আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা জন্মের পর থেকে আমাদের ২-৩ বছর বয়সের স্মৃতিগুলো একেবারেই মনে করতে পারি না কেন?

জীবন হলো পেন্সিলে আঁকা এক ছবির নাম, যার কোনো অংশ রাবার দিয়ে মুছে ফেলা যায় না। ~জন ডব্লু গার্ডনার আমাদের মা-খালা দের প্রায়ই বলতে শোনা যায় তুই ছোটবেলায় এটা করতি, ওটা করতি। কিন্তু আমরা এই ঘটনাগুলো কখনোই মনে করতে পারি না। জন্মের পর থেকে ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরো সময়টা আমাদের মস্তিষ্কে অনেক হাতড়িয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। ৩-৭ বছর বয়সের কিছু খণ্ড খণ্ড স্মৃতি হয়তো আমরা মনে করতে পারি কিন্তু তাও খুবি অল্প।

ছোটবেলার এই সময়টার কথা মনে করতে না পারাকে বলা হয় চাইল্ডহুড অ্যামনেশিয়া। তবে এর কারন আসলে কি তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন চাইল্ডহুড অ্যামনেশিয়ার কারণ শিশুদের মস্তিষ্ক সুগঠিত না হওয়া। আমাদের স্মৃতি তৈরী করার জন্য মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় দুটি অংশ হচ্ছে- হিপ্পোক্যাম্পাস এবং মেডিয়াল টেম্পোরাল লোব। এই দুটি অংশ শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যেই মোটামুটি পরিপক্ব হয়ে যায়।

কিন্তু প্রিফ্রণ্টাল কর্টেক্স (নিউরোসাইন্টিস্টদের মতে মস্তিষ্কের এই অংশটি আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতি বা লং-টার্ম মেমোরী তৈরীতে সাহায্য করে) ২০ বছরের আগে পুরোপুরি পরিপক্ব হয় না। তাই যতদিন পর্যন্ত না অন্ততপক্ষে এই অংশটি আংশিক ভাবে গঠিত হচ্ছে ততদিন শিশুরা বিভিন্ন কাজ কিংবা বস্তু সনাক্ত করতে পারলেও তাদের সাথে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা দৃশ্যের আকারে মস্তিষ্কে সাজিয়ে রাখতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এইসময় তারা মায়ের শরীরের গন্ধ চিনতে পারে, বুঝতে পারে যে কাঁদলে তাকে খেতে দেওয়া হবে কিন্তু কেউ এসে তার গাল টিপে দিয়ে গেল এটা সে মনে রাখতে পারবে না। আবার জন্মের প্রথম কয়েক মাস উচ্চহারে মস্তিষ্কের নিউরন ধ্বংস হয়, কিন্তু তার থেকেও অধিক হারে সিন্যাপসিস গঠিত হয়। ফলে নতুন সংযোগকারী শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির সাথে সাথে পুরনো শাখা-প্রশাখাগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।

তাই এসময়কার স্মৃতি মস্তিষ্ক থেকে মুছে যাওয়া কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা না। আরেকদল বিজ্ঞানী মনে করেন, শিশুরা কোন ভাষা জানে না তাই তারা ভাষা দিয়ে স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কে সাজিয়ে রাখতে পারে না। তারা মনে করেন, ভাষা না জানার কারনে স্মৃতি গুলো আসলে শিশুদের মস্তিষ্কে ঠিকমত গঠিতই হয় না। কিন্তু একদল বিজ্ঞানী উপরের দুই দলের হাইপোথিসিসই নাকচ করে দেন। তাদের মতে শিশুদের স্মৃতি তৈরী করতে কোন সমস্যাই হয় না, বড়রা যেভাবে স্মৃতি তৈরী করে সেভাবে শিশুরাও করে।

সমস্যা হয় শুধু বড় হয়ে সেগুলো তাদের মনে করতে। কারন বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের আশেপাশের পরিবেশ দেখার ধারণাটাই পালটে যায়। ছোটবেলায় যে শিশুটির কাছে আশেপাশের মানুষগুলোকে অদ্ভুত শব্দ করা দৈত্যাকার কিছু একটা মনে হত, বড় হওয়ার সাথে সাথে সে তাদেরকে খালা-চাচা-নানী-দাদী ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চিনতে শিখে। এভাবে নতুন নতুন স্মৃতির তলায় পুরনো স্মৃতিগুলো চাপা পড়ে যায়, যা সে পরবর্তীতে মনে করতে পারে না। মজার ব্যাপার হল অনেকে এমনটি দাবী করে থাকেন যে তারা শুধু জন্মের পর থেকে ২-৩ বছরের টুকরো টুকরো বিভিন্ন ঘটনাই না মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তাদের কিরকম অনুভূত হত তাও মনে করতে পারেন।

তবে এসব দাবীর সত্যতা কখনো যাচাই করা হয় নি। তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।