আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধরুন, আমি নিহত হলাম

ধরুন, আমি নিহত হলাম। তারপর কী হবে? এক্জাক্টলি আমি আমার কথা বলছি। মানে আমার নিজের দেহ এবং আত্মার কথা। নিহত হওয়ার পর আমার আত্মাটা কি আমার দেহ থেকে জুদা হয়ে বাতাসে ভাসতে পারবে? ধরুন আমার আত্মা আমার দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেলো, নিহত হওয়ার পর। আমার যাবতীয় স্মৃতি, ভালোবাসা, আবেগ, অভিমান সব কি আগের মতো থাকবে আত্মার সঙ্গে জোট বেঁধে? যদি থাকে... যদি থাকে... ঈশ্বর! আমি নিহত হলেও আমার যাবতীয় স্মৃতি, সমস্ত ভালোবাসা, আবেগ, অভিমান তুমি আমার আত্মার হস্তগত করে দিও।

এগুলোকে দেহের সঙ্গে মাটিচাপা দিও না। তোমার প্রতি আমি এই অসিয়ত করে গেলাম। ধরুন ঈশ্বর আমার অসিয়ত অনুযায়ী আমার সমস্ত অনুভূতি আমার আত্মার করায়ত্ত করে দিলো, তারপর? আত্মা যদি হাওয়ায় ভাসতে পারে, ধরুন সে ক্ষমতা আত্মাদের থাকে। তাহলে, তাহলে আত্মা প্রথম মুক্তি পেয়ে কোথায় যাবে? মায়ের কাছে? আচ্ছা বলতে পারবেন, নিহত হওয়ার ঠিক কতোক্ষণ পর আত্মা দেহ থেকে জুদা হয়? ২ মিনিট থেকে ১০ মিনিট! আমার যতোদূর ধারণা, এই ২ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে আমার নিহত হওয়ার খবর আমার মা পাবে না। আধাঘণ্টা লাগবে।

তাহলে এখনই মায়ের কাছে যাওয়া যাবে না। আরেকটু পরে ... একটু পরে...। এই ২০ মিনিট সময় কোথায় কাটানো যায়? ঐশীর বাসায় যাবো? ঐশী চুল আঁচড়াচ্ছে। আহ, সেই বিখ্যাত চুল তার। কোমর ছাড়িয়ে গেছে।

অনেকবার কাটতে চেয়েছে, আমি কাটতে দিইনি। বলেছি, বিয়ের পরে তোমার চুল দিয়ে নজরুলকে ঈর্ষাকাতর করবো- আলগা করোগো খোঁপার বাঁধন দিল অহি মেরা ফাঁস গায়ি... আমি তোমার চুলের গন্ধ পাবার আশায় চোখ বুজে নাকটা নামিয়ে আনলাম, পেলাম না। আরেকটু ঝুঁকলাম... পেলাম না। আরেকটু...। নাহ, পেলাম না।

আত্মাদের গন্ধশক্তি থাকতে নেই। গন্ধ মানুষের, আত্মা তো মানুষ না। আমি লাশ, আমি মানুষ না। ঐশী তুমি একবার দেখে এসো, আমি রাস্তায় পড়ে আছি। আমার রক্তে ভেসে যাচ্ছে কালো পিচের রাস্তা।

সুনীলের কবিতা থেকে একদিন তোমাকে বলেছিলাম- এই হাত ছুঁয়েছে ঐশীর হাত এই হাত কি কোনোদিন পাপ করতে পারে? ঐশী দেখো, সেই হাতের উপর বসে নির্দয়ভাবে রক্ত চাটছে কয়েকটি নীল মাছি! ঐশী একবার এসে তুমি আমার তাজা লাশটা দেখে যাও। মর্গের কোল্ড স্টোরেজের তুষারশুভ্র লাশটা দেখে তুমি তেমন আরাম পাবে না। এইখানে দেখো, কেমন ভরতনাট্যমের মতো আমি উদ্বাহু হয়ে আছি! কি সুন্দর মুদ্রা! ঐশী তুমি এই লাশটাকে একবার দেখে যাও, একবার দেখে যাও রাস্তার মানুষের পায়ের কাছে আমি কেমন ভদ্র শান্ত হয়ে শুয়ে আছি। ঐশী... ধরুন আমি মায়ের কাছে যাবে। আমার ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা কী হবে? আত্মা তো বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে।

কিন্তু বাতাসে তাদের গতিবেগ প্রতিঘণ্টায় সর্বোচ্চ কতো মাইল? এর একটা হিসাব খুব তাড়াতাড়ি জানতে হবে। এই হিসাবে দায়িত্ব কোন ফেরেশতার কাছে তা-ও জেনে রাখা দরকার। মায়ের কাছে যাবো...। মায়ের কাছে খবর এসেছে, লাশহীন মৃত্যুর খবর। মা কাঁদছে না, কান্নার আলাদা প্রকাশ থাকে।

এটা বিলাপও না, বিলাপের আলাদা রোদন থাকে। এটা কি? এই যে আর্তনাদ। আমি তো কখনো এটা দেখিনি। দেখবো কীভাবে? তার ছেলে তো আর এর আগে রাস্তার লাশ হয়নি। তবে এই আর্তনাদকে আমি কী বলবো? ঈশ্বর আমি একে কী বলবো? তুমি ভাষা দিয়েছো কিন্তু সে ভাষা বড়ো গরিব, ভাষা বড়ো দরিদ্র, বড়ো নিঃস্ব।

মায়ের বুকের ব্যথা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু সেটা প্রকাশের ভাষা আমি পা্চিছ না। আমি বড়ো অভাগারে মা। নিহত হয়েও তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না! আত্মা হাত বাড়িয়ে দিবে মায়ের কান্নাভেজা গালে। আত্মা মায়ের গাল ছুঁবে, অশ্রু ছুঁবে, কেবল মাকে ছুঁতে পারবে না। আত্মারা স্পর্শের মতো পুণ্য করার অধিকার রাখে না।

আত্মারা কেবল আত্মত্যাগ করতে পারে, তারা আত্মহত্যাও করতে পারে না। ধরুন আমি এই কথাগুলো মানে একজন কেবল নিহত মানুষের পক্ষ থেকে বললাম। মাননীয় .....মন্ত্রী! এই কথাগুলো এতোক্ষণ আপনাকে বললাম। হ্যাঁ, আপনাকে >  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.