..........:-(
লায়লা খালিদ একজন নারী বিপ্লবী। ফিলিস্তিনের বিপ্লবীদের সংস্থা PFLP (Popular front for the liberation of Palestine) এর একজন সদস্য। তবে উনি বিখ্যাত হন বিমান হাইজ্যাক করে, পরিচিত হন প্রথম নারী বিমান হাইজ্যাকার হিসাবে।
লায়লার জন্ম হাইফা, ফিলিস্তিন এর একটা ছোট শহরে । সময়টা ১৯৪৪।
কিন্তু ১৯৪৮ এ আরব ইজরাইল সংকটের সময় লায়লার পরিবার,তার মা ও সাত সন্তান সহ নির্বাসিত হয় লেবাননে,উদ্বাস্তু হিসেবে। তার বাবা কিন্তু থেকে যান,উনি PFLP এর একজন সদস্য ছিলেন।
বাবা ও বড় ভাইের মতাদর্শ অনুসরণ করেন লায়লা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে PFLP এ যোগ দেন। ১৯৬৮ এ PFLP এর স্পেশাল স্কোয়াডের একজন নারী ফ্রিডম ফাইটার হিসেবে গণ্য হন।
যে কারনে পরিচিত পান সেই বিখ্যাত বিমান হাইজ্যাকের ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৬৯ এর ২৯ আগস্ট।
১৯৬৯ PFLF এর সদস্য সেলিম ঈসায়ী ও লায়লা খালিদ হাইজ্যাক করেন রোম থেকে এথেন্সের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিমান। নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেন বিমানের কন্ট্রোল।
এ হাইজ্যাকিংয়ের সময় তার একটি ছবি তোলা হয়। যেখানে তিনি একে-৪৭ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
পড়ে ছবিটা বিখ্যাত হয়ে যায় পরিণীত হয়
বিপ্লবের প্রতীকে।
পরিকল্পনা ছিল বিমানের কন্ট্রোল নিয়ে সোজা দামেস্কের দিকে যাওয়া। কিন্তু ছোট বেলায় হাইফা থেকে চলে আসলেও জন্মভুমির প্রতি তার ভালবাসা কমে যায়নি, নিয়ন্ত্রন নিয়ে লায়লা পাইলট কে নির্দেশ দেন, বাধ্য করেন হাইফা তে যেতে, নিজের মাতৃভূমি যাতে দেখতে পারেন।
এর পরে বিমান দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয় যাত্রীদেরকে নামিয়ে দেয়ার জন্য শুধু দুজন ইজরাইল যাত্রী বাদে। এ হাইজাকিং এর সময় কোন যাত্রী তেমন আহত হননি।
PFLP এর সদস্যরা ধরা পড়েননি যদিও বিমানটার সামনের অংশ ধংস হয়ে যায়।
একবার বিমান হাইজ্যাক করেই থেমে থাকেননি লায়লা। ছবি ছড়িয়ে পড়লে চেহারা যেন না চেনা যায়, সেজন্য ছয়টার মত প্লাস্টিক সার্জারি করেন। অংশ নেন দ্বিতীয় হাইজ্যাকিংইয়ে। উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি।
এবার অবশ্য এত সহজ হয়নি। সফল হয়নি মিশন।
১৯৭০, ৬ সেপ্টেম্বর খালিদ এবং আর একজন কর্মী আমস্টারডাম থেকে নিউইয়র্ক গামী ফ্লাইট ২১৯ হাইজ্যাক করেন। বিমানের কন্ট্রোল নেবার সময় সহযোগী কর্মী প্যাট্রিকের গুলিতে একজন ফ্লাইট অ্যাটেনন্ডেন্ট মারা যান। কিন্তু লায়লার কঠোর নির্দেশ ছিল কোন যাত্রী যেন আহত না হয়।
বিমানের এয়ার মার্শাল বিমানের কন্ট্রোল নিয়ে নেন,প্যাট্রিক মারা যান আর একজন এয়ার মার্শালের গুলিতে। লায়লাও আহত হন। বিমান হিথ্রো বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণ করে,এবং লায়লাকে এরেস্ট করা হয়।
১৯৭০, ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটা একাধিক হাইজ্যাকিংয়ের অংশ ছিল। পাঁচটি হাইজ্যাকিং করেছিল PFLP এর সদস্যরা।
লায়লাকে ব্রিটিশ সরকার মুক্ত করে ১ অক্টোবরে বন্দী বিনিময় হিসেবে, এখানেও নাটকীয়তা এবং হাইজ্যাকিং। PFLP একটি বিমান হাইজ্যাক করে ও ৩০০ জনকে জিম্মি করে দাবি করে লায়লাকে মুক্তি দেয়ার।
একজন নারী হিসেবে লায়লা যা করেছেন নিঃসন্দেহে সাহসিকতার। যা তাকে ফিলিস্তিনিদের কাছে পরিণীত করেছে হিরোতে আর পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ভিলেন। মনে পরে যায় আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কথা ,তার বীরত্বর কথা।
লায়লাকে নিয়ে লেখা হয়েছে বই।
বানানো হয়েছে ডকুমেন্টারি, ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক লিনা মকবুল এর ‘হাইজ্যাকার- দ্য লাইফ অব লায়লা খালিদ।
imdb
লায়লাকে নিয়ে লেখা একটা কথায় চোখ আটকে গেল,- She proved that she is a freedom fighter more equal to any man.
সত্যি কথা। দুই বছর পর এমন কথা আমরাও প্রমান করেছিলা্ম। আমাদের নারীরা যে অসীম সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন ঘরে কিংবা বাইরে ,তাদের ছাড়া কি আমরা স্বাধীনতা পেতাম?বিজয়ের মাসে তাদের শ্রদ্ধাভরে মনে করছি।
উইকিপিডিয়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।