আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -আপনের চশমাডা এমুন লাল ক্যান ?
আসলেই তো আমার চশমাটা এমনলাল কেন ? যে দেখছে সেই বলছে ?
পিল্টুর এমন প্রশ্নের কোন উত্তর চট করেই দিতে পারলাম না । কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম । পিচ্চিটা সেই কখন থেকে আমার সাথে রয়েছে । বলতে গেলে এই পিচ্চিটার জন্যই আমার সময়টা চমৎকার কেটে যাচ্ছে । তা না হলে এতো সময় ধরে এই যাত্রী ছাওনিতে একা একা বসে থাকাটা বেশ কষ্টকর হয়ে যেত ।
আমি আবার ঘড়ির দিকে তাকালাম ।
প্রায় সময় হয়ে এসেছে । সে যে কোন সময় আসতে পারে ।
আমি পিল্টুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোর পছন্দ হইছে ?
পিল্টু তার হলুদ দাঁত বের করে হাসলো ।
-হ! হুরুদের মত লাগতাছে ।
-কোন হুরু ?
পিল্টু আবার দাঁত বের করে হাসলো । তার একটু পরেই আবার গভীর চিন্তায় ডুবে গেল ।
আমাকে কোন হিরুর মত লাগতাছে সেটা বের করার চেষ্টায় আছে । কিন্তু মনে হয় নাম বের করতে পারতাছে না !
একটু পরে বলল
-ঐ যে আছে না । জলীল হিরু !!
-কসকি মমিন ?? অনন্ত জলীল !
আমি কিছুক্ষন পিল্টুর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম ! হাসতে হাসতেই বললাম
-এই ।
তার কি আমার মত দাড়ি আছে নাকি ?
-হ ! তাইলে হের মতন না !
-কার মতন ?
-জানি না । হিহিহিহি !
এই বলেই পিল্টু দৌড় দিল যেন খুব একটু লজ্জা পেয়েছে এমন কিছু !
এই যাত্রী ছাওনিতে বেশ কিছুক্ষন ধরেই অপেক্ষা করছি ! যখনই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম একা একা বসে থাকতে থাকতে, তখনই পিল্টু এসে হাজির ।
কাধে একটা বস্তা !
টোকাই ! আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । আমার চোখে একটা বাহারী রংয়ের চশমা ! একটু শখ করে কিনেছিলাম কয়েকদিন আগে । চশমাটা পরলে আমার গতানুগতিক লুকটা একটু বদলে যায় ।
আর এই গাও গ্রামে যেই আমাকে দেখছে একটু যেন অন্য চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে !
আমি তখন টোকাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি রে ? কি দেখিস ?
-আপনের চশমাডা বড়ই সৌন্দর্য !!
আমি মনে মনে হাসি ! টোকাইয়ের চেহারায় একটা বিশ্মিত এবং সাথে একটু আনন্দের ভাব রয়েছে । কত অল্পতেই না এরা আনন্দিত হয় !
-কি নাম তোর ?
-পিল্টু !
-চকলেট খাবি ?
আমার পকেটে আমি সব সময়ই কিছু চলেট রাখি ! এই জিনিসটা না হলে আমার সময় কিছুতেই কাটতে চায় না । আমি পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে দিলাম পিল্টু কে ?
পিল্টু চোখে আনন্দ তার থেকেও বেশি বিশ্ময় নিয়ে চকলেট টা নিল ! কিছুক্ষন হাতের মুঠোয় ধরে রাখলো ! তারপর আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাহলো প্যাকেটে বন্দী চকলেট খানি !
তারপর থেকেই পিল্টু আমার সাথে রয়েছে ।
আমি আবার ঘড়ির দিকে তাকালাম !
তার আগমনের সময় হল কি ?
আমি আর একবার তার আগমনের পথটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
আচ্ছা আজকে আমি তাকে চিন্তে পারবো তো ?
কতদিন দেখা হয় নাই ?
তার উপর সে আবার বোরকা পরে আসবে !
শেষবার যখন তার সাথে দেখা হয়েছিল মনে আছে একটা গোলাপী রংয়ের বোরা পরেছিল ।
মাথার স্কার্পটাও গোলাপী !
