আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোহাম্মাদ আশরাফুল কে নিয়ে সকল কথার জবাব

আশরাফুল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রহস্য। এমনই রহস্য যে তাঁর জন্য কলম ধরতে ইচ্ছা করে যেকোনো ক্রিকেটামোদীর। দীর্ঘদিন ক্রীড়া সাংবাদিকতার বাইরে থাকা প্রভাষ আমিন যেমন। এখন তিনি সাংবাদিকতার অন্য শাখায়, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসরণ করেন গভীর আবেগে। সেই আবেগই তাঁকে বাধ্য করেছে লিখতে-কেন আশরাফুলের এমন হলো! কেনই বা প্রায় পুরো দেশের মানুষের কাছে ভিলেন হয়ে গেলেন তিনি! যুক্তি-আবেগ-বাস্তবতা মিলিয়ে আশরাফুল-রহস্য গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে আমরা ছেপে দিচ্ছি দীর্ঘ এই লেখাটাই আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন ঘোরতর আশাবাদী সমর্থক।

এমনকি শেষ বলে ৭ রান লাগলেও আশা হারাই না�একটি নো বল আর পরের বলে ফ্রি হিট পেলেও তো জেতা সম্ভব। তবে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভালোবাসি হ�দয় দিয়ে। বাংলাদেশ হারলে সেই হ�দয়ে আঘাত লাগে ঠিকই, কষ্টও পাই, কিন্তু অনেকের মতো মাথা গরম করে ক্রিকেটারদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করি না। ইদানীং বাংলাদেশ যেমন খেলছে, তাতে আমার তো বৃহস্পতি তুঙ্গে। আগে যেমন একটি জয়ের জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে হতো, এখন সেই জয় যেন ছেলের হাতের মোয়া।

শুধু ম্যাচ জয় নয়, সিরিজ জয়, এমনকি নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তির দলকে হোয়াইটওয়াশ করাও এখন আর স্বপ্ন নয়। নিজেদের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশের এই সাফল্য অনেকের মতো আমাকেও আরো বড় স্বপ্ন দেখার ভাবালুতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কিন্তু চারদিকে যখন সাজ সাজ রব, এত স্বপ্ন, এত উৎসবমুখরতা, তখন আমার হ�দয় ঢেকে আছে বিষাদের এক গভীর চাদরে। এই বিষাদের নাম মোহাম্মদ আশরাফুল। এখন বাংলাদেশ দলে তামিম আছে, সাকিব আছে, ইনজুরি না থাকলে মাশরাফি আছে, রাজ্জাক আছে, কিন্তু একসময় এই আশরাফুলই ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের একমাত্র ম্যাচ উইনার, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।

আশরাফুল ভালো খেললেই বাংলাদেশ জিতত। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই আশরাফুলের মতো ক্রিকেটার সম্পর্কে �ম্যাচ উইনার ছিলেন� লিখতে হচ্ছে। যে বয়সে সাধারণত ক্রিকেটারদের অভিষেক হয়, সেই বয়সেই কি না আশরাফুল বিশ্বরেকর্ড করে, গোটা ক্রিকেট-বিশ্বকে মুগ্ধ করে, অধিনায়ক হয়ে, সেটা হারিয়ে দলের জায়গা নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় চলে এসেছেন। আশরাফুলকে কেমন যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতীত অতীত মনে হচ্ছে। নিজের এই লেখাটাকেও কেমন এপিটাফ-এপিটাফ লাগছে।

যার হওয়ার কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধ্র�বতারা, তাঁকেই এখন মনে হচ্ছে ধূমকেতু। আমার বিষাদের গভীরতাটাও এখানেই। নিজে একসময় ক্রীড়া সাংবাদিকতা করেছি। আশরাফুলের ক্যারিয়ার শুরুর আগেই তা ছেড়েও দিয়েছি। পরিচিত ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে আশরাফুলকে নিয়ে লেখার কথা বলতে গিয়ে বুঝেছি, আশরাফুল এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে স্পর্শকাতর নাম।

সাংবাদিকরা পয়সা খেয়ে আশরাফুলের পক্ষে লেখেন�এমন অভিযোগও উঠেছে। তবে আমি নিশ্চিত করতে চাই, আশরাফুলের সঙ্গে আমার পরিচয়ই নেই। তাই আমাকে তাঁর টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগও নেই। আমি লিখতে বসেছি, আশরাফুল যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনন্ত আক্ষেপের নাম হয়ে না থাকে, সেই তাগিদ থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্রান্তিলগ্নে আল শাহরিয়ার রোকন নামে আরেক সহজাত প্রতিভার নিদারুণ অপচয়ে এখনো অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

