আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। বেশ কিছু হাদীস আছে যেগুলোতে বর্ণিত হয়েছে যে, যদি কেউ নিজ যুগের ইমামকে না চিনে অথবা যে ইমামের বাইয়াত তার ওপর ফরয তাঁর বাইয়াত (আনুগত্য) না করে মারা যায়, তবে তার মৃত্যু জাহেলিয়াত অর্থাৎ কুফ্র ও শির্কের ওপর হবে। অর্থাৎ সে কাফির বা মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এসব রেওয়ায়েত ও হাদীস বিভিন্ন সনদসূত্রে এবং বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লামা তাফ্তাযানী ‘শারহুল মাকাসিদ’ গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ
‘তোমরা মহান আল্লাহ্র আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূল (সা.) ও তোমাদের মধ্য হতে উলীল আমরের (কর্তৃত্বশীল নেতৃবর্গের)’- এর ব্যাখ্যায় মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন :
من مات و لم يعرف امام زمانه ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহেলিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করবে।
’ তিনি এ হাদীসকে সুনিশ্চিত ও তর্কাতীত বলেছেন এবং এ হাদীসের ভিত্তিতে উক্ত গ্রন্থে স্বীয় আলোচনার অবতারণা করেছেন। ১
আমীরে মুয়াবিয়া মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من ماة بغير امام ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি ইমামবিহীন (ইমামের আনুগত্য না করে) মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করবে। ’২
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আববাস মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من مات و ليس علي امام فميةةه جاهلية
‘যে ব্যক্তি ইমামের আনুগত্যের ওপর মৃত্যুবরণ করবে না, তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। ’৩
তিনি মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন :
من ماة مفارقا للجماعة فقد ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি জামায়াত অর্থাৎ আপামর উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে আসলে সে জাহেলিয়াতের ওপর মৃত্যুবরণ করবে। ’৪
হযরত ইবনে উমর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে আরও বর্ণনা করেছেন :
من ماة بغير امام الجماعة ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি জামায়াত অর্থাৎ আপামর উম্মাহ্র ইমামের আনুগত্য ব্যতীত মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে।
’৫
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এভাবে :
من ماة و ليس عليه امام جماعة فانّ موةه موةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার ওপর জামায়াত অর্থাৎ উম্মাহ্র ইমাম কর্তৃত্বশীল থাকবেন না তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। ’৬
মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে :
من ماة و ليس عليه امام ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার ওপর ইমাম (কর্তৃত্বশীল) থাকবেন না সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’৭
হযরত আমের ইবনে রাবীয়াহ মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من ماة و ليس عليه طاعة ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি মৃতুবরণ করে এমতাবস্থায় যে, তার ওপর (ইমামের) আনুগত্য নেই (ইমামের আনুগত্য করেনি) সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুই বরণ করবে। ’৮
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من مات و ليس في عنقه بيعة ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার গর্দানে বাইয়াত নেই সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’৯
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من مات بغير امام مات ميتة جاهلية و من نزع يدا من طاعة جاء يوم القيامة لا حجة له
‘যে ব্যক্তি ইমাম ব্যতীত (ইমামের আনুগত্য না করে) মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে।
আর যে ব্যক্তি ইমামের আনুগত্য করা থেকে হাত গুটিয়ে নেবে সে কিয়ামত দিবসে এমনভাবে পুনরুত্থিত হবে যে, তার (নাজাতপ্রাপ্তির পক্ষে) কোন প্রমাণ (হুজ্জাত) থাকবে না। ’১০