আমি কেবল বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম
-এটা কি পরেছ ?
সে হাসতে হাসতে বলল
-কেন ? সমস্যা কি ?
টিয়া খুব ভাল করেই জানতো গোলাপী রং আমার একদম পছন্দ না ! আমাকে বিরক্ত করার জন্যই মনে হয় এমনটা করেছে ও ! নোকাব দিয়ে মুখ ঢাকা ছিল তবুও সে হাসছিল সেটা বোঝা যাচ্ছিল একদম পরিস্কার । আসলে টিয়া যখনই হাসে ওর চোখ দিয়ে একটা অন্য রকম আরো ছড়ায় !
সেই আলো যখন আমার চোখে এসে ধাক্কা মারে আমি কেমন যেন হয়ে যাই ! আগে ভাবতাম কি আছে ঐ হাসি তে ?
এমন তো না যে টিয়ার ঠোট খুব সুন্দর । কিংবা ওর দাঁত গল্পের নায়িকার মত মুক্ত দিয়ে বাঁধানো ! তাহলে ওর হাসি এমন পাগল করা কেন ?
অনেক দিন এই প্রশ্নের উত্তর পাই নি !
প্রায়ই ওকে জিজ্ঞেস করতাম কথাটা ! আমার কথা শুনে টিয়া আরো হাসতো !
আমি আবার পাগল হয়ে যেতাম ।
-তোমার হাসি এতো সুন্দর কেন বল তো ?
-আশ্চার্য আমি বলবো কিভাবে ?
আমি বেশ কিছুদিন বুঝতে পারি নি ওর হাসির রহস্য ! বেশ কিছুদিন পরে আমি আবিস্কার করি জিনিসটা ।
টিয়ার হাসির জন্য কেবল ওর ঠোঁট না ওর চোখ দুটোও খুব দায়ী ।
কি এক অদ্ভুদ চোখ ছিল তার ।
অদ্ভুদ সুন্দর চোখ ! আমাকে সব সময় যেন পাগল করে রাখতো ! যখন টিয়া হাসতো কেবল তার ঠোঁট হাসতো না । তার চোখও হাসতো ! আর আমি পাগল হয়ে যেতাম !
সেই হাসিই কতদিন দেখি নাই ! আবার দেখবো কিনা কে জানে ?
-আপনে কি করেন এই খানে ?
-কেন ?
পিল্টু ফিরে এসেছে । হাতে এখনও সেই চকলেট টা এখনও ধরা !
-হেই কখন থেইক্যা দেখতাছি ! খালি বইসা আছেন । আর খালি ঘড়ি দেখেন ।
-একজনের জন্য অপেক্ষা করছি !
-কেডা ?
পিল্টু প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই মনে হল আসলেই তো !!
আমি কার জন্য বসে আসি ?
সে কি হয় আমার ?
কিছু বলতে যাবো তখনই আমার বুকের ভিতর কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি হল ?
আমি আবার তার আসার সম্ভাব্য পথের দিকে তাকালাম ।
না ! এখনও সেখানে কেউ নাই । কোন মেয়ে তো নাই । কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে সে আসতেছে ?
চোখ দেখে নি তবুও আমি মোটা মুটি নিশ্চিত সে আসতেছে !
এর আগেও আমি দেখেছি এই রকম টা ! টিয়ার সাথে যতবসর দেখা করতে গেছি ততবারই এমনটা হয়েছে । ওর আসার কিছুক্ষন আগে থেকেই আমি টের পেয়ে যেতাম !
আজকেও কি সে রকম হচ্ছে ?
আমি যাত্র ছাওনিটার আর একটু ভিতরের দিকে চলে এলাম ।
চাই না টিয়া টচ করেই আমাকে দেখে ফেলুক ! আমি ওকে দেখতে এসেছি আমি দেখি ! ও যেন আমাকে না দেখুক !!
আমি অপেক্ষা করছি !
সে আসতেছে !
আমি জানি সে আসতেছে !
-মামা ভাড়া দেন !!
-কত ?
-কই যাইবেন ?
-ষ্ট্যান্ড !
-১২ টাকা দেন !