আসলে অভিষেক টেস্টেই সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করে আশরাফুল দর্শকদের প্রত্যাশাটা এমন জায়গায় তুলে নিয়েছেন যে, সবাই তাঁর কাছে ইনিংসে ইনিংসে সেঞ্চুরি আর বলে বলে ছক্কা চায়। বিশাল প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খেলতে নেমে আশরাফুল তা মেটাতে তো পারছেনই না, উল্টো ইদানীং রানের সঙ্গে যেন তাঁর আড়ি হয়েছে। এমনসব বাজে শট খেলে আউট হন যে, প্রবল আশরাফুলভক্তেরও মেজাজ বিগড়ে যায়। আশরাফুলের স্পর্শকাতরতা টের পাই আমার ঘরেই। আমার আট বছর বয়সী ছেলে প্রসূন আমিন বছর তিনেক আগেও আশরাফুল বলতে অজ্ঞান ছিল।

কেউ জিজ্ঞেস করলে নিজের নাম বলত মোহাম্মদ আশরাফুল, আর আমাকে অভিযোগ করত, কেন ওর নাম আশরাফুল রাখা হলো না। ঘরের দেয়ালে দেয়ালে এখনো খোদাই করা আছে আশরাফুলের নাম। সেই প্রসূন কি না আমাকে লিখতে দেখে রায় দিয়ে দিল�বিশ্বকাপে আশরাফুল থাকলে একটি ম্যাচও জিততে পারবে না বাংলাদেশ। আমি জানি, সারাদেশে সব বয়সের কোটি মানুষের আবেগও প্রসূনের সমান্তরাল। এটাও জানি, আশরাফুলকে বিশ্বকাপ দলে রাখা উচিত কি উচিত নয়, এ নিয়ে গণভোট হলে �না�র ভূমিধস বিজয় হবে।

তবু গালি খাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও আমি আশরাফুলকে ফিরে পেতে চাই। নির্বাচকদের কাছেও আশরাফুল এক স্পর্শকাতর নাম। সরাসরি তাঁকে বাদও দেয়া যায় না, আবার তাঁকে বাদ দেওয়ার যুক্তি তৈরি করে দেন আশরাফুল নিজেই। ফর্মের দোহাই দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে বাদ দিলেও জাতীয় লীগের সেরা পারফর্মার হয়েই জায়গা করে নেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে স্বভাবসুলভভাবে সুইসাইডাল আউট হতেই দ্বিতীয় কোনো সুযোগ না দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে।

এমনকি দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁকে দিয়ে পানি টানানো হয়েছে। পত্রিকায় পড়েছি, অপমানে আশরাফুল নাকি কেঁদেছেন। আশরাফুলের চেয়ে বেশি নয় নিশ্চয়ই, তবে এটা শুনে আমার মনও গভীর বেদনায় আর্দ্র হয়েছে। সামর্থ্য থাকলে আমি আইসিসির কাছে বাংলাদেশের নির্বাচকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতাম। আশরাফুলের মতো ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভার ঘাড়ে পরের ম্যাচেই বাদ পড়ার খক্ষ ঝুলিয়ে, পানি টানিয়ে আ�বিশ্বাস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পর তাঁকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা তো প্রহসন মাত্র�যেন আশরাফুলের সঙ্গে করুণা করা হচ্ছে।

এখন আশরাফুল নামে আশরাফুলের যে ছায়া মাঠে যান আর যত দ্রুত সম্ভব আউট হয়ে ফিরে আসেন, তাতে বিশ্বকাপেও এক ম্যাচ খেলার পরিণতি বরণ করতে হতে পারে তাঁকে। বাদ দেওয়ার অপেক্ষায় না থেকে আগে আশরাফুলের সমস্যাটা চিহ্নিত এবং দূর করতে হবে। বাংলাদেশের একটি নিু-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আশরাফুল নিজ প্রচেষ্টায় উঠে এসেছিলেন। তারপর তো বাকি দায়িত্ব হওয়ার কথা বোর্ডের। অল্প বয়সে খ্যাতি পেয়ে বিগড়ে গেছেন�এমন অভিযোগও তো শোনা যায়নি আশরাফুলের বিরুদ্ধে।

