আমার পাপ আমাকে নিষ্পাপ করে, আমার ভয় আমাকে সাহসী করে- স্বীকারোক্তি, আর্বোভাইরাস মাইক্রোবাস ভর্তি বেশ কয়েক’শ বোতল ফেন্সিডিল আর পিস্তল নিয়ে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে একজন বিচারক গ্রেফতার হয়েছেন- খবরটা দু’তিন দিনের পুরনো। নতুন খবর হল, গ্রেফতার বিচারককে মিডিয়ার সামনে হাজির করে ‘বিচারবিভাগকে জনগণের সামনে হেয়’ করার দুঃসাহস দেখানোয় ৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে শোকজ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।
শোকজের খবরটা গতকালই পড়েছিলাম বিডিনিউজে। পরে আজকে লিখতে বসে ইনফো-সোর্স হিসাবে যখন আবার বিডিনিউজে ঢুকলাম, বাংলা ভার্শনে খবরটা কোথাও চোখে পড়লো না (শোকজ/ মামলার ভয়ে সরিয়ে নিয়েছে কিনা কে জানে)। পরে তাদের ইংরেজি ভার্শন ঘেঁটে বের করলাম খবর, ওখান থেকেই উদ্ধৃত করে এখন লিখতে বসছি।
খবরে যা বলা হয়েছে সেগুলো আমি পয়েন্ট-আউট করে নিচে আলাদা-আলাদাভাবে আলোচনা করছি-
১) "The police held a media trial for degrading the judiciary before the people, and the police cannot do so," said the judge in the order.-
-অপরাধী সবসময়ই অপরাধী, সে বিচারবিভাগের কেউ হোক আর সাধারণ কেউ হোক। আর একজন অপরাধীর অপরাধের ভাগীদার শুধু সে নিজে এবং তার সহযোগীরা। এক্ষেত্রে বিচারবিভাগের সম্মানের প্রশ্ন কেন আসছে? ফেন্সিডিলসহ একজন বিচারকের গ্রেফতার যদি বিচারবিভাগের সম্মানহানির কারণ হয় তাহলে আমি বলব অপরাধী ব্যাক্তিকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করে তার সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেই বিচারবিভাগের সম্মান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু তা না করে উল্টো পুলিশ কর্মকর্তাদের শোকজ করা কিন্তু অপরাধীদের পক্ষে ওকালতি করা হয়ে যায় যা কিনা জনগণের সামনে বিচারবিভাগকে আরো বেশি হেয় করে। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে জনগণের এমনিতেই অনেক অভিযোগ আছে।
তারপরও এখনো মানুষের বিচারের শেষ আশ্রয় এখনো আদালত। কিন্তু আদালত যদি এভাবে নির্লজ্জভাবে একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধীকে সাহায্য করে 'নিজেদের লোক' বিবেচনা করে, তাহলে কিন্তু তারা জনগণের আস্থা আর সম্মান হারাবে।
২) *"The way Javed Imam was produced (before the media) runs contrary to the Penal Code," the judge observed in the order.
** পরে আরো বলা হয়েছে, “The police arranged a press conference immediately after his arrest at the New Market Police Station, where he confessed to carrying the contraband drug.”
-একজন অপরাধীকে কেন জনসম্মুখে আনা যাবেনা যেখানে সে নিজেই হাতেনাতে অবৈধ মালামাল সহ ধরা পড়েছে এবং স্বীকার করেছে? অপরাধী বিচারবিভাগের একজন বলেই কি সে এভাবে ফেভার পাবে? র্যাব-পুলিশ ইদানীং চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রেফতার/আটককৃতদের মিডিয়ার সামনে আনা মোটামুটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত করেছে যাকে আমি পূর্ণভাবে সমর্থন করি। কারণ এতে আদালতের জটিল জেরার মুখে পড়ার আগেই অভিযুক্ত ব্যাক্তির জনসম্মুখে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে যদি সে নিরপরাধ হয়ে থাকে। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সুযোগ থাকে প্রকৃত অপরাধীকে একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে সমাজের সামনে তুলে ধরার।
তাহলে এই প্রক্রিয়ায় আইনি জটিলতা কেন? কোন প্রক্রিয়া জনহিতৈষীকর অথচ পেনাল কোডের বিরোধী হলে অবধারিতভাবে প্রশ্ন উঠে গলদটা কোথায়, প্রক্রিয়াটিতে নাকি পেনাল কোডে? এক্ষেত্রে পেনাল কোডটিই ত্রুটিপূর্ন বলে আমার মত এবং এর সংশোধনের প্রয়োজন আছে বলেও আমি মনে করি।
৩) “The order said, as per the Section 103 of the Bangladesh Penal Code, a seizure list has to be prepared in presence of two or more people respected in the locality, and the seizure list must contain their signatures.
Those who were named in the seizure list relating to Javed Imam include Shah Alam, a resident of Patuakhali. Other signatories are shopkeeper Abul Kalam Azad and Dhanmondi Police Station's SI Jahangir Alam.
The court found none of the witnesses to the seizure as respected person and termed the list flawed.
"SI Nur Hossain prepared a flawed seizure list," the court observed.”
-'respected person' বা সম্মানিত ব্যক্তি- এর সংজ্ঞা কি? অপরাধ সংঘটনের স্থানে কি সবসময় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা রাতের আঁধার কিংবা নির্জন স্থানকেই বেছে নেন অপরাধ ঘটানোর কাজে, সেক্ষেত্রে কি একজন সম্মানিত ব্যক্তির বক্তব্য বেশি গ্রহণযোগ্য না ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন চাক্ষুষ সাক্ষীর (সাধারণ মানুষ, সে মুচি হতে পারে, রিকশাচালক হতে পারে, আবার কর্পোরেট সার্ভিসহোল্ডারও হতে পারে) বক্তব্য বা সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। আমার জানামতে বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিককেই সমান করে দেখার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে 'সম্মানিত ব্যক্তি' কনসেপ্টটা কি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায় না? আর জব্দলিস্টের উপর সন্দেহ প্রকাশ করে এখানে কি বুঝাতে চাচ্ছেন পুলিশ ভুয়া ফেন্সিডিল আটক করে ভুয়া জব্দলিস্ট তৈরি করে 'নিরপরাধ অভিযুক্ত' কে 'অপরাধী' দেখানোর চেষ্টা করছে?
সম্পুর্ণ বিডিনিউজ রিপোর্টের লিঙ্কঃ Click This Link
পুনশ্চঃ According to Abraham Lincoln, "Democracy is a government of the the people, for the people and by the people". আমি এই জনগণেরই একজন। জনগণের জানার অধিকার আছে, তাদের চিন্তা করার অধিকার আছে, তাদের সমালোচনা করার অধিকার আছে, তাদের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে গণতন্ত্রে।
যেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নুর হোসেন রক্ত দিয়েছিলেন। এখন যদি আমার এই লেখার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে, আমার গায়ে কোন না কোন লেবেল লাগানোর হিড়িক পড়ে যাবে। কিন্তু পারবেন না। কারণ আমি লীগের বিরুদ্ধে লিখি, বিএনপির বিরুদ্ধে লিখি, শিবিরের বিরুদ্ধে লিখি, হিজবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে লিখি, যেখানে অসঙ্গতি চোখে পড়ে তার বিরুদ্ধেই লিখি। আমার পুরনো ব্লগ একাউন্টের লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম যেটাতে পাসওয়ার্ড জটিলতার কারনে গত কয়েকমাস আমি লগইন করতে পারছি না বলে নতুন নিকে লিখছি।
ওই ব্লগের লেখাগুলো পড়লেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/joos ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।