আমি টাকা দিয়ে দিলাম । বাস চলছে বেশ জোরেই ! আসার সময় অবশ্য লোক বাস গুলো এতো জোরে যায় না । ধুকতে ধুকতে এগিয়ে চলে । আর শেষ সময়ে এসে সময় পুষানোর জন্য টান দেয় জোরে ।
আমি বাসওয়ালাকে মনে মনে একটু বকে দিলাম ।
এই বেটা এতো জোরে চালাস কেন ?
জোরে চললেই বাসটা দ্রুড় পৌসে যাবে গন্তব্যে !
টিয়া নেমে যাবে !
আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবে !
কিন্তু কিছু করার নাই ! আমি যেটুকু সময় পাইছি সেই সময় টুকুতে টিয়াকে দেখতে থাকি !
আমার থেকে চার সিট আগে বসেছে টিয়া !
জানালার ধারে ।
পাশের সিট টা এখনও ফাঁকা আছে ।
গিয়ে বসবো নাকি ?
আচ্ছা এমন তো হতে পারে আম গিয়ে বসলাম ওর পাশের সিট টাতে । আর পর ওর দিকে প্রথম চোখ পরবে এমন একটা ভাব করে বলব
-আরে তুমি ? এখানে ?
টিয়াও নিশ্চই অবাক হবে !
আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে । যদিও ওর মুখ আটকালো থাকবে বোরকার নোকাবে তবু আমি ঠিক বুঝব ওর হাসি ! আমি আবার কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যাবো কোথাও !
কিন্তু না ! এমনটা হবার নয় কখনও !
টিয়া কখনই আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসবে না ! আর আমিও যেতে পারবো না ওর সামনে !
টিয়া নিজেই সে পথ বন্ধ করে দিয়েছে আগেই !
আমার এখনও সেই দিনটার কথা মনে আছে ।
ঠিক হুবাহু মনে আছে ।
সাধারনত টিয়া আমার সাথে দেখা করতে চাইতো না । ওর নানান সমস্যা থাকে ! আমিও খুব একটা চাপও দিতাম না ! ফোনে কথা বলেই শান্ত থাকি । সেদিন হটাৎ করেই আমাকে দেখা করতে বলল ! আমি একটু অবাক হয়েছিলাম বই কি ?
আমাদের দেখা হত এই রাস্তায় । মানে ও যখন অফিস থেকে বাসার দিকে যেত সেই সময়টা আমরা একসাথে যেতাম ।
কখনও রিক্সা অথবা অটো ভাড়া করে যেতাম কিছু দুর । তারপর বাসে উঠতাম । সেই দিন টিয়া একেবারে ওর বাসা পর্যন্ত অটো ভাড়া করতে বলল ! আমার মনটাই সেদিন ভাল হয়ে গেল ! এতোটা সময় ওর সাথে থাকতে পারবো এটা ভাবতেই মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল ।
কিন্তু আমি বুঝতেও পারি নি ঐ জার্নিটাই ছিল আমাদের শেষ জার্নি !!
আর কখনও ওর সাথে অটোতে কিংবা রিক্সায় উঠা হয় নি !
আর কোন দিনহবেও না হয়তো !
বাস থেমে গেল ! গন্তব্যে পোছে ! সবাই নেমে যাচ্ছে । আমি বসে আছি ।
তার নামার অপেক্ষায় আছি । সারাটা পথ জুরে তার পাশের সিট টা ফাঁকাই ছিল । আমি তবুও বসি নাই । একবার একজন বসতে গিয়েো কেন জানি বসে নাই ।
ঐ তো নেমে যাচ্ছে !
আমি নিজেকে খানিকটা লুকালাম ।
টিয়া যেন আমাকে দেখতে না পারে ।
যখন ওর জন্য বসে ছিলাম তখনও আমি এই জিনিসটাই দেখছিলাম যেন টিয়ার সাথে আমার চোখাচোখি না হয় !