আশরাফুল অনুশীলনে মনোযোগী নন�এমন অভিযোগও কেউ করেনি। আশরাফুলের সব আছে আগের মতোই, শুধু আ�বিশ্বাসটাই নেই। একজন ক্রিকেটারের যদি আ�বিশ্বাসের বারুদই না থাকে, বাকি সবকিছু থাকলেও সেই কামানটা দাগবে কিভাবে? গাছের গোড়া কেটে লোক দেখানোর জন্য আগায় পানি দিলে কি আর সেই গাছ বাঁচে। দিনে দিনে আশরাফুলের আ�বিশ্বাসকে এমন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য দায়ী কে? হতে পারে কাকতালীয়, কিন্তু জেমি সিডন্স আসার পর থেকেই আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শুরু করেন আশরাফুল। সিডন্স যখন দায়িত্ব নেন, তখন আশরাফুল ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্বমানের খেলোয়াড়; বাকিদের চেয়ে অনেক এগোনো।

আমি ঠিক নিশ্চিত নই, বিষয়টি বোধ হয় সিডন্সের পছন্দ হয়নি। তাঁর হাতে তখন দুইটি অপশন ছিল�দলের বাকি ১০ জনকে আশরাফুলের পর্যায়ে তুলে নেওয়া অথবা আশরাফুলকে টেনে সাধারণদের কাতারে নামিয়ে আনা। প্রথমটি ছিল অসম্ভব। সিডন্স তাই দ্বিতীয় কাজটিই করেছেন। বার বার আশরাফুলকে বলেছেন, তুমি কিন্তু আর সবার চেয়ে আলাদা নও, সবার মতোই।

মূর্খ সিডন্স পরিসংখ্যান আর গড় দিয়ে সাধারণ মানের গড়পড়তা ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিলালেন আশরাফুলকে। চাকরি বাঁচাতে শুরুতে সিডন্সের দরকার ছিল বাংলাদেশের সম্মানজনক পরাজয় বা পরাজয়ের ব্যবধান কমানো�কালেভদ্রে একটি-দুটি জয় তো আসবেই। এটা করতে গিয়ে তিনি ম্যাচ উইনার আশরাফুলকে বাদ দিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে পারেন�এমন মিনি অলরাউন্ডার দিয়ে দল গঠন করে ফেললেন। আশরাফুল ৬ মাসে একটি ইনিংস খেলে বিশ্ব কাঁপানোর চেয়ে প্রতি ম্যাচে ৩০-৪০ করে বিপর্যয় ঠেকাতে পারে�এমনদের নিয়েই মেতে থাকলেন সিডন্স। জেমি সিডন্স আসার আগ পর্যন্ত আশরাফুলের টেকনিক ছিল নির্খুত।

আর নির্খুত টেকনিকে আগ্রাসী ব্যাটিং করতেন বলেই আশরাফুলে বুঁদ হয়ে থাকতেন তাবত বিশ্বের ক্রিকেটবোদ্ধারা। কিন্তু সিডন্স এসে তাঁর টেকনিকে নানা রকম ভুল খুঁজে পেলেন, ব্যাকলিফট ঠিক করার চেষ্টা করলেন। শট খেলায় বাধা দিলেন। হায়, সিডন্স আশরাফুল নামের সেই দৈত্যকে ঘষেমেজে আরো পরিণত করার ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে বোতলবন্দি করে নিজের চাকরি নিরাপদ করলেন। হীরাকে কাচ ভেবে ছুড়ে ফেললেন।

আসলে সব জহুরী তো আর হীরা কেটে তাঁর ঔজ্জল্য বাড়াতে পারেন না। আমার ধারণা, আশরাফুলকে সামলানোর মতো মেধাই নেই সিডন্সের। আমি একজন সমর্থক মাত্র। বিসিবিতে অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা আছেন। আমি মনে করি, আগামী বিশ্বকাপে কে অধিনায়ক হবেন, এর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি প্রশ্ন�বাংলাদেশ সেই পুরনো আশরাফুলকে পাবে কি না।