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من ماة و هو مفارق للجماعة فانّه يموة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে নিশ্চয়ই জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’১১
হযরত আবু হুরায়রা মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
من خرج من الطاعة و فارق الجماعة فماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি (ইমামের) আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসবে এবং জামায়াত থেকে পৃথক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’১২
হযরত আরফাজাহ মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
انّه ستكون هنات و هنات فمن اراد ان يفرّق امر هذه الامة و هي جميع فاضربوه بالسيف كائنا من كان
‘অচিরেই বহু বিপদাপদের উদ্ভব হবে; তাই যে ব্যক্তি এ উম্মাহ্র ঐক্য বিনষ্ট করবে তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা কর সে যে-ই হোক না কেন। ’১৩
হযরত ফুযালাহ ইবনে উবাইদ মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন :
ثلاثة لا تسأل عنهم : رجل فارق الجماعة و عصي إمامه فمات عاصيا و امة أو عبد أبق من سيّده فمات وامرأة غاب عنها زوجها و قد كفا ها و مونة الدنيا فتبرّجت بعده فلا تسأل عنهم
‘তিন ধরনের ব্যক্তির ব্যাপারে কোন প্রশ্ন কর না : ঐ ব্যক্তি যে জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও সম্পর্কচ্ছেদ করেছে এবং নিজ ইমামের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, অতঃপর বিরুদ্ধাচারী রূপেই মৃত্যুবরণ করেছে; ঐ দাসী বা দাস যে স্বীয় মালিকের অবাধ্য হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে এবং ঐ নারী যার স্বামী তার থেকে অনুপস্থিত (গায়েব) রয়েছে এবং তাকে জীবনযাপনের পর্যাপ্ত রসদ ও সম্পদও দিয়ে গেছে, অতঃপর সে (অন্য পুরুষের সামনে) স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন (প্রকাশ) করেছে; এদের সম্পর্কে কোন প্রশ্ন কর না।
’
আল হাকিম আন নিশাবুরী বলেন : ‘এ হাদীসটি শায়খাইনের (বুখারী ও মুসলিমের) শর্তানুযায়ী সহীহ। কারণ, তাঁরা দুজন এ হাদীসটির সকল রাবীর (বর্ণনাকারী) মাধ্যমে ইহতিজাজ (দলিল বা যুক্তি প্রমাণ পেশ) করেছেন, তবে এ হাদীসটি তাঁরা নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেননি; আর আমিও (হাকিম) এ হাদিসের ইল্লাৎ (হাদীসের সনদ ও মতনের ঐ দোষ-ত্রুটি ও দুর্বলতা যা বাহ্যত পরিদৃষ্ট হয় না এবং তা হাদীসশাস্ত্রবিদরাই কেবল শনাক্ত করতে সক্ষম) সম্পর্কে অবগত নই। আর আল্লামা যাহাবীও হাকিমের সাথে একমত যে, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণিত। আর তিনি (যাহাবী) বলেছেন : ‘আমি হাদীসটির ইল্লাৎ সম্পর্কে অবগত নই। ’১৪
অতএব, উপরোল্লিখিত এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, প্রতি যুগে অবশ্যই ইমাম বিদ্যমান থাকবেন যাঁকে চেনা, বিশ্বাস করা এবং আনুগত্য করা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র ওপর ফরয; আর তাঁকে না চিনে ও আনুগত্য না করে যে মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যুই হবে জাহেলিয়াত অর্থাৎ শির্ক ও কুফ্রের ওপর।
এ হাদীসের সনদ সংক্রান্ত কিছু আলোচনা
‘যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু’- এ হাদীসটি বেশ কিছু সংখ্যক সিকাহ (বিশ্বস্ত) রাবীর নিকট থেকে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাই এসব রেওয়ায়েতের সনদ সূত্র এবং এগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে বিতর্ক ও বিরূপ মন্তব্য করার সাহস কারও নেই। কারণ, এসব রেওয়ায়েত সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম, মুসনাদ, সুনান ও মুজামসহ সকল ধরনের হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে সকল মাযহাব ও ফির্কার কাছে এ রেওয়ায়েত বা হাদীসটি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। এ হাদিসের সত্যতার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ্ ঐকমত্য পোষণ করেছে।
