রবি শংকর একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ যিনি সেতারবাদনে কিংবদন্তীতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। ভারতীয় সঙ্গীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন। রবি শংকর দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক কর্মজীবনের জন্য গিনেস রেকর্ডের অধিকারী। তাঁর পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী। তার আদি পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায়।
রবি শংকর ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবি শংকর বড় ভাইয়ের নাঁচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক। ঐ বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- "তরুণ সঙ্গীতজ্ঞদের উদ্দেশে আপনি কী উপদেশ দেবেন?" তিনি উত্তরে বলেছিলেন-আমি তাদের উপদেশ দেব না, তাদের কাছ থেকে শিখব। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় আসছেন পণ্ডিত রবি শংকর।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিখ্যাত এই সেতারশিল্পী। রবি শংকরের মেয়ে আনুস্কা শংকরও একজন সেতার বাদক। রবি শংকরের অপর মেয়ে নোরা জোন্স একজন অস্কার উইনার পপ-গায়িকা। ১৯৯৮ সালে সড়ক ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়ন সংক্রান্ত এক গবেষণার কাজে আমি গোটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোতে ছয় মাস অবস্থানকালে পন্ডিৎ রবি শংকরের কালিয়ার বাড়িতে তিন রাত অবস্থান করেছিলাম।
একুশ বছর বয়েসে রবি শংকর তাঁর গুরু (যাঁকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন।
এই বিয়েতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শংকরের জন্ম হয়। কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়। ১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শংকরের সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। ১৯৪৫ সালের মধ্যে রবি শংকর সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান। ।
তিনি সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সঙ্গীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
রবি শংকর সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজি ‘পথের পাঁচালি’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬) এবং ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯)-তে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি `গান্ধী' ছবির গানের জন্যে এ্যাকাডেমী এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রবি শংকর `কাবুলিওয়ালা' ছবির গানের জন্যে সিলভার পদক লাভ করেন। ১৯৬২ সালে পান সঙ্গীত নাটক একাডেমী পদক।
১৯৪৯ সালে রবি শংকর দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে বিটলস্-এর জর্জ হ্যারিসনের সাথে যোগাযোগের আগে থেকেই তিনি সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা ও তার প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি জ্যাজ সঙ্গীত, পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রচার ও মানবিক সহায়তার জন্য জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন। পণ্ডিত রবি শংকরই মূলতঃ এই অনুষ্ঠানের জন্য জর্জ হ্যারিসনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
১১ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। কয়েক বৎসর যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।