আশরাফুলকে ফিরে পেতে প্রয়োজনে বোর্ডের জরুরি মিটিং ডাকা যেতে পারে। সেই সভায় মনোবিজ্ঞানী এবং মেডিটেশন বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। প্রয়োজনে ডাকা যেতে পারে আশরাফুলকেও। আমি চাই, কেউ একজন দায়িত্ব নিয়ে ঘুমন্ত বাঘ আশরাফুলকে জাগিয়ে তুলবেন, তাঁকে সাহস দেবেন, সুযোগ দেবেন, স্বাধীনতা দেবেন, আ�বিশ্বাস ফিরিয়ে দেবেন, তাঁকে আগলে রাখবেন পরম মমতায়। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমরা পুরনো আশরাফুলকে ফিরে পেতে চাই।

এমনকি জেমি সিডন্সের বিনিময়ে হলেও। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাংলাদেশের কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ�আশরাফুল, না সিডন্স? আশরাফুল কেমন খেলোয়াড়, এটা আমার চেয়ে বোর্ডের বোদ্ধারা অনেক ভালো জানেন। সিডন্স-তত্ত্বে যদি এভাবেই আশরাফুল হারিয়েও যান, ক্ষতি কিন্তু তাঁর হবে না; ক্ষতি হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের, গোটা জাতির। এ পর্যন্ত যা করেছেন, তাতেই আশরাফুলের নাম ক্রিকেট-ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আশরাফুল যেন প্রকৃতি প্রদত্ত এক খেয়ালি প্রতিভা, ঘুমন্ত বাঘ।

যেদিন জেগে ওঠেন, সেদিন তাঁর গর্জনে কেঁপে ওঠে গোটা বিশ্ব। আশরাফুলের দিনে ধারাভাষ্যকারদের বিশেষণের ভাষা ফুরিয়ে যায়, সাংবাদিকরা রসদ পান ক্রিকেট-সাহিত্য রচনার। অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে মুরালির মতো স্বীকৃত বিশ্বসেরাদের সাধারণের পর্যায়ে নামিয়ে এনে সেঞ্চুরি করেছেন। আশরাফুলের সেরা ইনিংসগুলো অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও ইংল্যান্ডের পূর্ণ শক্তির বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে। যেন যোগ্য প্রতিপক্ষ না পেলে ব্যাট চালিয়ে মজা পেতেন না আশরাফুল।

ইদানীং আশরাফুলবিরোধীরা বলেন, এমন দিনের পর দিন সুযোগ পেলে ১০ ম্যাচে একটি ইনিংস সবাই খেলতে পারে। প্লিজ ভাইয়েরা, কালেকশনে থাকলে আশরাফুলের যেকোনো একটি ভালো ইনিংস দেখে নেবেন। আশরাফুলের ভালো ইনিংসগুলোর কোনোটাই কিন্তু ফ্লুক নয়, সবগুলোই ক্ল্যাসিক। আশরাফুলের এমন অন্তত ৫টি ইনিংসের বর্ণনা দেওয়া যাবে, যাঁর মতো একটি ইনিংস খেলতে পারলে অনেক ব্যাটসম্যানের জীবন ধন্য হয়ে যাবে। সব খেলায়, সব পেশায় দুই ঘরানার লোক থাকে�একটি ঘরানা শ্রমিকের, আরেকটি শিল্পীর।

আশরাফুল দ্বিতীয় ঘরানার। এবং এই ঘরানার ক্রিকেটারের সংখ্যা সব দেশেই কম। আশরাফুল যুগে যুগে বাংলাদেশে জ��াবে না। আবার আরেকজন আশরাফুল পেতে আমাদের কত যুগ অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে। আশরাফুল শুধু রানই করেন না, সেই সঙ্গে দর্শকদের চোখে বুলিয়ে দেন মুগ্ধতার পরশ�এত সুন্দর করেও খেলা যায়! বোদ্ধাদের মুখে শুনেছি�ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি।

কিন্তু এই আপ্তবাক্য এখন আমার কাছে হাস্যকর শোনাচ্ছে। এ দেখি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের দশা। বোদ্ধারা সব সময় বলেন মৌল ভিত্তি দেখে শেয়ার কিনতে। কিন্তু দাম বাড়ে �জেড� ক্যাটাগরির শেয়ারের। এখন বাংলাদেশ দলে তামিমকে নিজের মতো করে খেলার স্বাধীনতা দেওয়া আছে।