এ হাদীস বিভিন্ন বাচনভঙ্গি ও শব্দসহ বর্ণিত হলেও এসব কিছুই একটি অর্থের দিকেই প্রত্যাগমন করে, যা হচ্ছে প্রতি যুগে মুসলিম উম্মাহ্র জন্য একজন হাদী (সুপথ প্রদর্শনকারী) ইমামের বিদ্যমান থাকার আবশ্যকতা যাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা উম্মাতের ওপর ফরয। আর মহানবী (সা.) এ হাদীসের দ্বারা এ কাঙিক্ষত অর্থটি বুঝিয়েছেন।
বিশিষ্ট মুফাস্সির ফখরুদ্দীন আল রাযী প্রণীত আল মাসায়েল আল খামসুন গ্রন্থে হাদীসটি একটু ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন :
من مات و لم يعرف إمام زمانه فليمت إن شاء يهوديا وإن شاء نصرانيا
‘যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে, সে যদি চায় তাহলে ইয়াহুদী হয়ে অথবা (যদি চায়) খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করুক। ’১৫
তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করলে এ হাদীসটি যে মুতাওয়াতির (অকাট্যসূত্রে বর্ণিত) তা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়।
আল্লামা আল আলবানী তাঁর ‘সিলসিলাতুল আহাদীস আয যাঈফাহ’ গ্রন্থে ‘যে ব্যক্তি তার নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে বা তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু’- এ হাদীসকে অস্বীকার করেছেন অর্থাৎ মাওযু (বানোয়াট) বলেছেন। অথচ এ হাদীসের ব্যাপরে তাঁর এ অভিমত আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ আলেম ও হাদীসবেত্তাদের অভিমতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে আল্লামা তাফতাযানীর মত আলেমদের অভিমত এক্ষেত্রে তুলে ধরেছি। আর এ হাদীসের সত্যতার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ্র ঐকমত্য পোষণ আল্লামা আলবানীর এ হাদীস সংক্রান্ত অভিমত খন্ডন ও তার অসারতা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। তাই একক ব্যক্তি হিসেবে আল্লামা আলবানীর অভিমত হাদীসটির সত্যতা ও তাওয়াতুরের (অকাট্য বর্ণনার) মোটেও ক্ষতিসাধন করে না।
উপসংহার
যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে… – এ হাদীসের আলোকে ইমাম সংক্রান্ত জ্ঞান ও পরিচিতি অর্জন করা হচ্ছে ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ভূমিকা বা পূর্বশর্ত স্বরূপ। তাই উক্ত হাদীস আসলে যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের ওপর- এ বিষয়ের প্রতি দিকনির্দেশ করে। এ হাদীসে বর্ণিত নিজ যুগের ইমাম বলতে আবশ্যকভাবে সত্য ইমাম, অত্যাচারী বাতিল ইমাম নির্বিশেষে যে কোন ইমামকে বোঝানো হয়নি, বরং এখানে ইমামের কাঙিক্ষত অর্থ হবে নিজ যুগের সত্য ইমাম- নিজ যুগের বৈধ অর্থাৎ শরীয়ত স্বীকৃত ইমাম বা মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নিযুক্ত যুগের ইমাম।
তাই যে ব্যক্তি তার নিজ যুগের সত্য, শরীয়ত স্বীকৃত ও মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নিযুক্ত ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে সে আসলে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। আর তা না হলে যদি যুগের ইমাম বলতে মুসলমানদের ওপর কর্তৃত্বশীল যে কোন শাসককে (যেমন মুয়াবিয়া, ইয়াযীদ, মারওয়ান, তৈমুর লং এবং সমসাময়িক কালের শাসকবর্গ, যেমন জর্দানের বাদশাহ হোসেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুন নাসের বা আনোয়ার সাদাত, মরক্কোর বাদশাহ হাসান, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন, নব্য তুর্কী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতা তুর্ক, ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক জেনারেল সুহার্তো প্রমুখকে) বোঝায় তাহলে এ ধরনের শাসকবর্গ সংক্রান্ত জ্ঞান ও পরিচিতি অর্জন এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য অবশ্যই ফরয হবে না।
আর এ ধরনের শাসকবর্গকে না চিনে এবং বিশ্বাস ও আনুগত্য না করে মৃত্যুবরণ করলে তা যেমন জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে না; তেমনি তা পরকালে জাহান্নামে প্রবেশ করার কারণও হবে না।
