আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমন পর্ব-০১ বান্দরবান

২৮শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ০৯:৩০, আচমকা কোলে রাখা ব্যাগে একটা টান অনুভব করলাম। ক্ষণিক পরেই দেখলাম দুজন যুবক একখানা বাইকে করে আমার ব্যাগটা নিয়ে চলে যাচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে ফাঁকা রাস্তায় রিক্সায় বসে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না। । বাসস্ট্যান্ডে নামলাম।

কিছু সময় থ মেরে রইলাম, হুট করে একটা ঘটনা ঘটে গেল। কি একটা অবস্থা! সারা সন্ধ্যা কত কিছু দিয়ে ব্যাগটা গুছালাম আর ফাজিলগুলা আমার ব্যাগটা নিয়ে গেল? বাসা থেকে আম্মু বলল, যেতে হবে না, বাসায় চলে আস। ধুর ছাই! ঘর থেকে বের যখন হয়েই গেছি কাজ শেষ করে তবেই ফিরব। যাই হোক এভাবেই শুরু আমার যাত্রা বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। ১০:৩০ এ বাস ছাড়ল।

মন খারাপ, এক কাপড়ে এভাবে চলে যাচ্ছি। রাতে তো আর করার কিছু নেই তাই চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, মাঝে মাঝে বন্ধুরা টুকটাক গল্প। ও আচ্ছা আমার সফরসঙ্গীদের কথা তো বলা হলো না, আমরা ৭জন যাচ্ছি, আমি, অদ্রি, জাকি,আশরাফ,জামি,মিশু আর বাপ্পি। ০২:৩০ এ কুমিল্লা পৌঁছালাম। বাকি রাতটুকু সবাই ঘুমিয়েই পার করলাম।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দেখি চট্টগ্রাম পৌঁছে গেছি। সকাল ০৭:০০টায় বান্দরবান আমাদের বাস থামল। এবার আমারদের যেতে হবে রুমা-তে। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে রুমা-র উদ্দেশ্যে যাত্রা। পথে যেতে যেতে চারপাশের পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি মুগ্ধ হয়েই দেখছিলাম।

ঘরের বাইরে প্রথমবারের মতো বের হওয়া, যা দেখছি তাই ভালো লাগছে। প্রায় ঘন্টা দুই পর বাস থামল রুমা বাসস্ট্যান্ডে। এখানে এসে দেখলাম চাঁদের গাড়ি নামক এক বাহন। এখানে আমাদের সাথে আমাদের গাইড রিজু ভাই যোগ দিলেন। মোটামুটি ঝুলে ঝুলেই আসলাম রুমা সদরে।

এখানে সেনা সদরে রিপোর্ট করে দুপুরে খেয়ে আবার চাঁদের গাড়িতে করে প্রথম গন্তব্য বগালেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা। এদিকে আমাদের অদ্রি, আশরাফ, বাপ্পি আর মিশু গাড়ির ছাদে বসে শিয়াল হয়ে গেল। শেষের কিছু সময় আমিও ওদের সাথে শিয়াল হয়ে কাটালাম(!), বগালেকে যেতে একটা ছোট পাহাড় পাড়ি দিতে হবে, পায়ে হেঁটে অবশেষে বগালেকে পৌঁছালাম আমরা। এখানে আবার সেনা সদরে রিপোর্ট করে উঠলাম লারামের(যার বাসায় আমারা ছিলাম) কটেজে। সেদিন মোটামুটি সকলেই ক্লান্ত, বিকালটা গল্প করে, রাতে খেয়ে ঘুম।

পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়লাম সবাই। আজ যাব কেওকারাডং জয় করতে। সকালের নাস্তা সেরে হাতে লাঠি নিয়ে আমরা ৭ পর্বতারোহী আমাদের গাইডকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। সেই শুরু হাঁটার, হাঁটা আর শেষ হয় না। বেশ খানিকটা হাঁটার পর নামহীন একটা ঝর্ণার দেখা পেলাম।

আর কিছু দূর যাবার পর পড়লো চিংরি/চিংড়ি ঝর্ণা। তারপর প্রায় আর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা হেঁটে আমরা অবশেষে উঠলাম কেওকারাডং এর চূড়ায়। চারপাশের অপূর্ব সব দৃশ্য, ভাষায় বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব নয় কতটা সুন্দর! এবার গন্তব্য জাদিপাই। সেও প্রায় দেড় ঘন্টার পথ, রাস্তার একেবারে শেষ ভাগে এসে পড়লাম অদ্ভুত এক রাস্তায়, নিচে নামতে হবে প্রায় খাড়া একটা রাস্তা দিয়ে। এই জায়গাটা পার হতেই আমার সবচেয়ে বেশি ভয় লেগেছে, ২-৩ বার পা হড়কে পড়ে যাবার দশাও হয়েছিল।

যাক, কোন মতে রাস্তা নেমে দেখলাম আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণাটি। পাঁচ বালকের অর্ধনগ্ন হয়ে স্নান, পাগলামি সবকিছুই হলো। এতদিন বৃষ্টির পর খানিক সময়ের জন্য রংধনু দেখতাম কিন্তু জাদিপাই এ এসে পুরোটা সময় দেখলাম রংধনু। দিনে দিনে ফিরতে হবে তাই আর সময় না নষ্ট করে ফিরতি পথে রওনা হলাম। জাদিপাই থেকে আবার কেওকারাডং এর পথে যেতে আমার কি যে বাজে অবস্থা হয়েছিল, পা দুটো কিছুতেই চলছিল না।

খালি মনে হচ্ছিলো রাস্তাতেই শুয়ে পড়ি। কিভাবে যে অই পথ টুকু পার হয়ে এসেছি মনে পড়লে এখনও কেমন যেন লাগে, অনেক দিন মনে থাকবে এই কষ্টের কথা। কেওকারাডং এ এসে দুপুরের খাওয়া খেয়ে আবার রওনা হলাম বগালেকের পথে। ফিরতি পথেও কম হল না। যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, একটা সময় পুরো অন্ধকার এ হয়ে গেল।

সেই অন্ধকারে টর্চের আলোতে একটু একটু করে হেঁটে হেঁটে আমরা বগালেকে চলে এলাম। রাতে খেয়ে আর কোন কথা ছাড়াই সবাই ঘুম । আজ যাবার দিন। গত দুটো দিন এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। বগালেককে বিদায় জানিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছি।

আবার চাঁদের গাড়ি(উচ্চারণটা চান্দের গাড়ী হয়তো)তে করে রুমা, রুমা থেকে বান্দরবান সদর। বাকি অংশ বেশ সংক্ষিপ্ত, বিকালে এক ফাঁকে ঘুরে এলাম স্বর্ণ মন্দির থেকে। সন্ধ্যায় কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে সবাই বাসে করে আবার ঢাকার পথে রওনা। বান্দরবানের এই চার দিনের ঘোরাঘুরি আমার ক্ষুদ্র জীবনের অনেক বড় একটা সঞ্চয়। আব্বু-আম্মু তোমাদের ধন্যবাদ আমাকে এমন একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য।

যাত্রার শুরুতে একটা ব্যাগ(ফাজিলটা কেবল ব্যাগের জিনিসগুলোই নয় সাথে আর একটা মূল্যবান জিনিস নিয়ে গেছে) আর ফিরতি পথে একপাটি জুতো হারিয়ে এসেছি যদিও কিন্তু প্রাপ্তির পাল্লাটা অনেক ভারি করে নিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতে এমন আর কিছু সুযোগের অপেক্ষায়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।