যাত্রী ছাওনিতে পিল্টুর সাথে কথা বলতে বলতে টিয়াকে দেখতে পাই তখনই । আমি জানতাম আমার অনুভুতি কখনও মিথ্যা হতে পারে না । তাই নিজেকে খানিকটা আড়ালে নিয়ে নিয়েছিল ।
দুর থেকে দেখছিলাম ও বাসের জন্য অপেক্ষা করছে ! আমার বুকের ভিতরটা কাঁপছিল ।
যেমনটা কাঁপতো আগে । ও আসে পাশে থাকলেই এমন টা হয় !
আজও হচ্ছিল ।
হঠাৎ পিল্টু বলে উঠল
-আপনে কান্দেন ক্যান ?
-কই ? কাঁদবো কেন ? চোখের ভিতর কি যেন পরলো ! কাঁদছি না তো !!
একদম কাঁদছি না !
ও যখন বাসে উঠল আমি ওর পিছন পিছন উঠলাম ! পিছনের দরজা দিয়ে ! বসলাম ওর ঠিক চার সিট পিছনে । ভাগ্য ভাল যে ও একবারও পিছন ফিরে তাকায় নাই ! তাহলে হয়তো আমাকে দেখে ফেলতো !
বাসের সবাই নেমে গেছে ! আমাকেও নামতে হবে !
ঐ তো টিয়া রিক্সা ঠিক করছে ! এখনই হয়তো চোখের আড়াল চলে যাবে !
আমার অনুভুতি টা আবার বাড়তে শুরু করে । বুকের ভিতরটা কেমন যেন লাফাতে শুরু করে !
প্রত্যেকবার টিয়া চলে যাবার সময়ই এমন মনে হত !
টিয়া চলে যাচ্ছে !
আমার চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছে !!
টিয়া ঐদিন অটোর ভিতরে আমার হাত ধরে বলেছিল ওর পরের সপ্তাহে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ! আমি যেন ওকে যেতে দেই !
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে ! প্রথমে কিছু বুঝতে পারছিলাম না ! কি হচ্ছে ? কেন হচ্ছে ?
তখনই ওর হাত টা শক্ত করে ধরে বললাম
-চল এখনই বিয়ে করি !
টিয়া আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল ।
আমার থেকেও তার পরিবার তার কাছে বড় !
বড় হওয়াই উঠিৎ !
২০ মাসের প্রেমের জন্য ২০ বছরের সম্পর্ক কেন ছেড়ে দেবে ? তবুও মানতে একটু কষ্টই হচ্ছিল । একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছিল ।
এই তো সব কিছু হাতে চলে আসছিল । সব কিছু গুছিয়েও আনছিলাম । আর কটা দিন কি অপেক্ষা করা যেত না ?
টিয়া আমাকে বলেছিল যেন আমি ওর বিয়ের সময় এখানে না থাকি ! আর কোন দিন যেন ওর সামনে না আসি !
কি কারন জানতে চাইলেও সে বলে নি ।
কথা দিয়েছিলাম যে আসবো না !
কিন্তু পারি নি !
ওর বিয়ের দিনও গিয়েছলাম ওকে দেখতে !
ভেবেছিলাম শেষ বারের মত দেখি কেমন লাগে ? বউয়ের সাজে কেমন লাগে ?
আজ এতো দিন পরে আবার ওয়াদা ভাঙ্গালাম ! ওকে দেখার ইচ্ছাটা কিছুতেই দমিয়ে রাখা গেল না !
ঐ তো চলে যাচ্ছে !! রিক্সার চাকা ঘরতে শুরু করেছে । আমার বুক ধরফড়ানীটাও চরম সীমায় পৌছে এখন আবার কমতে শুরু করেছে । টিয়া যত দুরে যাবে অনুভুতি ততই কমতে শুরু করবে ! এক সময় একদমই কমে যাবে !
আমি সেই অনুভুতি শূন্য হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি !
এই সময় মোবাইলটা বেজে উঠল !! মেসেজ এসেছে !
খুলে দেখি অপরিচিত নাম্বার !!
"তুমি কাছে আসলে বুকের ভিতরটা এমন ফালায় কেন বলতে পারো ?"
আমি তাকিয়েই থাকি দুরে চলে যাওয়া রিক্সার টার দিকে ! আমার বুক ধরফড়ানী কমতে শুরু করেছে ! হয়তো ঐ দিকেও তাই !
(খানিকটা সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা গল্প টা)
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।