানে রিকোয়েষ্ট বাটন টা এসেছে !
কি করবে ?
পাঠাবে ?
না থাক !
এখন না ! কাল পাঠানো যাবে !! আবীর আসুক ওর সাথে কথা বোলেই না হয় করা যাবে ।
কিন্তু নিশির মনে কিছুতেই যেন শান্তি পাচ্ছিল না । বারবার মনে হচ্ছিল যে যদি সান রাসেল ওকে রিমুভ করে দেয় তাহলে আবার সুযোগটা হারাবে ! না আর দেরি না । নিশি আর একটুও দেরি করলো না ! পাঠিয়েই দিল ।
এর কেবল অপেক্ষা !!
নিশি ভেবেছিল রিকোয়েষ্ট পাঠানোর পর হয়তো একটু শান্তি পাবে কিন্তু এখন আবার যুক্ত হল নতুন টেনশন !
সে দেখবে তো ?
দেখলে কি ভাববে ?
নিশ্চই বেহায়া ভাবভে ! নিশ্চই এই কথা ভাববে যে কি বাজে একটা মেয়ে ? মেয়ে হয়ে আগে রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছে । টার মানে ?এই মেয়ে ভাল না । এখন নিশ্চই রিকোয়েষ্ট ডিলিট করে দিবে !!
এখন ?
নিশি ভাবলো রিকোয়েষ্ট টা ক্যানসেল করেই ফেলি !
নিশি আবার ল্যাপ্টপ অন করলো । ফেবু অন করতেই অবাক হয়ে দেখল অপু তানভীর তার রিকোয়েষ্ট এক্সসেপ্ট করেছে !
ও মাই গড !!!
এখনও অপু তানভীর অনলাইনে আছে !
ও মাই গড !!!
এখন কি করবে ?
নক করবে ? নক করলে অপু আবার কি ভাববে ?
যা ভাবে ভাবুক !
নিশিই আগেই নক করলো !
-হ্যালো !
কিছুক্ষন চুপ !
তারপর উত্তর এল
-হাই ! আমি আপনাকে চিনি ?
নিশি এখন বলবে ? চেনে ? নাকি না ? নিশি বলল
-আপনি আমকে চিনেন কি না সেটা আমি কিভাবে বলব ? তবে আমি আপনাকে খুব ভাল করে চিনি ?
-কিভাবে ?
-বলব কেন ?
কিছুক্ষন নিরবতা ! নিশি ভাবলো আবার রাগ করলো না তো !নিশি আবার লিখলো
-রাগ করলেন ?
-না রাগ করবো কেন ? তোমার প্রোফাইল দেখছিলাম ।
একেবারে আপনি থেকে তুমি ? নিশি মনে মনে ভাবলো আচ্ছা ফাজিল তো ! ওপাশ থেকে উত্তর এল
-তুমি বললাম দেখে রাগ কর নি তো ? তোমার প্রোফাইলে দেখলাম যে তুমি বয়সে আমার থেকে ছোট ! তাই !
-না রাগ করি নি !
এভাবেই কথা চলতে থাকে ।
কথা বলার সময় নিশির মনে হল যেন কত দিনের চেনা মানুষ টা ! আচ্ছা বাস্তব জীবনেও কি এমনই হবে ! কে জানে ?
আরে !!
নিশি ভাবলো ! এখনতো সে অপু তানভীরের বাস্তব জীবনেই ঢুকে পরেছে । বাস্তবেও সে তো একই রকম !
আফসুসের কথাঃ ছোট কাল থেকে শুনে এসেছি রোমান্টিক নায়ক, রোমান্টিক গায়ক আর রোমান্টিক লেখকদেরকে মেয়েরা খুবই পছন্দ করে । তাদের সাথে কথা বলতে চায় । তাদের সাথে দেখা করতে চায় !
কিন্তু হায় !
সেই কপাল কি আর আমার আছে ?
নিশিরে নিয়া কত গুলো গল্প লিখলাম ! একটা নিশিও আজ পর্যন্ত আইলো না !
যাক এই বার বুদ্ধি শিখাইয়া দিলাম যে কিভাবে আমার কাছে রিকু পাঠাইবেন !!
আমি সবসময় ফান টাইপের লেখাই লিখি । এটাও ফানের একটা অংশ ! আর কিছুনা !
কালকে ব্লগ ডে ! অনেকের অনেক রকম প্লান রয়েছে !
গত বার এই দিনটাতে আমি কুয়াকাটায় ছিলাম ।
গতবার আমি অবশ্য এই সময়ে ব্লগের উপর এতোটা আকর্ষন জন্ম নেই নি ! কিন্তু এইবার কেন জানি মনটা খারাপ লাগছে । খারাপ লাগছে কারন এইবারও থাকতে পারছি না ! কাল খুব সকালে আমাকে ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে ।
অনেকের সাথে দেখা হবে না ! কিন্তু দেখা করার ইচ্ছা ছিল ! খুব ইচ্ছা ছিল !
কিছু করার নাই ! সবাই ভাল থাকবেন !
আর ব্লগ ডে তে খুব খুব বেশি করে মজা করবেন !! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।