লিখনপদ্ধতি আবিষ্কারের আগে মানুষ কীভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ ও তথ্য সংরক্ষণ করত? মার্কিন গবেষকেরা বলছেন, প্রাচীন যুগে মানুষ যোগাযোগের জন্য বিশেষ একধরনের মাটির গোলক ব্যবহার করত। মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক) থেকে প্রাপ্ত গোলকের ওপর গবেষণা চালিয়ে সম্প্রতি এ তথ্য জানানো হয়েছে।
লিখনপদ্ধতি আবিষ্কারের ২০০ বছর আগে এ ধরনের গোলক বিনিময় করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। কানাডার টরন্টোতে সাম্প্রতিক এক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শনীতে গবেষকেরা বলেন, মাটির গোলকের মাধ্যমে তথ্য বিনিময়ের এই পদ্ধতিই সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্রিস্টোফার উডসের নেতৃত্বে একদল গবেষক ২০টি মাটির গোলক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।
এতে উচ্চ ক্ষমতার সিটি স্ক্যান ও ত্রিমাত্রিক মডেল ব্যবহার করা হয়। এতে দেখা যায়, গোলকের ভেতরে বিভিন্ন আকারের জ্যামিতিক চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো বিভিন্ন ধরনের সংকেত প্রকাশ করে।
১৯৬০ সালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় চোগা মিশ নামক প্রত্নস্থল থেকে ওই গোলকগুলো উদ্ধার করা হয়। এগুলো প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই সময় মেসোপটেমিয়ায় সভ্যতার বিকাশ সবে শুরু হয়।
গবেষকেরা মাটির গোলককে ‘চিঠির খাম’ নামে অভিহিত করেছেন। কারণ, খামের মধ্যে যেমন চিঠি থাকে, তেমনি ওই গোলকের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন বা সংকেত রাখা হতো। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ ধরনের মাত্র ১৫০টি গোলক অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন, মাটির গোলকগুলো অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হতো।
মেসোপটেমিয়ার নুজি নামক স্থানে পাওয়া তিন হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো একটি গোলকের ভেতরে ৪৯টি নুড়ি পাওয়া যায়। এতে প্রাচীন পারস্যের লিপিতে ৪৯টি ভেড়া ও ছাগল প্রতিপালনের নির্দেশনা ছিল।
নতুন গবেষণায় দেখা যায়, কয়েকটি গোলকের মধ্যে থেকে দুই মিলিমিটার সূক্ষ্ম ছিদ্র খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, গোলকের মধ্যে স্থাপিত বিভিন্ন আকৃতির চিহ্ন বা প্রতীকের সাহায্যে সংখ্যা বা কোনো জিনিসের পরিমাণ বোঝানো হতো। এ ছাড়া গোলকের মধ্যে থাকত তুলনামূলক কম ঘনত্বের বিভিন্ন পদার্থের তৈরি প্রতীক বা চিহ্ন।
এগুলোর মাধ্যমে হয়তো কোনো জটিল হিসাব-নিকাশের তথ্য সংরক্ষণ করা হতো।
মাটির গোলকের বাইরের অংশে একধরনের চিত্র বা ছবি পাওয়া যায়। গোলকভেদে একটি থেকে দুটি ছবি থাকত। লাইভসায়েন্স।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।