আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিচ্চি গপ -কাঁচের প্লেট

রহিমার মা একাগ্রচিত্তে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাবতীয় গৃহস্হলী কাজ থেকে শুরু করে চেয়ারম্যানের বুড়ো মায়ের দেখাশুনা, চেয়ারম্যানের দুই মেয়ের দেখাশুনা সব কাজ ই করে থাকে। বিনিময়ে মা আর মেয়ের তিন বেলা খাবার জুটে আর রাতে থাকার জন্য বাড়ির ছাদের উপর খুপরির মত ছোট একটা ঘরে থাকার ব্যবস্থা আছে। চেয়ারম্যানের যমজ দুই মেয়ে শেফা এবং তোফা। ওরা কিছুটা শুচিবায়ু টাইপ। তাদের কোন জিনিসপত্র কেউ ছুঁতে পারবেনা।

কেউ ছুঁইলে সেটা আর তারা ব্যবহার করেনা। তাই তাদের পানি খাওয়ার গ্লাস থেকে শুরু করে খাবার প্লেট সবকিছুই আলাদা করে রাখা। বাড়ির অন্যরাও সে বিষয়ে ভালভাবে অবগত আছেন। তাই কেউই তাদের জিনিসপত্রের ধারে কাছে যায়না। একদিন রহিমা জেদ ধরে বসে সেও শেফা আর তোফার মত কাঁচের প্লেটে ভাত খাবে।

এলুমিনিয়াম প্লেটে আর সে ভাত খাবেনা। তার মা তাকে অনেক বুঝায় যে কাঁচের প্লেটে তার জন্য না, তার জন্য এলুমিনিয়াম প্লেট বরাদ্দ করে রাখা। তাই তাকে সে কাঁচের প্লেটে ভাত দিতে পারবেনা। কিন্তু রহিমা যখন কিছুতেই মানছিল না তখন সে তাকে প্রমিজ করে যে তার জন্য আগামী বাজারের দিনে ইদ্রিসকে দিয়ে একটা কাঁচের প্লেট কিনিয়ে আনবো। ইদ্রিস হল চেয়ারম্যানের বডিগার্ডের মত, সবসময় চেয়ারম্যানের সাথে সাথে থাকে, আর বাড়ির বাজারপাতি করে থাকে।

পরের বাজারের দিন ইদ্রিস যখন বাজার থেকে ফিরল, তখন রহিমা দৌড়ে ইদ্রিসের কাছে জিজ্ঞেস করে – চাচা আমার কাঁচের প্লেট আনছেন? ইদ্রিস অবাক হয়ে উত্তর দেয় – তোর কিসের কাঁচের প্লেট!! - মা আপনাকে কাঁচের প্লেট আনতে টাকা দেয়নি। - না তো, তোর মা কোন কিছু আনতে আমাকে টাকা দেয়নিতো। সে মন খারাপ করে তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করে মা আজকে না আমার জন্য কাঁচের প্লেট আনাবে বলছিলে! তার মা একটু অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দেয় – ভুলে গিয়েছিলাম। আগামী বাজারে আনিয়ে দিব। পরেরদিন দুপুরের খেতে বসেছে সেফা ও তোফা।

কিন্তু সেফার খাওয়ার প্লেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে তো আর অন্য প্লেটে খাবে না। তাই বাড়িতে শুরু হল খুঁজাখুঁজি। বাড়ির কিছু হারালে প্রথমেই বাড়ির কাজের মানুষের দিকে দৃষ্টি যায় এটাই স্বাভাবিক। এখানেও ব্যতিক্রম হলনা।

পরিশেষে প্লেটটা রহিমাদের ঘরে পাওয়া গেল। প্লেট পাওয়ার পর রহিমার মা রহিমাকে খুব মারধোর করলো এবং রহিমাকে দিয়ে সবার কাছে মাফ চাইয়ে নিল যে – সে আর কোনদিন এরকম করবেনা। সেদিন রাতে রহিমা ঘুমানোর আগে সে তার মাকে আস্তে আস্তে করে বলে- মা শুন, আমি শেফা খালা’র প্লেট টা চুরি করিনি। তার মা খুব জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উত্তর দেয় -সেটা আমি জানি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।