আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংরক্ষণের মাধ্যমে শুধু সবজি বিক্রি করেই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। বাংলাদেশে আপাতত খাদ্যের চাহিদা মাত্র ৫ কোটি টন। ৫০০টি হিমাগারে ১০ কোটি টন খাদ্য সংরক্ষণ সম্ভব।

জীবন কখনোই সংগ্রাম বিহীন হতে পারে না নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘প্রত্যেকেই রক্ষক সে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকায় চাল, ধান, গম, ভুট্টা, শস্যাদীসহ শাকসবজি, তরিতরকারি ও ফলফলাদি ইত্যাদির বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও সংরক্ষণের অভাবে অপচয়, নষ্ট ও পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে একদিকে প্রান্তিক চাষী মূল্য পায় না; অপরদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মেহনতি জনতা সবাই চড়া মূল্যে খাদ্য কিনে চরমভাবে শোষিত হচ্ছে। অতএব, দেশের প্রায় সবগুলো থানাতেই হিমাগার তৈরি করা সরকারের একান্ত কর্তব্য। সংরক্ষণের অভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ধান-চাল, গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ শাক-সবজি, তরিতরকারি এবং ফলফলাদি ইত্যাদি পাচার হয়, অপচয় হয় ও পচে নষ্ট হয় এমনকি গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আমাদের ধান-চাল, গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ শাকসবজি, তরিতরকারি এবং ফলফলাদি ইত্যাদি উদ্বৃত্ত হয়। মৌসুমে ধান-চাল, গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ শাক-সবজি তরিতরকারি এবং ফলফলাদি ইত্যাদি যে পরিমাণ উৎপন্ন হয় তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে বিপুল পরিমাণ। যা সাধারণভাবে চিন্তা করা অত্যন্ত কঠিন। অন্যান্য তরিতরকারি শাক-সবজির ৮০ ভাগই উৎপাদিত হয় শীত মৌসুমে। শীতকালের অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সবজি এতো অধিক উৎপন্ন হয় যে, শেষ পর্যন্ত সেগুলো কেনার লোক থাকে না।

বিপুল উদ্বৃত্ত এবং ক্রেতার অভাবে তখন সেগুলো বিক্রি হয় পানির দরে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষকের পরিবহন খরচও উঠে আসে না। উৎপাদন বেশি হলে শাক-সবজি পাচার হয়, অপচয় হয় এবং পচে নষ্ট হয়। এর কারণ আমাদের দেশে শাক-সবজি সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। হিমাগারের ভয়াবহ সঙ্কট।

অথচ ফলমূল, শাকসবজি, তরিতরকারি সংরক্ষণের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে একদিকে যেমন চাষী লাভবান হবে তেমনি সাধারণ নাগরিকও অনেক কমদামে সবকিছু খেতে পারবে। গত শীত মৌসুমে শুধু আলুই উৎপাদন হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টনেরও বেশি। দেশের প্রায় প্রতিটি থানায় যদি হিমাগার তৈরি করে ধান-চাল, গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ তরিতরকারি, ফলফলাদি ও শাকসবজি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায় তবে এ সংরক্ষণের দ্বারা একদিকে যেমন দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে; আর পাশাপাশি তা বিদেশে রফতানি করে লাখ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সকল কৃষকই বলছেন তারা ধান-চাল, গম-ভুট্টা, শস্যাদিসহ তরিতরকারি, শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার পাচ্ছেন না। এর ফলে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

একই অবস্থা বেগুন, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির বেলায়। কৃষকের ফসল ঘরে তোলার সময় এই অবস্থা প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়। পিক পিরিয়ডে পণ্য সংরক্ষণের অভাবে পাচার হয়, অপচয় হয় এবং পচে নষ্ট হয় আর অফ-পিকে বাজারে অগ্নিমূল্য থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ কেউই দেখাননি। অনুরূপ ফলফলাদি যেমন তরমুজ, বাঙি, খিরাই, পেয়ারা, বড়ই ইত্যাদি সংরক্ষণের অভাবে ও নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আবার অফ সিজনে অগ্নিমূল্য হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোকজন ইত্যাদি ফলফলাদি থেকে মাহরূম(বঞ্চিত) হচ্ছে। দেশে মোট হিমাগার আছে ৩৪৩টি। এগুলোয় মাত্র প্রায় সাড়ে ২০ লাখ টন পণ্য মজুদ রাখা যায়। এর মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭টি হিমাগার বন্ধ রয়েছে।

চালু রয়েছে ২৯৬টি হিমাগার। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ১৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি হিমাগার রয়েছে। বাস্তবে আরো হিমাগার থাকা প্রয়োজন হলেও তা নির্মাণ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত দেশের প্রায় প্রতিটি থানায়ই সরকারি অর্থায়নে আপাতত কমপক্ষে দুই লাখ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হিমাগার তৈরি করা। দুই লাখ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হিমাগার তৈরি করতে সর্বোচ্চ ৩৫০ কোটি টাকা লাগবে।

সে হিসেবে কমপক্ষে ৫০০টি হিমাগার তৈরি করতে সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। ৫০০টি হিমাগারে ১০ কোটি টন খাদ্য সংরক্ষণ সম্ভব। যার ফলে কোন প্রকার খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হবে না। তা ধান, চাল, গম, ভুট্টা, তরিতরকারি, শাক-সবজি, ফলফলাদি যাই হোক না কেন। অতএব, সরকারের উচিত জনগণ ও দেশের স্বার্থে অতিসত্তর উল্লেখ সংখ্যক হিমাগার তৈরি করা।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেকেই রক্ষক; তাকে তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ” আর হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “ফোরাতের তীরে একটা কুকুরও যদি না খেয়ে থাকে তবে আমি হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম আমাকে তার জন্য জবাবদীহি করতে হবে। ” বাংলাদেশে আপাতত খাদ্যের চাহিদা মাত্র ৫ কোটি টন। ১০ কোটি টন খাদ্যসামগ্রী যদি সংরক্ষণ সম্ভব হয়; তাহলে আশা করা যায় দেশে আর কোন খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হবে না। আর ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা একটা দেশের জন্য খুব বেশি নয়।

এ টাকাটা ১ বৎসরেই প্রয়োজন হবে তা নয়। কারণ, এতগুলি হিমাগার তৈরি করতে প্রায় ৩ বৎসর প্রয়োজন। এতদ্বপ্রেক্ষিতে সরকারের উচিত, অবিলম্বে প্রায় প্রত্যেক থানায় কমপক্ষে একটি বা সর্বমোট ৫০০টি সরকারি হিমাগার করে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং না-খাওয়া মানুষ তথা সাধারণ মানুষের জন্য কমমূল্যে খাদ্য কেনার ব্যবস্থা করা। যা ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবীর কারণ হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.