সুতরাং যে ইমামের জ্ঞান ও পরিচিতি লাভ করা ফরয তিনি অবশ্যই হবেন সত্য ইমাম। আর তখনই প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয হবে এ ইমামের ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন এবং তার নিজের ও স্রষ্টার মাঝে তাঁকে (ইমাম) হুজ্জাত (হেদায়াত ও নাজাত প্রাপ্তির দলীল) হিসেবে গণ্য করা; আর যদি সে এ ধরনের ইমামের ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের ওপর। অর্থাৎ যদি চায় তো সে ইয়াহুদী অথবা খ্রিস্টান হয়েই মৃত্যুবরণ করুক। আর এর অর্থ হচ্ছে, সত্য, বৈধ ও মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নিযুক্ত ইমামের ইমামতে বিশ্বাসী না হয়ে এবং তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যুবরণ করলে পরিপূর্ণ মুসলিম ও মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করা যাবে না।
আর মহান আল্লাহ্র পবিত্র কুরআন পূর্ণ মুত্তাকী এবং সত্যিকার মুসলিম-মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার নির্দেশ১৬দেওয়াসহ মহান আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং উলিল আমর অর্থাৎ নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারীদের (ইমামদের) নিরঙ্কুশ আনুগত্য১৭ এবং কুফরী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম১৮ এবং তাগুত বর্জন ও পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯
ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর যিনি হযরত আলী (আ.)-এর বাইয়াত করেননি, অথচ তিনি উমাইয়্যা বংশীয় খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের উদ্দেশ্যে বাইয়াত করার জন্য রাতের বেলা হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বাসভবনে যান যাতে ঐ রাতটিও যেন তিনি ইমামবিহীন না কাটান। আর তাঁর এটা করার উদ্দেশ্যই ছিল এ হাদীসের ভিত্তিতে, যেমনটি তিনি নিজেও বলেছেন। ইবনে উমর, হাজ্জাজের কাছে গিয়ে তার কাছে খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের উদ্দেশ্যে বাইয়াত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছিলেন : আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি : من ماة و لا إمام له ماة ميةة جاهلية ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার কোন ইমাম নেই সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’ কিন্তু হাজ্জাজ, আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরকে হেয় ও অবজ্ঞা করে পা বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল : ‘আমার পা ধরে বাইয়াত কর।
’ আর ইবনে উমরও হাজ্জাজের পা ধরে বাইয়াত করেছিলেন!
আর এটাই স্বাভাবিক যে, যে ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-এর মত ব্যক্তির বাইয়াত করা থেকে বিরত থাকে, পরিণামে একদিন তাকে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের মত জালেম শাসকের কাছেই এভাবে বাইয়াত করতে হবে।
হাররার ঘটনা বা মদীনার ঐতিহাসিক হাররার যুদ্ধে পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ তিন দিনের জন্য পবিত্র মদীনা নগরীকে তার সেনাবাহিনীর জন্য হালাল অর্থাৎ যা ইচ্ছা তার করার অনুমতি দিয়েছিল। এ অনুমতি পেয়ে ইয়াযীদের সেনাবাহিনী পবিত্র নগরীতে ব্যাপক গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। দশ হাজারের অধিক সাধারণ মুসলমানকে তারা হত্যা করেছিল। শত শত সাহাবী ও তাবেয়ী ইয়াযীদী বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
অসংখ্য কুমারী মেয়ের সতীত্ব হানি করেছিল এই হানাদার বাহিনী এবং এ ঘটনার পর মদীনার অগণিত মহিলা শত শত জারজ সন্তানও জন্মদান করেছিল। আর এ ঘটনা ঘটেছিল কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর হৃদয়বিদারক শাহাদাতের ঠিক এক বছর পর।
এ হাররার যুদ্ধের সময় হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর একদা হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুতীর কাছে গমন করলে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুতী বললেন : ‘আবু আবদির রহমানের (আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর) বসার জন্য একটি তাকিয়া (গদি বা বালিশ) নিয়ে এস। ’ কিন্তু তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর তাঁকে বললেন, ‘আমি তোমার কাছে বসার জন্য আসিনি। আমি তোমার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করার জন্য এসেছি।
আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি :
من خلع يدا من طاعة لقي الله يوم القيامة لا حجّة له و من مات و ليس في عنقه بيعة ماة ميةة جاهلية
‘যে ব্যক্তি (ইমামের) আনুগত্য হাত গুটিয়ে নেবে সে (কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ্কে সাক্ষাৎ করবে এমতাবস্থায় যে, তার কোন হুজ্জাত (নাজাতপ্রাপ্তির দলিল বা উপায়) বিদ্যমান থাকবে না। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার গর্দানে কোন বাইয়াত নেই (অর্থাৎ সে ইমামের বাইয়াত ও আনুগত্য করেনি) সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করবে। ’ (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ)
তাই প্রতি যুগের ইমামকে চেনা, তাঁর ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন এবং তাঁর বাইয়াত ও আনুগত্যের ওপর অটল থাকা যে ফরয তা একান্ত সুনিশ্চিত ও সন্দেহের ঊর্ধ্বে। আর অজস্র হাদীস এবং সাহাবী ও মুসলিম উম্মাহর সীরাত ও অনুসৃত নীতির দ্বারাও এ বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হয়। আমরা এখানে উদাহরণ হিসেবে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের প্রসঙ্গই শুধু উল্লেখ করলাম যিনি হচ্ছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কাছে নেতৃস্থানীয় সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত।
তবে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি হযরত আলী (আ.)-এর বাইয়াত এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন সিরীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য আফসোস করতেন। অধিক অবগতির জন্য তাবাকাতে ইবনে সা’দ, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ১৮৫-১৮৬; আল হাকিম আন নিশাবুরী প্রণীত আল মুসতাদরাক, ৩য় খন্ড, পৃ. ৫৫৮ ও অন্যান্য গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বা অন্য কারও ব্যাপারে আলোচনা করা আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটি যুগে মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সত্য ইমাম অবশ্যই থাকবেন, তাঁর ইমামতে বিশ্বাস এবং তাঁকে মহান আল্লাহ্ ও উম্মাহ্র মাঝে হুজ্জাত বলে গণ্য করা মুসলমানদের ওপর ফরয। এ বিষয়টি যে জরুরি ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত সেক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের সীরাত থেকে কেবল নমুনা পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
এ হাদীসের পাশাপাশি হযরত আলী (আ.)-এর নিমেণাক্ত প্রসিদ্ধ বাণী সবিশেষে প্রণিধানযোগ্য যার ওপর মুসলিম উম্মাহ্র ঐকমত্য রয়েছে :
إنّ الأرض لا تخلو من قائم لله بحجّة:
‘বিশ্বজগৎ মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুজ্জাত (ঐশী দলিল-প্রমাণ সহকারে দন্ডায়মান ব্যক্তি অর্থাৎ ইমাম) বিহীন থাকতে পারে না। ’
হযরত আলী (আ.) বলেছেন :
اللهمّ بلي، لا تخلو الارض من قائم لله بحجّة إمّا ظاهرا مشهورا و إمّا خائفا مغمورا لئلا تبطل حجج الله بيناته
‘হে আল্লাহ্! হ্যাঁ, অবশ্যই নিখিল বিশ্ব মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুজ্জাত (ঐশী দলীল-প্রমাণ) সহকারে দন্ডায়মান ব্যক্তি (কায়েম অর্থাৎ ইমাম) বিহীন থাকতে পারে না। হতে পারে তিনি (ইমাম) প্রকাশ্যে বিদ্যমান ও মশহুর (অর্থাৎ সবার কাছে পরিচিতি ও প্রসিদ্ধ), নতুবা ভীত ও গোপন অর্থাৎ লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন যাতে মহান আল্লাহ্র সুস্পষ্ট ঐশী প্রমাণাদি বাতিল প্রতিপন্ন না হয়। ’
ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : ‘শেষ যুগে অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে এ উম্মাহ্র এক ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) পেছনে হযরত ঈসা (আ.)-এর নামায আদায় করার মধ্যে ‘সৃষ্টিজগৎ মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে হুজ্জাত (ঐশী দলীল প্রমাণ) সহকারে দন্ডায়মান (কায়েম) ব্যক্তি (অর্থাৎ ইমাম) বিহীন থাকতে পারে না’ – এ সত্য কথার প্রমাণ মেলে। ২০
