আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনন্দ বেদনার কাব্য- ২য় পর্ব-বঙ্গদেশীয় ললনাদের ছলনা

যে সকল ছাগু আর ভাদা আসে আশপাশ, জীনের বাদশা তাদের পিছে দেয় মুলি বাঁশ। অনেকদিন পর আবার লিখতে বসলাম। সবাইকে হাসানোর কঠিন কর্মযজ্ঞ নিয়ে মাঠে নামলেও কেন জানিনা আজকের লেখাটা অন্যদিকে মোড় নিল। প্রানপণ চেষ্টা করেও আজকে কাউকে হাসাতে পারলাম না। বরং নিজেই দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে গেলাম অতীতের কিছু কষ্টের কথা মনে করে।

কীবোর্ডে হাত রেখে কখন যে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল নিজেও টের পেলাম না। চোখের পানি গড়িয়ে যখন টি-শার্টে পড়ল তখনই বুঝতে পারলাম হাসানোর মত কঠিন কাজ আজকে কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তার চেয়ে বরং আমার সেই গোপন ডায়েরী থেকে কিছু লিখা যাক। এই আনন্দ বেদনার কাব্য সিরিজের লেখাগুলোর আমি নাম দিয়েছি অফট্রেকের লেখা। ড্রাইভারদের যেমন অনেক সময় হাইওয়ে পাশ কাটিয়ে অফ-রোড়ে গাড়ি চালাতে মন চায় অনেকটা সেইরকম। এই লেখাটা লিখতে একদমই মনে সায় দিচ্ছেনা।

শুধু শুধু নিজের কষ্ট বাড়িয়ে কোন লাভ নাই। কে চায় নিজের হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে। সৌভাগ্যক্রমে সুনীলের ”ভালবাসা প্রেম নয়” পড়া ছিল। তাই নিজেকে মাঝে মাঝে মনে হয় কামালের মত। কামালও একজনকে নিজের কষ্টের কথা বলেছিল।

আমারটা একদমই বলতে ইচ্ছে করেনা। ভেবেছিলাম কোনোদিনও কাউকে বলবনা। কিন্তু ডায়েরিটা আজকে সামনেই খোলা ছিল,হাতছানি দিয়ে বার বার ডাকছিল আমাকে। নিজের সাথে অনেক মনস্তাত্তিক যুদ্ধের পর লেখার জন্য আবার কীবোর্ডে হাত রাখলাম। কারন ইতিমধ্যে আমি জেনে গেছি আমার আর কিছুই হারাবার ভয় নেই।

সবকিছুর অনেক উর্ধ্বে আমি। যারা আমার প্রথম লেখাটা পড়েননি তারা এইখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। আর কিছু না হোক এটুকু সান্তনা পাব এই ভেবে, কাউকে না কাউকে তো কামালের মত বলে যেতে পারলাম। “তোমার বিয়ের পর ফোন করে প্রথমেই শুনতে হল তোমার একগাদা সুখের ফিরিস্তি। তোমার জন্য নাকি দুইখানা কাজের মেয়ে রাখা হয়েছে, শুধুমাত্র তোমার বান্দিগিরি করার জন্য।

তাই তোমার বলতে গেলে কোন কষ্টই করতে হয়না। হা!হা!হা! শুনে একচোট হেসে নিলাম। আমি জানতাম বিয়ের পর মেয়েরা নিজের সংসার নিজেই কোমর বেধে গুছিয়ে নেয়, যাতে নতুন পরিবেশের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। সেখানে দুইটা কাজের মেয়ে যদি তোমার সুখের উৎস হয়ে থাকে,তাহলে কি আর করা ? তোমার চরিত্রের এই দিকটার সাথে একদমই পরিচিত ছিলাম না। তারচেয়েও বড় কথা তুমি আলী মর্তুজাদের যৌথ ফ্যামিলিকে প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছ, সেই সাথে তার তিন হালি ভাই বোনকেও।

তোমাকে সবাই কত আদর করে,কত দেখতে পারে। তার লম্বা কাহিনীও শুনতে হল। এও বললে, এই রকম যৌথ ফ্যামিলিতেই তুমি বিয়ে করে যেতে চেয়েছিলে, তাই তুমি এখন অনেক সুখী। নিজেকে প্রথম শ্রেনীর বেকুব মনে হল। দুইটা বছর পাগলের মত তোমাকে ভালবাসার পরও তোমার যৌথ ফ্যামিলি প্রীতি আবিস্কার করতে না পারার দুঃখে অনেক হাসি পেল এই ভেবে যে, আর যাই হোক আমাদের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে আমার বাবা-মায়ের আরও কয়েক গণ্ডা বাচ্চা-কাচ্চা পয়দা করে আলীদের মত পরিবার বড় করা রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার ছিল।

আমার চাচা-জ্যাঠারাও সবাই প্রতিষ্ঠিত,নিজেদের সুখী গৃহকোন নিজেরাই সাজিয়ে নিয়েছে। যৌথ ফ্যামিলির কথা বললে সবাই হেসে উড়িয়ে দিবেন। দাদা-দাদীও বেচে নাই। তাই তোমার চাওয়ামত যৌথ ফ্যামিলি আমি কোনদিনও তোমাকে দিতে পারতাম না। এই আধুনিক সমাজে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির গুরুত্ব কতটুকু তা সমাজ বিজ্ঞানীরা ভাল বলতে পারবেন।

