........ সাখাওয়াত কাওসার
--> রিমান্ডে থেকেও হুঙ্কার দিলেন সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ওরফে কুলু রানা। তিনি পুলিশি রিমান্ডে থাকা চারজন গার্মেন্ট মালিকের গায়ে হাতও তুলেছেন। ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল এই পাঁচজনকে উচ্চ আদালতে নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে এ ঘটনা ঘটে।
সকালে গার্মেন্ট মালিকদের দেখামাত্রই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন রানা। প্রথমে কিছু না বললেও প্রিজন ভ্যানে তোলা মাত্রই হুঙ্কার ছাড়েন।
গার্মেন্ট মালিকদের উদ্দেশে বলেন, 'তোরা আমার বিরুদ্ধে কথা কইতাছস? বাইর হইয়া লই। তহন বুজবি। তোগো সবগুলারে দেইখ্যা লমু। কয় দিন আটকাইয়া রাখব আমারে?' কথা বলার একপর্যায়ে গার্মেন্ট মালিকদের চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন রানা। পুলিশ সদস্যরা টের পেয়ে তাকে প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে আদালতে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্য এ তথ্য জানান।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, 'তদন্তের স্বার্থে অনেক বিষয়েই মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব। ' এদিকে রানার বাবা আবদুল খালেককে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মীর শাহীন শাহ পারভেজ গতকাল দুটি মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানান। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ওয়াসিম শেখ ফৌজদারি দণ্ডবিধির মামলায় সাত দিন এবং ইমারত আইনের মামলায় ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে কোনো আইনজীবী খালেকের পক্ষে শুনানি করেননি।
অন্যদিকে রিমান্ডে থাকা সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতেমাম হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী আলম মিয়া তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করছেন, ছয় তলা ভবনের নকশা গায়েব করে ১০তলা ভবনের নকশার অনুমোদন নিয়েছিলেন রানা। সংসদ সদস্য মুরাদ জংয়ের কাছের লোক হওয়ায় তার কথায় সায় না দিয়ে উপায় ছিল না।
তবে ঘটনার আগের দিন ফাটল ধরা পড়ার বিষয়টি পৌরসভার মেয়র তাদের অবহিত করেছিলেন। যাব যাব করেও তারা আর যেতে পারেননি। রিমান্ডে থাকা গার্মেন্ট মালিক বজলুস সামাদ আদনান, মাহমুদুর রহমান তাপস, আনিসুর রহমান আনিস ও মো. আমিনুল ইসলামের দাবি, রানার কথার বাইরে তারা কোনো কথা বলতে পারতেন না। ঝুট ও চাঁদা ছাড়াও মাঝেমধ্যেই রানা ৫০০-১০০০ গেঞ্জি চাইতেন। এ অবস্থায় শীঘ্রই তারা কারখানা অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তা করছিলেন।
তবে রানা যদি মেশিনপত্র সরাতে না দেয়? এসব ভাবনাও তাদের ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রানা বলেছেন, ফাটল ধরা পড়ার পর স্থানীয় প্রকৌশলী রাজ্জাককে দিয়ে তিনি ভবনটি চেক করিয়েছিলেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন, ওই ফাটল কিছুই না। এটি একটি মামুলি বিষয়। এ বিষয়টিই গার্মেন্ট মালিকদের জানানো হয়েছিল।
কিছুক্ষণ পর রানা আবার বলেন, ধসে পড়া ভবনের মালিক তার বাবা আবদুল খালেক। মাঝেমধ্যে তিনি ভবন দেখাশোনা করতেন। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। তবে রানা যে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল ইতোমধ্যে তারা সেই প্রমাণ পেয়েছেন।
রানা প্লাজার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে।
রানার বাবা খালেক ১৩ দিনের রিমান্ডে : সাভারে ধসে পড়া ভবনের মালিক সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেককে ১৩ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মীর শাহীন শাহ আসামি খালেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় খালেকের মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে খালেকের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করতে রাজি না হওয়ায় সে নিজেই আদালতে কথা বলেন। এর আগে হাকিম নিজেই খালেকের কাছে জানতে চায় আপনার কোনো কিছু বলার আছে কি না? উত্তরে খালেক আদালতকে বলেন, বিল্ডিং বানাইছি পড়ে যাওয়ার জন্য নয়। আমরা বুয়েট থেকে লোক এনে পরীক্ষা করাই। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।