তামিম এখন দেশের তো বটেই, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই স্বাধীনতা তো আগে আশরাফুলের প্রাপ্য ছিল। আশরাফুলের জন্য এমন একটি লেখা লিখতে হচ্ছে�এটাই আমার জন্য অনেক কষ্টের। আশরাফুলের তো কারো করুণার পাত্র হওয়ার কথা ছিল না। হওয়ার কথা ছিল উল্টোটাই।

যতদিন খেলতে চাইবেন, ততদিনই আশরাফুলের হওয়ার কথা অটোমেটিক চয়েস। শচীন-জয়াসুরিয়ারা এই চল্লিশেও খেলে যাচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। অথচ আশরাফুলের এখন মাত্র ২৪। পরিচর্যা পেলে আশরাফুল যদি আরো ১৬ বছর খেলতে পারেন, কোথায় যাবে বাংলাদেশ, কোথায় যাবেন আশরাফুল, কে জানে? স্কাই ইজ দ্য লিমিট। আশরাফুল যখন কুঁড়ি মেলছিলেন, তখনই বাংলা ব্যাকরণে একটা নতুন সমাস চালু হয়েছিল�আশার ফুল : আশরাফুল।

পথের ধারে অবহেলায় ফোটা বুনো ফুল আশরাফুলের আজ যখন প্রস্ফুটিত হওয়ার সময় এসেছে, তাঁর সৌরভে মাতোয়ারা হওয়ার কথা গোটা বিশ্বের, তখনই তাঁর ঝরে পড়ার আশঙ্কা। দোষ কার? ফুলের, না মালির? আমার কথা হলো, আগামী বিশ্বকাপে তো আমরা টুর্নামেন্ট জেতার জন্য মাঠে নামব না। গত বিশ্বকাপের মতো একটি-দুটি বড় দলকে হারাতে পারলেই আনন্দে উদ্বাহু নাচব। তাহলে বাদ পড়ার ভয় না দেখিয়ে তাঁর মতো খেলার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে আ�বিশ্বাসী আশরাফুলকে মাঠে নামানোর ঝুঁকিটা কি নিতে পারে না আমাদের বোর্ড। ম্যাচ জেতানোর জন্য তামিম-সাকিব-মাশরাফি-রাজ্জাকরা তো রইলেনই।

বড়জোর আশরাফুলের দোষে বাংলাদেশ এক ম্যাচ আগেই বাদ পড়ে যাবে বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু যদি একটি ম্যাচেও আশরাফুল ফিরে পান নিজেকে, কতটা আনন্দদায়ক হবে তা। প্লিজ, একবার ভাবুন। জুয়ার এক দান না হয় ব্লাইন্ডেই খেলুন। অন্যদের কথা জানি না, কার্ডিফে বিশ্বসেরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫০০-১-এর দান উল্টে দেওয়া ঘোড়া আশরাফুলের নামে সর্বস্ব বাজি ধরতে আমার একবিন্দুও সংশয় নেই।

শুধু চাই সেই আশরাফুলকে। তাঁর যত সেঞ্চুরি টেস্ট রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল ১১৪ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০১ ১৫৮* ভারত চট্টগ্রাম ২০০৪ ১৩৬ শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম ২০০৬ ১২৯* শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০৭ ১০১ শ্রীলঙ্কা ঢাকা ২০০৮ ওয়ানডে রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল ১০০ অস্ট্রেলিয়া কার্ডিফ ২০০৫ ১০৯ আরব আমিরাত করাচি ২০০৮ ১০৩* জিম্বাবুয়ে বুলাওয়ে ২০০৯ ম্যান অব দ্য ম্যাচ (টেস্ট) পারফরম্যান্স প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল ২৬ ও ১১৪ শ্রীলঙ্কা কলম্বো ২০০১ ১৫৮* ও ৩ ভারত চট্টগ্রাম ২০০৪ ১৩৬ ও ১ শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম ২০০৬ ম্যান অব দ্য ম্যাচ (ওয়ানডে) পারফরম্যান্স প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল ৫২ দ. আফ্রিকা ঢাকা ২০০৩ ৫১* জিম্বাবুয়ে হারারে ২০০৪ ১০০ অস্ট্রেলিয়া কার্ডিফ ২০০৫ ২৯* বারমুডা ত্রিনিদাদ ২০০৭ ৮৭ দ. আফ্রিকা গায়ানা ২০০৭ ১০৯ আরব আমিরাত করাচি ২০০৮ ১০৩* জিম্বাবুয়ে বুলাওয়ে ২০০৯ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.