I am waiting for someone and I know she will ever come. বিজয় আসে বিজয় যায়। কিন্তু সে বিজয় কতটা মানুষের জীবন ছুঁয়ে যায় সে প্রশ্ন রয়ে যায়। তবে কাব্য, সাহিত্য, পত্রিকা ও টিভি মিডিয়া বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিজয়ের বিশেষ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায় তা কিন্তু দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়।
বিশেষ বিশেষ সময়ে দেশের মানুষ দেশাত্ববোধে জাগ্রত হয়। ষোলআনা বাঙালি হয়।
খাঁটি বাংলাদেশি হয়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। গণমাধ্যমের গণমানুষের কথা বলতে গিয়ে “বিজয়ের চেতনা বৃথা যেতে দিব না” এই ধরনের বয়ান মাঝে মাঝে গরুত্বহীন মনে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন হয় না। কারণ একালে বাস্তবতাটাই এমন যে, বর্তমান যা সেটিই বেশি গরুত্বপূর্ণ। অতীত নিয়ে ভাববার খুব বেশি অবকাশ নেই।
ভবিষ্যত ..! সে পরে দেখা যাবে।
যাইহোক, আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে আশা আছে, প্রত্যাশা আছে, আছে আশা ভঙ্গের হতাশা। অপার সম্ভাবনাও তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু কেন যেন রবি ঠাকুর আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে বলে গেলেন , “সাত কোটি বাঙালি রে হে মুগ্ধ জননী/ রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করো নি। ” তাই আজ প্রশ্ন জাগে আসলে কি বাঙালি মানুষ হয় নি..? না’কি কবি মাত্র কাল্পনিক প্রলাপ..? কাল্পনিক প্রলাপই যদি হয় তবে কিভাবে কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য ১৯২৬-১৯৪৭ সালের মধ্যে ২১ বছরের জীবদ্দশায় অমর পঙতি লিখে গেলেন, “ হিমালয় থেকে সুন্দরবন/ হঠাৎ বাংলাদেশ/ কেঁপে কেঁপে উঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে।
” অথচ তখন এটি ছিল পূর্বপাকিস্তান। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন স্বাধীন হওয়ার পর এই দেশের নাম হবে বাংলাদেশ। উদ্ভুদ বিষয় ২২ বছর আগেই সুকান্ত কিভাবে পূর্বপাকিস্থানের নামকরণ করলেন বাংলাদেশ ? তখন বাংলদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসই শুরু হয় নি ভালো করে..? তাই দ্বিধান্বিত মনে প্রশ্ন জাগে কবির লিখন কাল্পনিক নাকি ঐশ্বরিক ?
ফিরে আসি রবি ঠাকুরের কথায়। আমরা বাঙালিরা কতটা মানুষ হয়েছি তার ফিরিস্থি এখন তুলে ধরব। বায়াত্তরে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ক্ষমতা পেলেন তখন কিছু স্বার্থান্বষী মহল কৃত্রিমভাবে দেশের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে মুজিব সরকার কে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র চালায়।
মজুদকৃত খাদ্য জনগণ কে না দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়া হয়। পঁচাত্তরে মুজিবের এক নায়কতন্ত্র বাকশাল প্রশসনের সুযোগ নিয়ে খন্দকার মোশতাক, কর্নেল ফারুক, রশিদ, মেজর ডালিমের নেতৃত্বে জাতির জনককে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তর পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তো করলেন না। বরং হত্যাকারীদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত বানিয়ে অপশাসন কায়েম করেন। ধর্মীয় রাজনীতির দ্বার উন্মোচন করেন।
সেই সঙ্গে আজকের মৌলবাদী ও জঙ্গীবাদের বীজ বোপিত করেন। শয়তানি সামরিক শাসনের পালবদলে ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসীন হয়ে ৯ বছর স্বৈরতন্ত্রের জঘন্য ইতিহাস রচনা করে যান। ৯১’তে বিএনপি সরকার ক্ষমতা আসলে নৈরাজ্য, হরিলুট দলবাজি ও দলপ্রীতি কলঙ্কের দাগ একে দেয়। আর ৯৬’তে গাইবান্ধায় সারের জন্য পুলিশের গুলিতে কৃষকদের হত্যা বাঙলার ইতিহাসে নেক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেয়। একই বছর হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ুঅধীনে নির্বাচনের দাবি খালেদা তথা বিএনপি সরকারকে তা না মেনে নেওয়া; স্পষ্টতোই বিএনপির অসীম ক্ষমতার লোভকেই নির্দেশ করে।
২০১২ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যা হাসিনা ও আওয়মী লীগ সরকারের ক্ষমতা পিপাসু অপমানসিকতা নির্ভুলভাবে প্রমাণ করে। ২০০৫ সালে জঙ্গিবাহিনীর উত্থান। ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা। আহসানুল্লাহ মাস্টার কে হত্যা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা। ২০০৪ সালে ২১ আগস্টে বোমা হামলায় আইভি রহমান কে হত্যার দায় বিএনপি এড়িয়ে যেতে পারে না।
