আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালি রাজনীতিবিদদের দোষ আর জনগণ ধূয়া তুলসী পাতা

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না একজন লোকের জনপ্রতিনিধি হতে বিভিন্ন খাতে কি পরিমাণ টাকা ঢালতে হয়! আর এই টাকার যোগান দিতে মেম্বার,চেয়ারম্যানরা যে টিনের ঘর, জমিজমা বিক্রি করেন সেটা তো আমরা জানি। আমি আমার নিজের এলাকায় একজনকে দেখেছি ২০০৯ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান ইলেকশনে টাংগাইল শহরে তাঁর ১৫ শতাংশ জায়গার উপর তিনতলা বাসা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কমে মাত্র ৫ কোটি টাকায় বিক্রি করতে। মনে হতে পারে দুনম্বরী পয়সা দিয়ে সে বাসাটা করেছে। না, কোন দুনম্বরী পয়সা দিয়ে করা না; এলাকাবাসী জানে ঐ বাসাটা তাঁর বাবা এবং তার নিজের হাতে গড়া। এখন কথা হল সে কি মনের ইচ্ছায় বিক্রি করেছে? না, বাধ্য হয়ে করেছে; কেন করেছে? এলাকায় তাকে চা-পান, বিড়ি, সিগারেট, পাউরুটি-বিস্কুট এগুলো পাবলিককে কম করে হলেও একমাস ফ্রি খাওয়াতে হবে।

আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি, ১৯৯৬ সাল দাদার বাড়ীতে থাকাকালীন সময় - চারিদিকে মেম্বার,চেয়ারম্যান ইলেকশনের আমেজ। চার রাস্তার মোড়ে তুলা গাছতলায় ছানো চাচার চায়ের দোকানে সব ফ্রি, বাহ্ কি মজা!!! বিড়ি-পান তো আর খাই না তাই কয়েকদিনের মধ্যেই ২১টা পাউরুটি সাবার করে দিলুম। তখন ছোট ছিলাম বলে বুঝি নি, বড় হয়ে খুব বুঝদার মানুষ হইছি! তা কিন্তু না, মোটেও নয়। ২০০৯ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ইলেকশনে একজনের কাছ থেকে কয়েক প্যাকেট বিস্কুট পাইছিলাম কিন্তু অলসতার কারনে নেমক হারামের মত ভোটকেন্দ্রে না যাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে বসে মুভি দেখছি। অবশ্য জাতীয় ইলেকশনের সময় নেমক হারামি করি নাই, ভোট দিছি এসময় ২কাপ আদা চা খাইছিলাম।

টাংগাইলের ঘাটাইল থানার সাবেক মরহুম এম.পি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মতিন সাহেবের জন্য ইলেকশনের সময় কাজ করা সেনাবাহিনীর এক অবসর পারসন যে কিনা ১/১১ আগের ঐ সময়টাতে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন, উনার কাছে শুনেছিলাম মতিন সাহেব অপরিচিত মুখ হওয়া সত্বেও ৫০কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, অবশ্য উনি নিজেও টাকা দিতে দেখেন নি; শ্রেফ অন্যদের কাছে শুনেছেন, শোনা কথায় ভুল থাকে। মতিন সাহেব তার পক্ষে শক্তি দেখাতে ঘাটাইল থেকে ৫০ ট্রাক ভরে লোক নিয়ে যান ঢাকার জনসভায়, প্রত্যেককে ২০০টাকা সাথে বিরিয়ানি প্যাকেট। মিছিল,মিটিং সহ প্রত্যেকটা খাতে এই যে এতসব খরচ করতে হয়, জনপ্রতিনিধিরা কি এইটাকা তুলবে না? গ্রাম এলাকায় লোকজন ভোটকেন্দ্রে যায় ভ্যান রিকশা চড়ে,আহ্ কি আরাম। এই খরচ দেয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিদ্বন্দী যারা করে তারা। বলা হয়,এরা টাকা ছিটাইয়া ভোট কিনে!পাবলিক যদি এতই ধূয়া তুলসী পাতা হত,তাইলে তো আর তারা কাউরে জোর করে টাকা গছিয়ে দিতে পারত না।

এমন মনে হতে পারে গরীব মানুষ অভাবের তাড়নায় টাকা নিয়ে ভোট দেয়। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্চ করে বলতে পারি ইলেকশন প্রার্থীদের কাছ থেকে গরীবরা আর কয়টাকা খায়, সব তো খায় প্রার্থীর সহযোগি হিসেবে কাজ করে যারা তারা, খাস বাংলায় বলে চেলা-চামুন্ডা। আর খাবেই বা না কেন? আমাদের ঐ ভাড়াটিয়াকে দেখেছি, নিজের কাম-কাজ ফেলে রেখে দিন নাই রাত নাই সবসময় খাটছে মতিন সাহেবের জন্য। আচ্ছা আমজনতা খারাপ,লোভী তাহলে সুশীল সমাজরা কি খুব ভাল! ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ইফতার মাহ্ফিলে গেছি ক্যাম্পাসের বন্ধু বান্ধব , সিনিয়র বড় ভাইদের সাথে দেখা করার জন্য; আর সেইসাথে ইফতারের প্যাকেট তো ফ্রিই। আমি আবার সব দলের অনুষ্ঠানেই যেতাম, সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতাম।

যাইয়া দেখি ইফতারের প্যাকেট নিয়ে টানাটানি, কাড়াকাড়ি তাতে বুঝলাম শুধু আমি একাই লোভী নই, সমাজে আরও বহু সুশীলই লোভী। ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে এমন লোক কমই আছে যারা ইলেকশনের নিমিত্তে প্রার্থীদের কাছ থেকে চা,বিড়ি, পান কিংবা তাদের ভাড়া করা ভ্যানে চড়ে যাই নাই। যদি ১৫ কোটি লোকও ৫টাকার সুবিধা নিয়ে থাকে তাহলেও ৭৫ কোটি টাকা, এই টাকা কি গাছে ধরে, এই টাকা কি তারা তুলবে না! যেদিন আমরা জনগণ কোন ধরনের সুবিধা না নিয়ে ভোট দিব, প্রার্থীরা অযাচিত খরচ না করে ইলেকশনে জয়ী হয়ে সংসদে যাবে সেদিনই কেবল আমরা আশা করতে পারি জনপ্রতিনিধিরা ঘুষ খাবে না, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবে। এর আগে আশা করাটা হবে বোকামি কেননা আমরা ম্যংগো পিপলরাই ভাল নই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.