দমবন্ধ এক অস্থিরতায় পায়চারী করছে মিতু। বৈঠকখানার পুবের জানালা হতে দক্ষিনের জানালা পর্যন্ত প্রচন্ড অস্থিরতায় হাঁটাহাঁটি করছে সে। একবার মোবাইল স্ক্রিনটায় তার চোখ, আরেকবার স্কুলবাড়ির পাশে কোমর ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেল গাছটার দিকে। ওর এই অকারণ উদ্বেগ দেখলেই যে কেউ বুঝবে যে, সে খুব করে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। মাঝে মাঝে ভেতরবাড়ির দিকের দরজায়ও সন্তর্পনে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে সে।
উঠোনের এক কোনে বড় পাকঘরটায় রান্না করছেন মা। এই মাত্র ডাল তেলে দিলেন। পাঁচফোড়নের এক মৌমাতাল সুঘ্রান ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। তার চোখ ফাকি দেওয়া মনে হয় স্বয়ং বিধাতারও সাধ্যি নেই। তবুও মিতু সেই অসাধ্য সাধন প্রায়ই করে ফেলে।
মাঝে সাঝে ধরা খায়। তবে তা তার অসাধ্য সাধন করে ফেলার তুলনায় সেসব এ্তই কম যে মিতুর তার জন্য তেমন কোনো আফসোস নেই।
"ট্রেইন থেকে নামসি এইমাত্র। আর দশমিনিটের মধ্যে পৌছে যাবো। তুমি বৈঠকখানার জানলায় থাকবা।
মনে থাকে যেন। " এই এসএমএসটা করেছে রাতুল ২৯ মিনিট আগে অথচ এখনও কেনো যে তার টিকির দেখাটাও মিলছেনা। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড রাগ উঠছে ওর। সাথে অস্থিরতাও। আরে সেই সাত সকাল থেকেই তো নারকেলগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যাথা হয়ে গেলো ওর।
আর একবার এসএমএস করতে মোবাইলের বোতামটা টিপতেই স্কুলবাড়ির পাশ দিয়ে দেখা গেলো ব্যাগ হাতে রাতুলকে। সাথে সাথে বর্ষার মেঘ মেঘ রোদ্দুর আকাশ যেন ঝিকমিকিয়ে এক উদাস বেলা হয়ে গেলো আর কোমর ভাঙ্গা নারকেল গাছের ঝিরিঝিরি পাতাগুলো বুঝি এক ঝলক হাওয়ার টানে ঝিলমিলিয়ে হেসে উঠলো। সেউ সবুজ হাসিটা ছুয়ে গেলো মিতুর চোখে মুখে।
জানালার নীল ফুল তোলা পর্দাটা একটুখানি সরিয়ে উঁকি দিলো সে। রাতুল ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
মানে হাসছে নিশ্চয়ই কিন্তু এতদূর থেকে ওর মুখে হাসিটা ঠিক দেখা যাচ্ছে না। যদিও মিতু নিশ্চিৎভাবে জানে যে রাতুলর মুখে এখন মিটিমিটি হাসি।
এই যাহ্! হলো এইবার! কাজীচাচার পাল্লায় পড়ছে রাতুল। চাচা হাত পা নেড়ে কি কি যেন বলছে । নিশ্চয় বলছে,
- কি ব্যপার বেডা? কহন আইলা? আজ বিয়াইনে নাকি কাল হাঝবেলায়?
আর রাতুল নিশ্চয় বলছে,
- না চাচা কেবলি আইলাম।
-তা কয়দিন থাকবা? ঈদে কয়দিন ছুটি?
- ঈদের পরেই পরীক্ষা চাচা। ঈদের তিনদিন পরই যাইতে হবে। শুধু ঈদ বইলাই আসা। নাইলে আসা হইতোনা চাচা।
এসব কথোপকথন অবশ্য শোনা যাচ্ছেনা।
তবু মিতুর ইন্দ্রীয় খুব প্রখর। তাই সব বুঝে নিচ্ছে সে।
যত্তসব। কাজিচাচা এই পথে যাবার আর সময় পেলোনা। ভ্রু কুচকে ওঠে মিতুর।
রাগে গজ গজ করতে থাকে সে।
আবার হাসি ফুটে ওঠে মিতুর মুখে। কাজীচাচা হাঁটতে শুরু করেছেন । আর রাতুল এগিয়ে আসছে এই দিকে।
মিতুকে অনেক দূর থেকেই জানালায় দেখেছে সে।
জানালাটার পাশে এসে যখন ও দাঁড়ালো হঠাৎ তখন মিতুর এতক্ষনের এত অস্থিরতা কই যে পালালো আর সেখানে এসে জড়ো হলো কথা থেকে যে এক রাশ রাজ্যের লজ্জা। রাঙা হয়ে উঠলো মিতুর দু গাল। বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ আর সবুজ ওড়নায় ওকে তখন দেখাচ্ছিলো ঠিক যেন এক সতেজ কলমীলতা ফুল।
- কেমন আছো মিতু?
-ভালো। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা কেনো সে, এটা ভেবে মিতুর নিজের উপরে প্রচন্ড রাগ লাগতে শুরু করলো।
কিন্তু সেই রাগ আর লজ্জা মিলে মিশে এমন এক মুখ হলো তার যে রাতুল হেসে ফেললো।
জানালার শিক ধরা হাতটা ধরে কি যেন বলতে গেলো রাতুল। সাথেসাথেই ভেতর বাড়ি থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো।
- মিতু উ উ উ । জানালায় কি করিস এতক্ষন!
রাতুলের হাতের মধ্যে ধরা হাতটা যেন সাথে সাথে জানালার শিকসহ কেঁপে উঠলো ওর।
- আসছি মা। এখুনি....
হেসে ফেললো রাতুল। তাড়াতাড়ি বললো বিকালবেলা আমাদের বাড়িতে আসিস। ভুলিসনা যেন।
ততক্ষনে ওর হাতের মাঝে মিতুর কোমল পেলব আঙ্গুলগুলো মোচড়া মুচড়ি শুরু করে দিয়েছে।
ছেড়ে দিতেই দৌড়ে পালালো মিতু।
শব্দ করে হেসে ফেললো রাতুল আর তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
অসমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।