মো. মাসুম বিল্লাহ, মনিরামপুর থেকে: রত্নেশ্বরপুর গ্রাম। ৮৫ ঊর্ধ্ব নফর আলী এখনও ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার ভ্যানে কেউ উঠতে চায় না। জোরে চালাতে পারেন না বলে সবাই নানা কথা বলেন। বড় ছেলে হাফেজ আলী (৫০) দিনমজুর, মেজো ছেলে আবুল হোসেন (৪৬) খুলনায় রিকশা চালায়, সেজো ছেলে শাহাবুদ্দীন (৪) চৌগাছায় ভ্যান চালায়, ছোট ছেলে আবদুর রউফ (৪০)।
মেয়ে নাছিমা খাতুন গৃিহণী। ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের। বাবা ছদম গাজী (মৃত) ও মা আছিরন বিবিকে (মৃত) বলে যুদ্ধে যান তিনি। নাম লেখালেন মুজিব বাহিনীতে। উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের ডুমুরখালী গ্রামের জনৈক হাতেম আলীর সঙ্গে হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে বশিরহাট সাতচুড়া ও চাঁপাবাড়ীয়া যুদ্ধ ক্যাম্প থেকে কে. এম. শফিউল্লাহ ও ক্যাপ্টেন (পাইলট) ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ শেষ হয়।
এরপর শুরু হয় শত্রুবধের পালা। ক্যাপ্টেন ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে ঝিকরগাছার উজ্জ্বলপুর, বাকড়া, মনিরামপুরের ডুমুরখালী, রাজগঞ্জ, চণ্ডিপুর ও কেশবপুরের চিংড়া-সাগরদাঁড়ি এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ডুমুরখালী যুদ্ধের সময় ২ দিন ধরে না খাওয়া ছিলেন। তাই যুদ্ধের পরের দিন ওই অঞ্চলের তাজপুর ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রামবাসী খাবারের ব্যবস্থা করেন। এমন সময় ঝাঁপা গ্রামের বদরুদ্দিনের সঙ্গে তাদের দেখা হয়।
তারা বদরুদ্দিনকে আটকে রাখেন। কিন্তু সতীর্থ ঝাঁপা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। বদরুদ্দিন ছাড়া পেয়েই রাজগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্পে খবর দেয়। রাজাকাররা পাকিস্তানিদের সঙ্গে নিয়ে বালিয়ডাঙ্গা গ্রামে থাকা মুক্তিযোদ্ধা গৌরীপুরের জামাল উদ্দীন, হানুয়ারের জামসেদ আলী ও কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের আবদুল খালেককে হত্যা করে। তিনি বলেন, আটঘরা গ্রামের রাজাকার কমান্ডার মোবারক আলীর তার আপন ভগ্নিপতি ও ভাইকে ধরে নিয়ে বাঁধাঘাট ব্রিজের ওপর গুলি করে হত্যা, প্রতিবেশী আবদুস সালামকে নির্যাতন করে হত্যা, রাজাকার-আলবদর ও শান্তিবাহিনী মশ্বিমনগর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামে শরণার্থী নারীদের সম্ভ্রম লুটে নেয়ার দৃশ্য, সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের হারনোর লোমহর্ষক স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি।
কিন্তু বাড়ি এসে ফিরে পেলেন রাজাকারদের নির্যাতনে অর্ধমৃত পিতা-মাতা-স্ত্রী ও পুঁড়িয়ে দেয়া ভস্মীভূত ঘরবাড়ি। এবার জীবন যুদ্ধে নামলেন তিনি। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কিনলেন পুরনো একটি ভ্যান। কোনরকম মাথা গোঁজার মতো তুললেন ছনের ঘর। কয়েক বছর আগে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে উঠছেন বাগবাড়ীয়া গুচ্ছগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকে।
আর সেই থেকে চলছে এই ভ্যান। এটাই তার জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। কোন চাওয়া পাওয়া নেই তার। নফর গাজী বলেন, ‘দ্যাশ স্বাধীন করবার জন্যি যুদ্ধে গিলাম, দ্যাশ পাইছি। আগে কামলা দিয়ে (দিনমজুর) সংসার চালাতাম।
আর এহন ভ্যান চালাইয়ে খাচ্ছি। ’
Source: Manab Zamin ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।