আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গার্মেন্টস, হলওয়েলের মৃত্যুকূপ ও নূরজাহানের আকাশ পানে ঝাঁপ

গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না নূরজাহান আসলে আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল। চেয়েছিল দিগন্তের অজানায় সন্তর্পনে হারিয়ে যেতে। চুপি চুপি। আকাশ যেখানে নীলিমায় হারিয়ে গেছে। সেখানে কী পেতে চেয়েছিল নূরজাহান? অথবা নিতান্তই উদ্দেশ্যবিহীন ছিল তার শূন্যে উড়াল।

সে শুধুই উড়ালপঙ্খী হতে চেয়েছিল। নিরন্তর ভাসতে চেয়েছিল সুদূর আকাশের পানে। সে কি মুক্তি চেয়েছিল? জেনে গিয়েছিল ডানা মেলে দিলেই মুক্তি। নূরজাহান মুক্তি পেয়েছে। জাগতিক অভাব-অভিযোগ, মান-অভিমান, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে সে মুক্তি।

তাজরীন ফ্যাশনস এ সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে গিয়ে সে তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল। এমনতো নয় যে নিচে কোন প্রিয়জন তার জন্য হাত বাড়িয়ে বসেছিল। প্রাণ বাঁচানো সেই ঝাঁপ সফল হয়নি। নিচে রাখা নির্মাণ সামগ্রীর উপর আছড়ে পড়ে তার করুণ মৃত্যু হয়। উড়াল দিবার আগে কী মনে পড়েছিল নূরজাহানের? প্রিয় সন্তান আদনানের মায়াবী মুখ? হ্যাঁ।

আদনানের শরীরে সে নিজের শরীরের গন্ধ পায়। আদনান যে তার কী আপন। আদনানের কারণেই ও বেঁচে আছে। আট বছর স্বামীর ঘর করে অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা সয়েছে। শুশুড়, শ্বাশুড়ি আর ননদের বকাঝকা খেয়ে অনেক দিন মাটি কামড়ে পড়েছিল।

কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে কোন ভালোবাসা পায়নি। তাহলে কোন আশায় এতো কষ্ট সইবে ও। তাইতো ছোট আদনানকে আঁচলে লুকিয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় গার্মেন্টস এ চলে যায় নূরজাহান। একটি ছোট্ট কুঠরীতে আদনানকে নিয়ে তার কষ্টের সংসার। সমাজে স্বামী ছাড়া সংসার করতে যত বিপত্তি হয় তার সবগুলো সয়ে আদনানকে নিয়ে তার নিরন্তর স্বপ্ন বোনা।

আর দুইমাস পরেই আদনান স্কুলে ভর্তি হবে। বন্ধের মধ্যে স্কুলও দেখে এসেছে সে। আহ! তার আদনান স্কুলে যাচ্ছে। পিঠে ব্যাগ নিয়ে গুটি গুটি পায়। দৃশ্যটি ভাবতে ভাবতে নূরজাহানের চোখে জল আসে।

নূরজাহানকে যারা শেষ বারের মতো দেখেছিলেন তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, মেয়েটা দেখতে ভারি সুন্দর হয়েছিল। চোখেমুখে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল। শরীরের রং ফুটছিল। চালচলনে সপ্রতিভতা কারও চোখ এড়ায়নি। প্রতিবেশী বড়বোন ফরিদাকে বলেছিল, ‘নিজে রোজগার করি।

ইচ্ছেমতো খরচ করি। এই স্বাধীনতাই আমাকে ভালো রেখেছে। ’ নূরজাহান আরো বলেছিল, ছেলে আদনানই তার বেঁচে থাকার ভরসা। যত কষ্টই হোক আদনানকে সে লেখাপড়া করাবে। আদনানের কিছু হলে সে বাঁচবেনা।

গত ২৬ তারিখ নূরজাহানের লাশ এসে তার গ্রামের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার মধ্যকর্ণা গ্রামে পৌছে। মায়ের লাশের সাথে আদনান এসেছে । আদনান কি জানে ওর কাছে আসার জন্যই মা শূন্যে ঝাঁপ দিয়েছিল? আদনান জানেনা ওর মুখের দিকে তাকিয়েই নূরজাহান অনেক কষ্ট বুকে নিয়েও বেঁচে ছিল। কিন্তু নব্য হলওয়েলরা মুনাফার লোভে যে মৃত্যুকূপ তৈরি করেছে, সেই কূপে মৃত্যু হলো নূরজাহানের। মৃত্যু হলো একটি স্বপ্নের।

অনেক ভালোবাসার। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.