ইবনে আবীল হাদীদ হযরত আলীর উক্ত বাণী ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন : ‘যাতে কোন যুগই মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ভয়ভীতি থেকে বান্দাদের নিরাপত্তা দানকারী ও তাদের ওপর কর্তৃত্বশীলবিহীন থাকতে পারে না।
তবে আমাদেরআলেম এই ‘কায়েম লিল্লাহি বি হুজ্জাহ’-কে আবদাল২১ অর্থে গ্রহণ করেছেন। ’
অথচ ইবনে আবীল হাদীদের সহযোগীরা সম্ভবত হুজ্জাত শব্দের অর্থের ব্যাপারে উদাসীন ও অসচেতন থেকেই গেছেন। কারণ, মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হুজ্জাত সহকারে দন্ডায়মান যিনি, তিনি অবশ্যই মাসূম (নিষ্পাপ) হবেন। আর কোন ব্যক্তিই আবদালদের মাসূম বলেনি।
আর ইবনে আবীল হাদীদ ও তাঁর সহযোগীরা ‘যাতে মহান আল্লাহ্র ঐশী ও সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণাদি বাতিল হয়ে না যায়’ – এ বাক্যের অর্থের ব্যাপারেও উদাসীন ও অসচেতন থেকে গেছেন।
কারণ, মহানবী (সা.)-এর পরে একমাত্র নিষ্পাপ ইমাম ব্যতীত তা বাস্তবায়িত হওয়া কখনই সম্ভব নয়। তাই ইবনে আবীল হাদীদ প্রথমে যে স্বীকারোক্তি করেছেন সেটাই সত্য।
তথ্যসূত্র :
১. শারহুল মাকাসিদ, ৫ম খন্ড, পৃ. ২৩৯
২. মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৯৬; হুলইয়াতুল আউলিয়া, ৩য় খন্ড, পৃ. ২২৪ (এ হাদীসটি যে সহীহ তা এখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে); আল মুজামুল কাবীর, ১৯তম খন্ড, পৃ. ৩৮৮; মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ (দারুল ফিকর কর্তৃক প্রকাশিত), ৫ম খন্ড, পৃ. ৩৯৩; কানযুল উম্মাল, ১ম খন্ড, পৃ. ১০৩ এবং ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৬৫।
৩. ইতহাফ সাদাতিল মুত্তাকীন, ২য় খন্ড, পৃ. ২৩০ ও ২৩১।
৪. আল ফকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, খতীব আল বাগদাদী প্রণীত, প্রকাশক : দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, বৈরুত, লেবানন, ১ম খন্ড, পৃ. ১৬৫; মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড, পৃ. ৭০, ৯৩, ৯৭, ১২৩; আল মুজামুল কাবীর (ইরানে মুদ্রিত), ১২তম খন্ড, পৃ. ৩৩৫; কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৬৫, হাদীস নং ১৪৮৬২; আত তারীখুল কাবীর, ১ম খন্ড, পৃ. ৩২৫।
৫. আল মুজামুল কাবীর, প্রকাশক : দার ইহয়ায়িত তুরাস আল আরাবী, বৈরুত, লেবানন, ১২তম খন্ড, পৃ. ৩৩৭; ইতহাফ সাদাতিল মুত্তাকীন, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৩৩৪।
৬. মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, আল হাকিম আন নিশাবুরী প্রণীত, ১ম খন্ড, পৃ. ২১৯, হাদীস নং ৪০৭, প্রকাশক : দারুল ফিক্র, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ, ১৪২২ হি. (আল্লামা যাহাবী তাঁর আত তালখীস গ্রন্থে এ হাদীসটি সনদ ও মতন সহকারে উল্লেখ করেছেন; তবে তিনি সহীহ অথবা দুর্বল হবার ব্যাপারে কোনরূপ মন্তব্য করা থেকে নীরব থেকেছেন), ইতহাফ সাদাতিল মুত্তাকীন, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ১২২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, (কুদ্সী প্রকাশিত), ৫ম খন্ড, পৃ. ২২৫; আদ দুররুল মানসূর, প্রকাশক : ইসলামিয়া প্রকাশনী, তেহরান, ২য় খন্ড, পৃ. ৬১।
৭. ইবনে আবী আসেম প্রণীত আস সুন্নাহ, প্রকাশক : আল মাকতাব আল ইসলামী, ২য় খন্ড, পৃ. ৫০৩; মাজমাউয্্ যাওয়ায়েদ, ৫ম খন্ড, পৃ. ৪০৫।
৮. মাজমাউয্্ যাওয়ায়েদ, ৫ম খন্ড, পৃ. ৪০৩।
৯. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, হাদীস নং ৪৮১৪, পৃ. ৭১৮, প্রকাশক : দার সাদির, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ, তাফসীর ইবনে কাসীর, ১ম খন্ড, পৃ. ৫৬৭, প্রকাশক : দার কুতাইবাহ, দামেশক, বৈরুত, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৪১০ হিজরি (১৯৯০ খ্রি.) সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ (আল্লামা আল আলবানী প্রণীত), আল মাকতাবুল ইসলামী, ২য় খন্ড, পৃ. ৭১৫; আত্্ তাজুল জামে লিল উসূল, ৩য় খন্ড, পৃ. ৪৬।
