আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপহার

দারুণ এক উপহার পেয়ে গেছে বিরোধী দল। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। সাংগঠনিক ভাবে গুছিয়ে নেয়ার জন্য আন্দোলন খুবই উপকারী। কিন্তু হরতাল, অবরোধ এমন সব কর্মসূচীতে জনগণ এখন বিরক্ত হয়। সামনে ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা।

সব কিছু মাথায় রেখে কর্মসূচী গুলো সাজানো হয়েছিল। জামায়াতের সঙ্গে যে যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে একাত্মতা নেই তা প্রমাণের ও চেষ্টা চলছিল পাশাপাশি। একই মঞ্চে না বসা, পূর্ণ সমর্থন না দিয়ে নৈতিক সমর্থন দেয়া। খুব যে সফল হচ্ছিল বলা যায় না। বরং আন্দোলনে হঠাৎ করে জঙ্গী ভাব এর আমদানী শুরু হওয়ায় জনগণ উৎকণ্ঠিত হচ্ছিল।

অতি উৎসাহী পিকেটিং। কখনও আগের দিন থেকেই উৎপাত। গাড়ী ভাংচুর, আগুন দেওয়া, ককটেল ফাটানো এসব নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। ব্যাপারগুলো বেশিদিন করা যাবে না, সামনে আসছে এস এস সি পরীক্ষা। যে কোন সময়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আসবে।

তখন আন্দোলন করলে ব্যাপারটাকে আবার জামায়াতের জন্য আন্দোলন ভাবতে পারে জনগণ। বেশ সমস্যায় ছিল বিরোধী দল। বিরোধী নেত্রীর ভারত সফর, কিংবা মওদুদ সাহবের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছিল জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া শিথিল হতে পারে। চার থেকে বাড়িয়ে আঠারো করা হল জোট। হিসাব কিতাব শুরু হল জামায়াতকে রাখলে বেশী ভোট না বাদ দিলে।

জামায়াত যেমন মরিয়া হয়ে জঙ্গি রুপে গেছে, তাঁদের সঙ্গ হিতে বিপরীত না হয়ে দাড়ায়। এমন সব হিসাব নিকাশের ভেতর চলে আসল বিজয়ের মাস। ফলে গ্রহণযোগ্য কোন ইসু ছাড়া হরতাল, অবরোধ উল্টো ফল দিতে পারে। এমন সময় এলো দারুণ এক উপহার। বিশ্বজিৎ।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ফলে জামায়াত বলে কোন ভাবেই চালানো যাচ্ছে না। বি এন পি ও বানানো সম্ভব হচ্ছে না। মরবার আগে জোড় গলায় জানিয়েছিল ‘আমি হিন্দু। আমি রাজনীতি করি না’। সবচেয়ে বড় ব্যাপার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষটির ওপর যখন সাহসী বীর সেনারা চাপাতি আর রড হাতে ঝাপিয়ে পড়েছিল তখন এদেশের সদা জাগ্রত পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল।

ঠিকঠাক কোপ বসাতে পারছে কি না। বোধহয় ক্ষনিকের জন্য সহায়তার কথাও ভেবেছিল, ‘এভাবে না, এভাবে মারতে হয়’। ছোট্ট এই উপহারটি শতগুণ মুল্যবান হয়ে যায় মিডিয়ার কল্যাণে। প্রতিটি চ্যানেল দারুণ আকর্ষণীয় ভাবে ফুটেজ গুলো দেখাতে থাকে। পত্র পত্রিকা যেহেতু ভিডিও দেখাতে পারছে না, তাই সুন্দর কিছু ছবি পাশাপাশি বসিয়ে দারুণ জীবন্ত করে ঘটনাটি পেশ করল।

ফেসবুক, ব্লগ সবক্ষেত্রেই এখন বিশ্বজিৎ। ধিক্কার জানানোর রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সুযোগ বুঝে আমি নিজেও তাই কলম হাতে নেমে পরেছি। সবাই যখন তাকিয়েছিল এবার সরকার কি করে, তখন এলো এর চেয়েও বড় আরেক উপহার। সরকারী তরফ থেকে জানানো হল, এর দায় বি এন পি এর।

