তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়াগুলোতে খবরের পুরো অংশজুড়ে শুধুই দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর মিছিলের ছবি। ঢাকার আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন পোষাক কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন প্রায় ১২৪ জন নিরীহ শ্রমিক। জীবন জীবিকার সন্ধানে তারা এসেছিলেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে, লোভ কিংবা নাশকতার আগুনে তারা পুড়ে ছাই হয়ে গেলেন। চট্টগ্রামে বহাদ্দারহাটে উড়ালসেতুর গার্ডার ভেঙে মারা গেছেন আরও প্রায় ১৭ জন।
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের এ দুটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় আমরাও ব্যথিত এবং শোকাহত।
পরম করুণাময়ের কাছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যে নিদারুণ যন্ত্রণা ও অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে তারা পরপারে পাড়ি জমালেন, মহান আল্লাহ পাক যেন এর সর্বোত্তম বিনিময় ও প্রতিদানে তাদেরকে সম্মানিত করেন- এ প্রার্থনা আমাদের সবার।
ঢাকার আশুলিয়ায় অগ্নিকান্ডে প্রাণহারানো এবং চট্টগ্রামে নিহত মানুষগুলোর শোকার্ত পরিবারের জন্য কিছুটা সান্তনা বয়ে আনতে পারে রাসূল সা. থেকে বর্ণিত সুসংবাদ। প্রিয়নবী সা. বলেছেন, আগুনে পুড়ে যাদের মৃত্যু ঘটে এবং কোনকিছু ধ্বসে যাওয়ার কারণে যারা প্রাণ হারায়, তারা আল্লাহ পাকের কাছে ‘শহীদ’হওয়ার গৌরব ও সম্মান লাভ করেন। (আহমদ-২৩৮০৪, আবু দাঊদ-৩১১১, নাসাঈ-১৮৪৬)
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে জানা যায়, একদিন রাসূল সা. জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কাদেরকে শহীদ বলে মনে কর? সাহাবায়ে কেরাম জানালেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেন, তারাই তো শহীদ।
তখন রাসূল সা. তাদেরকে শোনালেন, আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গকারী ব্যক্তি ছাড়াও আরও সাত প্রকার মানুষ শহীদ হিসেবে গণ্য। এ সাত প্রকারের মধ্যে তিনি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন এবং এ হাদীসের শেষাংশে দেয়াল কিংবা কোন কিছু ধ্বসে যাদের মৃত্যু ঘটে তাদেরকেও ‘শহীদ’হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং দুঃখজনকভাবে তাদের মৃত্যু হলেও এ সম্মান তাদের জন্য সৌভাগ্য। প্রিয়তম নবী এ অসহায় মানুষগুলোর জন্য যে সান্তনার বানী শোনালেন, আর কে পেরেছে এমন মায়ায় জড়াতে?
তবে আল্লাহ পাকের দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শত্র“দের হাতে যাদের মৃত্যু হয়, কোন সন্দেহ নেই যে, এরা প্রথম শ্রেণীর ‘শহীদ’। শরীয়তের নিয়মমত এদেরকে তাদের পরনে থাকা কাপড় এবং গায়ে লেগে থাকা রক্তসহ দাফন করতে হয়।
কাল কিয়ামতের মাঠে এটাই তাদের জন্য জ্বলজ্যান্ত সাক্ষ্য হবে।
আর শহীদের অন্যান্য প্রকারগুলোর জন্য এ হুকুম নয়। তাদেরকে গোসল এবং কাফন পরিয়ে দাফন করতে হয়। আল্লাহ পাক এ শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করে তাদের গোনাহগুলোকে মাফ করে দিবেন। তবে হাদীসবিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, মৃত্যুকালে তারা যদি কোন পাপাচারে লিপ্ত থাকে, তবে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনায় প্রাণহারানো মানুষগুলো নিজেদের পরিবারের জন্য হালাল উপার্জনে ব্যস্ত ছিলেন। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে তারা অন্যায় উপার্জনে না জড়িয়ে পরিশ্রমের কাজ বেছে নিয়েছিলেন। সুতরাং মহান শক্তিমান আল্লাহ পাক এ অসহায় মানুষগুলোকে নিজের করুণাতলে আশ্রয় দিবেন, এমন আশা আমরা করতেই পারি।
পাশাপাশি যাদের অবহেলা ও অসতর্কতায় এতগুলো জীবনহানি ঘটল, তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহী করতে হবে বিচারের মাঠে। রাসূল সা. সতর্ক করে বলেছেন, কোন শিংওয়ালা ছাগলও যদি অন্যায়ভাবে আরেকটি শিংবিহীন ছাগলকে আঘাত করে, তবে আল্লাহ পাক এ ছাগলদুটোকেও কিয়ামতের মাঠে জীবিত করবেন।
তারপর আঘাতকারী ছাগলের কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্তের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করাবেন।
প্রিয় পাঠক, সামান্য প্রাণী ছাগলের শিংয়ের আঘাত যে মহান শক্তিমান লিখে রাখছেন, তিনি কি বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন ক্ষমতাবান দায়িত্বশীলদের অবহেলা দেখছেন না? যারা এ ঘটনায় দায়ী, প্রতিটি প্রাণের বিনিময়ে তাদেরকে হিসাব দিতে হবে। সেদিন চোখের পানি ফুরিয়ে রক্তবন্যা বের হলেও এক বিন্দু ছাড় পাওয়া যাবে না ঐ মহান শক্তিমানের বিচারালয় থেকে?
এখানে প্রকাশিত হয়েছিল আমার এ লেখাটি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।