১০. মুসনাদে আবি দাউদ, দারুল মারেফাহ, পৃ. ২৫৯।
১১. মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড, পৃ. ৮৩ ও ১৫৪।
১২. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, হাদীস নং ৪৮০৯, পৃ. ৭১৮, প্রকাশক : দারু সাদির, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৪২৫ হিজরি (২০০৪ খ্রি.)।
১৩. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, হাদীস নং ৪৮১৭, পৃ. ৭১৯, প্রকাশক : দার সাদির, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৪২৫ হিজরি (২০০৪ খ্রি.)।
১৪. আল হাকিম আন নিশাবুরী, আল মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, ১ম খন্ড, পৃ. ২২১, হাদীস নং ৪১৫, প্রকাশক : দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৪২২ হিজরি।
১৫. আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ আলী আল হুসাইনী আল মীলানী, আল ইমাম আল মাহদী, পৃ. ২৩; প্রকাশক : ওয়াফা, কোম, ইরান, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশকাল : ১৪৩১ হি.।
১৬. يا أيّها الذين آمنوا اتّقوا الله حقَ تقاته و لا تموتنّ إلاّ و أنتم مسلمون
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ্কে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমন ভয় কর এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না। ’ (সূরা আলে ইমরান : ১০২) (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত ঈমানের মূল সারবত্তা তোমরা অবশ্যই রক্ষা করবে। )
১৭. তোমরা আনুগত্য কর মহান আল্লাহ্র এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য হতে উলুল আমরের (কর্তৃত্বশীল নেতৃবর্গের)। (সূরা নিসা : ৫৯) (লক্ষণীয় যে, মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এ আয়াতে যেমন নিঃশর্ত ও নিরঙ্কুশভাবে উল্লিখিত হয়েছে, তেমনি উলুল আমরের আনুগত্যও।
আর এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, যারা মুসলমানদের উলুল আমর হবেন তাঁরা নিষ্পাপ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হবেন কিন্তু তাঁরা নবী হবেন না; কারণ, মহানবী (সা.)-এর পরে নতুন কোন নবীর আগমন হবে না এবং নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘোষিত হয়েছে। তাই এসব উলুল আমর হচ্ছেন মহানবী (সা.)-এর ওয়াসী।
১৮. فقاتلوا أئمة الكفر ‘অতঃপর তোমরা কুফরের নেতৃবর্গের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও যুদ্ধ (জিহাদ) কর’… (সূরা তওবা : ১২)
১৯. و لقد بعثنا في كل أمت رسولا أن اعبدوا الله واجتنبوا الطاغوت অর্থাৎ ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এতদুদ্দেশ্যে যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদাত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর। ’ (সূরা নাহল : ৩৬)।
২০. ফাতহুল বারী ফী শারহি সাহীহিল বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৩৮৫; এ হাদীসটি আহলুস সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থ, যেমন : আল্লামা ফখরুদ্দীন আল রাযী প্রণীত আত তাফসীর আল কাবীর, ২য় খন্ড, পৃ. ১৯২; শারহুল মাকাসিদ, ৫ম খন্ড, পৃ. ৩৮৫; তারীখে বাগদাদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ. ৩৮৯; আল ইকদুল ফারীদ, ১ম খন্ড, পৃ. ২৬৫; আবু কুতাইবা প্রণীত উয়ুনুল আখবার, পৃ. ৭ প্রভৃতিতে বর্ণিত হয়েছে।
তদ্রূপ ইমামিয়াদের বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ, যেমন : আল কাফী, ১ম খন্ড, পৃ. ১৩৬ এবং কামালুদ্দীন, ১ম খন্ড, পৃ. ২৮৭ তেও এ হাদীসটির উল্লেখ আছে।
২১. শারহু নাহজিল বালাগাহ, হিকমাত ১৪৭, ১৮তম খন্ড, পৃ. ৩৫১।
(এ প্রবন্ধ আয়াতুল্লাহ্ সাইয়্যেদ আলী হুসাইনী মীলানী প্রণীত ইমাম আল মাহদী (আ.) গ্রন্থের ‘যে ব্যক্তি তার নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু- এ হাদীস সংক্রান্ত আলোচনা অবলম্বনে অনূদিত, রচিত, সংযোজিত ও পরিবর্ধিত। )
সৌজন্যে : প্রত্যাশা, একটি মানব উন্নয়ন বিষয়ক ত্রৈমাসিক, বর্ষ ১, সংখ্যা ৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।