অবরোধের ডাক যেহেতু বি এন পি দিয়েছে তাই অবরোধের দিন যাই ঘটুক তা বি এন পি ই করিয়েছে। কিছু ছাত্রলীগ যদি চাপাতি ব্যবহার করেও থাকে, তাও করেছে বি এন পি র কারণে। পাশে দাঁড়ানো পুলিশ গুলো এই কাজে বাঁধা দেয় নি, কারণ বি এন পি নাখোশ হতে পারে। এরপর উপহার দিতে একে একে এগিয়ে এলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রা। জানালেন অপরাধীকে সনাক্তের চেষ্টা চলছে, এখনও কেউ ধরা পরে নি।

সকল পত্র পত্রিকা যেখানে অপরাধীদের নাম সহ দলে তাঁদের পদ পর্যন্ত জানিয়ে দিল তখনও তাঁদের চিনতে পারছিল না পুলিশ। যে কোন গতানুগতিক কথাবার্তাই এই মুহূর্তে বিরোধী দলের জন্য দারুণ এক একটি আশীর্বাদ। এই আশীর্বাদ বৃষ্টি কতক্ষণ চলবে কে জানে? এর পরের উপহার দিতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিক দের জানালেন এই কাজে ছাত্রলীগ করে নি। যারা করেছে তাঁরা বহিষ্কৃত কর্মী।

গণমাধ্যমের কল্যাণে উপহারটি এবার শতগুণ দামী হয়ে উঠলো। বহিস্কার ব্যাপারটা কবে কখন ঘটেছে এই ব্যাপারের প্রমাণ হয়তো যেকোনো মুহূর্তে দাখিলও হবে। কিন্তু জনগণের ঘৃণা যা তৈরি হওয়ার তা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই সুন্দর উপহার গুলো সাধারণতঃ নিজের পঞ্চম বর্ষে দেয়। এর আগেরবারও গণভবন নিজের নামে লেখানো, জয়নাল হাজারী কে সমর্থন করে বলা, ‘ওরা একটা লাশ ফেললে তোমরা দশটা লাশ ফেলবা’ সবই ঘটেছিল এই পঞ্চম বর্ষে।

বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও তিনি উপহার দিয়েছেন। তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করে হরতাল দেয়া, কিংবা লগি বৈঠার উপকারিতা প্রদর্শন জনগণ ভুলেনি। বিশেষ করে নতুন এই উপহারের পরে সবার স্মৃতিকে আবার জাগিয়ে দিয়েছে। এখন দেখার ব্যাপার, উপহার আরও আসছে? নাকি নিজের ভুল বুঝতে শিখেছে? ‘১১ তারিখের হরতালে কোন বাঁধা দিবে না’ একটি শুভ লক্ষণ মনে হচ্ছে। তবে বিশ্বজিৎ হত্যার অভিযুক্তদের নিয়ে কানামাছি খেলা চালাবে নাকি আত্মসমর্পণ করবে এটাই দেখার বিষয়।

একটা ব্যাপার নিশ্চিত, এই ঘটনা দেশবাসী ভুলবে না। তাঁর বড় ভাই উত্তম দাস এই হত্যার বিচার চাইবে কি চাইবে না তাঁর অপেক্ষায় নেই দেশবাসী। এই ব্যাপারে যত কালক্ষেপণ হবে উপহারটি অনেক বেশী দামী হয়ে উঠবে। বিরোধী দল আর কোন আন্দোলন না করলেও এই ঘটনা দেশবাসীর মন থেকে মুছতে পারবেন না। তাঁরা ছাত্রলীগ করতো কিনা এ তথ্য খুব জরুরী না।

জরুরী পুলিশ কত দ্রুত এদের ধরছে, কত দ্রুত এদের বিচার হচ্ছে এবং সাজা পাচ্ছে। এর যে কোন ব্যত্যয়, যদি চান করতে পারেন, তবে সেই কাজের জন্য জনগণ আপনাদের উপহার কিন্তু দেবেই। পছন্দ না হলেও সেই উপহার আপনাদের নিতে হবে। খুব ভালোভাবে ভেবে দেখুন এই কয়জন হত্যাকারীকে বাঁচাবেন? নাকি জনগণের কাছ থেকে উপহার নেবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.