আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপহার

হক কথা কমু.....

-এই, একটা সুখবর আছে। -কি? -তুমিই বল দেখি কি? -আমি কিভাবে বলল? খবর তো জানি না। -বাসায় অতিথি আসতেছে -তাহলে আজ তো অনেক ভাল খাবার হবে। এই, আজ মাছ ভাজি করবে কিন্তু। অনেক দিন খাওয়া হয় নাই।

-আরে খাদক, খাওয়ার চিন্তা বাদ দাও। ওকে ওসব খাওয়াতে হবে না। -কেন?...অতিথিকে কি না খাইয়ে রাখবে? -আরে গাঁধা, তোমার কি বাবা হওয়ার ইচ্ছা আছে? -বল কি!! দাঁড়াও এখনি আসতেছি -এখনি আসতে হবে না। এখনো তো বাবা হও নাই। মিরা।

আমার ওয়াইফ। প্রথম বাবু হওয়ার খবর এইভাবেই দিয়েছিল। খুব খুশি হয়েছিলাম। তারপর আমাদের ছোট্ট ছেলেটা একদিন দুনিয়াতে আসে। বলেছিলাম-বাবু হওয়াতে সবাই তোমাকে গিফট দিচ্ছে।

তুমি আমাকে কি দিচ্ছ? বলেছিল-গিফট কি দিব? বাবুটাই তোমার গিফট। মিরা ওর নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখল মারুফ। আমাদের আদরের ছায়ায় মারুফকে বড় করি। প্রথম যেদিন বাবা বলে ডাকে সেদিন এত খুশি হইছিলাম যেটা কোনো দিন প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মারুফের সাত বছর বয়সেই মিরা চলে যায়।

সেদিন থেকে আমার পৃথিবী শূণ্য হয়ে যায়। মিরার ভালবাসার এ উপহারের যেন কোন কষ্ট না হয় তাই আর বিয়েও করলাম না। ছেলেটাকে একা অনেক কষ্টে বড় করি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠাই। পি.এইচ.ডি ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে।

রহমান ভাইকে সেদিক খুব গর্ব নিয়ে ছেলের কথা বলেছিলাম। ছেলে দেশে অনেক বড় একটা কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করে। কয়দিন পর বিয়েও করে। বউমা একটু উচু ঘরের। আমাদের বাসাটা তার কাছে একটু বেশীই ছোট মনে হয়।

ছেলেকে তাই বড় একটা বাসা দেখার কথা বলেছিলাম। মারুফ বউমা সহ সেইখানে উঠেছিল। আমাদের ছোট বাসাটা দেখার জন্য আমিই থেকে গেলাম। কয়েক বছর পর মারুফের টাকা-পয়সার অভাব দেথা দেয়। ওর কারের লোন নাকি শোধ করতে পারছিল না।

ব্যাংক থেকে টাকার জন্য কয়েকবার নোটিশও দিয়েছিল। আমি কিছুই জানতাম না। ওর সাথে কথা অনেক কম হত। বউমা আমাকে সব জানায়। মারুফ বাসাটা ছেড়ে দিয়ে তাদের সাথে থাকতে বলে।

বাসাটা নাকি বিক্রি করবে। কিছু বলিনি। মায়া জিনিসটা খুব খারাপ। অনেক কষ্ট দেয়। আর কয়দিনই বা বাঁচব।

মরার পর তো আর কেউ বাসায় থাকবে না। তাই বিক্রি করে দিলাম। চোখে আর তেমন দেখতে পাই না। শরীরও দূর্বল হয়ে পড়েছে। বউমা আর ছেলেটা সারাদিন অফিস করে।

ঠিকমত চলতে পারিনা। দেখাশুনার লোকও নেই। তাই ছেলেটাই একদিন বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলল। অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা বলল। ঘরে বসে সেদিন নিঃশব্দে কেঁদেছি।

অনেকদিন পর কেঁদেছি। মিরা মারা যাবার পর এই প্রথম। এখন প্রতিদিনই চোখটা ভিজে থাকে। হয়ত কোনো সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার দেখানার জন্য প্রথম প্রথম ছেলে কিছু টাকা পাঠাত।

এখন কোন খবরই নেয় না। জানি না কই আছে। বুড়ো মানুষগুলোর নাকি অভিমান অনেক। না,আমি আর ছেলের উপর রাগ করি না। ঠিকই তো আছে।

এই বুড়োকে নিয়ে অনেক কষ্ট হত তাদের। এখন আরামে থাকুক। মিরা দেখ, তোমার উপহারের আর কোন অসুবিধা করছি না। তাকে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছি। আমাকে ওর আর প্রয়োজন পড়ে না।

ছোটবেলার মতো ভয় পেয়ে আর কাঁদে না। বাবার সাথে ঘুরতে যাবার জেদ ধরে না। নিজে নিজেই খাবার খেতে পারে। অনেক বড় হয়েছে সে। আমার কাজ শেষ।

এখন শুধু শুধু ঝামেলা হয়ে পরে আছি। মানুষের বিরক্তের কারণ হয়েছি। বৃদ্ধাশ্রমের এরাও খুব বিরক্ত। তাই অপেক্ষা করছি তোমার কাছে যাওয়ার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

আকাশের নিঃসঙ্গ তারা হয়ে আর তোমাকে থাকতে হবে না। ছয়তালার ছাদটাতে খুব বাতাস। আজকের জোসনাটাও অনেক সুন্দর। পুরনো দিনগুলোর মতো আজও তোমার সাথে বসে জোসনা দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে। আকাশটাকে কেমন যেন অনেক কাছাকাছি লাগছে।

অনেকদূর এসেছি। আর একটু পথ। আসছি আমি। [ পাঠকদের কাছ থেকে কমেন্ট আশা করছি... ]

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.