২০০৬ সালের ১/১১ এর প্রেক্ষাপট আমাদের সবারই জানা। ২ বছর অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও ফখরুদ্দিনের সময় দেশের অতি সাধারণ জনতা স্বস্তিতে না থাকলেও শান্তিতে ছিলেন এই জন্য যে , তখন কোন রাজনৈতিক নেতা, পাতি নেতার থাপর, ফাপর ও কলার ঝাকাঝাকি দেখতে হয় নি।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও দিন বদলের কথা শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনার চাপে সেসব মুখ থুবরে পড়ে আছে। ফঁসির আসামী আওয়ামী লীগ নেতার পুত্রকে রাষ্ট্রপতির জিল্লুর রহমানের ক্ষমা প্রদান, সৈয়দ আবুল হোসেন ও পদ্মা সেতু এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারি। শেয়ার বাজার পতন, শেয়ার বাজার সাথে জড়িত হোতাদের বিচার না করা।
বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর গুম। ঝালকাঠির লিমনকে নিয়ে প্রশাসনের নাটকীয় ভূমিকা। তাজরীন ফ্যাশনে আগুন ও ১১১ জনকে হত্যা। ছাত্রলীগের সহিংসতা। আবু বকর ,ফারুকের মত নিরীহ ছাত্র হত্যা।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত গরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যায়িত পাওয়া । সত্যিই আমাদের বিবেককে আহত করে। সবশেষে ঢাকার রাজপথে ছাত্রলীগ তথা পশুলীগের বেঈমানরা পথিক বিশ্বজিতকে কুপিয়ে ধূসর রঙের শার্টকে রক্তে রঞ্জিত করে নির্মম, হিং¯্র জন্তুর মত হত্যা করে। যা জাতির বিবেক কে মানবিক না পাশবিক ..? সে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। আমরা কেমন মানুষ..? কেমন সভ্য..? কেমন বাঙালি..? আমরা আমাদের ভাইদের হত্যা করছি।
মায়ের প্রগাঢ় ভালোবাসা ধূলিসাৎ করছি। বাবার লালিত স্বপ্ন নিমিষেই কবর দিচ্ছি। বোনের ছোট্র আবদারের বিনিময়ে দিচ্ছি রক্তমাখা শার্ট। আর বন্ধুকে দিচ্ছি সেই বেদনার সুর ‘কিছু কিছু নাম্বার থেকে আসবে না কোন ফোন/ কিছু কিছু গলিতে হাঁটবে না এ মন। ’
কালের পরিক্রমায় আক্ষরিক অর্থে বিজয় আসে বিজয় যায়।
আমাদের হাসায়, কাঁদায় ভালোবাসায়, উচ্ছ্বাসে উল্লাসে উদ্বেলিত করে। কিন্তু প্রকৃত বিজয় কি এসেছিল আমাদের জীবনের বসত ঘরে ?
সেই প্রকৃত বিজয় ভাবার্থের বিজয়ের খোঁজে এখনো এই দেশের মানুষ কাজ করে যায় নিরবে নিভৃতে। আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য ফেরি করে বই পড়ানোর আন্দোলন পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে। সৈয়দপুরে রঞ্জিত স্যারের অর্ধবেলায় মাদ্রসায় শিক্ষকতা আর বাকি বেলা ইট ভাটায় কাজের ব্যস্ততার খবর আমাদের আবেগাপ্লুত করে। ময়মনসিংহে এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালার রিকশা চােিলয়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাহিনি আমাদের গর্বে বুক ভরিয়ে তুলে।
মাকসুদুল আলমের ৫০০ উদ্ভিদের ছত্রাকের জীবন রহস্য আবিষ্কার এবং পাটের জিনোম সিকোন্সি আবিষ্কার বিশ্বের মঞ্চে মাথা উঁচু করে স্বদেশকে উপস্থাপন করতে তুমুল সাহস জোগায়। ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার স্বপ্ন পিছন ফিরতে নিষেধ করে। বিশ্ব ক্রিকেটে মুশফিক বাহিনীর ঝর উঠানো আমাদের স্বপ্নকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে। মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল ও ভিশন-২০২১ বাঙলি জাতির আাশাকে ব্যাপক মাত্রায় বিস্তৃত করে। এতো প্রত্যয় ও প্রাপ্তির মধ্যেও আমাদের ভয় আর সংশয় কাটে না।
যখন নারী ও শিশু ধষর্ণ, অপহরণ ও গুমের মত দু:সহ ঘটনা শুনি। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াত নেতা ও রাজাকারদের বিচার নিয়ে তালবাহানা দেখি। নব্য ধর্মের বাণিজ্যিক কারিগর ছাত্র শিবিরের রগ কাটার তা-ব দেখি। ধর্মের নামে দালালি করতে দেখি, সুবিধাবাদী ফতোয়া শুনি। কোমল মতি শিশু-কিশোরদের ধর্ম দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের মনে অতি সুকৌশলে মৌলবাদি বীজ বপণের তীক্ষè চক্রান্ত দেখি।
তখন নিরব মনেই প্রশ্ন জাগে, আমাদের জীবনে বিজয় কি ছুঁয়ে যাবে না কোন দিন…..!!!
সজিব তৌহিদ, ব্লগার ও সাংবাদিক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।