আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন বাঁচাতে জীবনবাজি----সাভার ট্রাজেডীতে উদ্ধারকর্মীদের মনোবল দেখে মুক্তিযুদ্ধের সেই উদ্যামতা কে দেখতে পাই

ধর্ম যার যার , বাংলাদেশ সবার চার দিকে লাশের গন্ধ, এর মধ্যেই মুখবন্ধনী বেঁধে কাজ করে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীদল। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকজনকে দেখা গেল, কোনো মুখবন্ধনী নেই তাদের। জীবন বাঁচাতে সব তুচ্ছ করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গত বুধবার সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর এই উদ্ধারকর্মীরাই হতাহতদের বাঁচানোর কাজটি শুরু করেন। এখন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য সংস্থাগুলোর কর্মীরা কাজ করলেও স্বেচ্ছাসেবী এই কর্মীদের তৎপরতা থেমে নেই।

এদের অনেকে গত চারদিন ধরেই কাজ করছেন। শনিবার দুপুর, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে বিধ্বস্ত ভবনের সামনে চিকিৎসকদের কাছে উপুড় হয়ে ছিলেন সুঠাম দেহের যুবক এজাজুদ্দিন (৩০)। তার গেঞ্জিতে তখনো লেগে আছে ইট-সুরকির ধুলা, যেন যুদ্ধাহত এক সৈনিক। বিধ্বস্ত ভবনে উদ্ধার কাজ থেকে নেমে এসেছিলেন এজাজ, পা থেকে তখন রক্ত ঝরছিল। ২০/২৫ মিনিটের সেবায় সেরে উঠে ফের হাসিমুখে আবার নেমে পড়ার প্রত্যয়।

এজাজ বলেন, “তিনদিন হলো উদ্ধার কাজে নেমেছি। মাঝে মাঝে দেহের শক্তির কাছে হেরে যাই। ঝুঁকি আছে, ভেতরে বেশ দুর্গন্ধও। তারপরও একটি প্রাণের আশায় খুঁজে ফিরছি। ” কাজ করার সময় পায়ে আঘাত পান এজাজ, কীসের আঘাত তা-ও বুঝতে পারেননি।

যখন দেখলেন, তখন চিকিৎসার জন্য নিচে নেমে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কাজে পুনরায় নামার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় এই যুবকের। একটি বেসরকারি কোম্পানির পারসেজ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত এজাজ জানালেন, দুর্গতদের সেবায় নিজের উদ্যোগেই কাজে নেমে পড়েছেন তিনি। এজাজের মতো শ’ শ’ স্বেচ্ছাসেবী এখন রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে। বিভিন্ন ফাটল ধরে খুঁজছেন আটকে পড়াদের।

জীবিত মানুষের সন্ধান মিললেই ছুটে যাচ্ছেন পানি, অক্সিজেন সিলিন্ডার আর লোহা-কংক্রিট কাটার যন্ত্র নিয়ে। স্বজনসন্ধানী শ’ শ’ মানুষ এই স্বেচ্ছাসেবীদের দিকেই তাকিয়ে আছেন, তারা নেমে এলেই ঘিরে জানতে চাইছেন, নতুন কোনো খবর মিলেছে কি না। বোন সীমাকে খুঁজতে এসে এক নারীকে ছুটে আসতে দেখা গেল স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে- “ভাই, আমার বোনকে একটু উদ্ধার করে দাও। তোমাদের মুখ থেকে বললেই আমার বোনরে পাবো। সে বাথরুমের পাশে একটি কে আটকানো রয়েছে।

আপনারা একটু মাইকে ঘোষণা দিতে বলেন, আপনারাই আমাদের ভরসা। ” এর কিছুণ পরেই ঘোষণা এলো সীমাকে উদ্ধারের। বোনের খবর পেয়ে হাসির উদ্ভাস দেখা গেল ওই নারীর মুখে, এরপর ছুটলেন সিএমএইচে, ওই হাসপাতালেই নেয়া হয়েছে সীমাকে। মানিকগঞ্জের বাবুর্চি আহমদ হোসেন জানালেন, তার হাত ধরেই তিনশ জন জীবিত ব্যক্তি উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে একটানা কাজ করতে থাকা এই যুবক বলেন, চট্টগ্রামের হামজারবাগে ভবন ধসের সময় ছিলেন আহমদ।

ওই অভিজ্ঞতা নিয়েই এবারের উদ্ধার কাজে নেমেছেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনের নিচের বেজমেন্টে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ছোট গর্ত দিয়ে গিয়ে তৃতীয় তলা থেকে ১২ জন জীবিতকে উদ্ধার করেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবী এই যুবকদের কাজের প্রশংসাও করলেন উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল হাসান শহীদ সোহরাওয়ার্দী। “এ উদ্ধার কাজে প্রশিতি কমান্ডোরা যেমন আছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের সাড়াও কম নয়। প্রশিতি ও অপ্রশিতিদের সাহসের জোরেই এ অসম্ভব কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে।

” “আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলেও যেভাবে উদ্ধার কাজ চলছে তাতে বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল হয়ে থাকবে,” বলেন তিনি। উদ্ধার অভিযান নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের কথা তেমন তুলে ধরা হয় না বলে অনুযোগ করলেন কয়েকজন; অবশ্য এটাকে যে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা-ও জানালেন তারা। স্বজনের খোঁজে উদ্বিগ্নরা যে ‘স্যালুট’ দিচ্ছেন, সেটাকেই নিজেদের বড় প্রাপ্তি বলছেন তারা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.