কিন্তু আমার মায়ের একটা কথায় শুধু বলি, প্রায় কথা-প্রসঙ্গে মা বলতেন, আমাদের দুই ভাই আর এক বোনকে নিয়ে নাকি মা মহা মুসিবতে আছেন। এই তিনখানা সন্তান মানুষ করতেই নাকি তার জিন্দেগী কাবার হয়ে যাবে। তাই পাড়া-প্রতিবেশীর ও মামীদের “আপনার আর একটা মেয়ে থাকলে পরিবারটা সুন্দর হত” এই ধরনের আহ্লাদী কথা-বার্তা মা খুব একটা আমলে নিতেন না। আর প্রতি উত্তরে বাবা নাকি বলতেন, আমরা তিন ভাই-বোনই নাকি বাবার মাথা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট, আর একটা দুইটা থাকলে নাকি বাবা সংসার ধর্ম বিসর্জন দিয়ে বনবাসে যেতেন। কিন্তু এখন আমি আর আমার ভাই-বোনরা সবাই জানি, এমন বাবা-মায়ের সন্তান হতে পারা শুধু ভাগ্যে থাকলে হয়।

এমন বাবা-মায়ের জন্য আমি আমার সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি,তাও মনে হয়না তাদের ভালবাসা আর মায়া-মমতার সামান্যতম প্রতিদান দিতে পারব। সেই দুঃসাহসও কোনদিনও হবে না। সে যাই হোক, তোমার যৌথ ফ্যামিলি প্রীতি অনেক পরে আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে, মেয়েরা বিয়ের পর আগের প্রেমিকের কাছে কোনভাবেই ছোট হতে চায় না। বিশেষকরে, এটা প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লাগে,আগের জনকে ধোকা দিয়ে এখন যার সাথে আছে তার সবকিছুই অনেক ভাল। তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে একটুও ভুল হয়নি।

তার যা নেই তার কথা ভুলেও মুখে আনবে না,কিন্তু যা আছে তা আগের প্রেমিককে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, রংচঙ দিয়ে না বললে মনে শান্তি আসবে না। ভাবটা যেন এই, আগের প্রেমিকের সবকিছু ছিল আবর্জনা আর আমার বর্তমান স্বামীর যা আছে তা পেয়ে আমি আনন্দে আত্নহারা। মেয়েদের এই কৌশলগত ডিগবাজি আর ভন্ডামির কারন এখন আমার জানা হয়ে গেছে। তাই আমি মোটামোটি নিশ্চিত তোমার স্বামী আলী-মর্তুজাদের পরিবারে যদি সদস্য হিসেবে গোয়ালঘরে দুইটা বলদ গরুও থাকত, তাহলে তুমি তাদের প্রশংসায়ও পঞ্চমুখ থাকতে। আমি জানি,তুমি অনেক উল্লাস নিয়ে কথাগুলো আমাকে বলেছিলে, কিন্তু তাসনীম তুমি কি একবারও টের পেয়েছ তোমার এসব কথা আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে, হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরন হয়েছে,কতটা আহত আমি হয়েছি।

জানি আমার এ যন্ত্রনা,বুকভরা অভিমান আর কষ্টগুলো কোনদিনও তোমাকে ছুয়ে যাবেনা। যেভাবে তুমি আমাকে উপহাস ও তিরস্কার করেছ, নিজেকে কখনও এত ছোট আর উপহাসের পাত্র বলে মনে হয়নি। এইভাবে আমাকে উপহাস না করলে, ছোট না করলে কি তোমার খুব বেশী ক্ষতি হয়ে যেত ? সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেয়েছি, যখন তুমি তোমার হাজব্যান্ড আর আমার তুলনামূলক বিচারে গেলে, তোমার হাসব্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে আমি কতটা নিম্নমানের জীব তার বিস্তারিত বর্ননাও তোমার মুখে শুনলাম,তোমার হাসব্যান্ড দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াতে থেকে পড়াশুনা করেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, তোমার পতি দেবতা নাকি আমার মত সিটি কলেজে পড়েছে, কম্পিউটার এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। হায় খোদা! শুনে আমি কাদব না হাসব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

আসলে এসব বলে প্রছন্নভাবে,তুমি আমাকে তোমার হাসব্যান্ডের Strong Opponent বানালে। খুব কষ্ট পেলাম তোমার এই রকম আচরনে। তাসনীম তুমি যে একটা নর্দমার কীট আর ভেতরটা যে আবর্জনাই ভরতি তা ভালভাবেই বুঝতে পারলাম। দীর্ঘ দুই বছর তোমার সাথে থাকার পরও তোমার ভেতরটা যে এতটা কুৎসিত তা আগে কখনও টের পাইনি। অনেক পরে বুঝেছি, তোমার এইসব বলার পেছনে তাৎপর্য আর যুক্তিটা কোথায় ছিল।

তুমি দীর্ঘদিন আমার সাথে ভালবাসাবাসির নামে ভন্ডামী করেছ, আমাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তোমার। সেইদিক থেকে বলছি, খুব ছোটবেলা থেকেই আমার বুদ্ধিভিত্তিক একটা ব্যক্তিত্ব দাড়িয়ে যায়। দুনিয়াদারির মারপ্যাঁচ গুলো বুঝতে শেখার সাথে সাথে তা আরও পূর্ণতা পায়। কেউ যদি আমাকে সামান্যতম তিরস্কার,আপমান আর অবহেলা করে, তা আমি প্রায় সাথে সাথে টের পায়। যেহেতু তুমি আমার সাথে অনেকদিন মিশেছ, তাই তুমি ভাল করেই জানতে যে,আমার Personality কতটা Forceful, কতটা Strong।

কোনকিছু দিয়ে তুমি আমাকে হেয় করতে পারতে না, শুধু জানতে তোমার হাসব্যান্ডের সাথে তুলনা করলে আমি সবচেয়ে বেশী আহত হব। এই মোক্ষম অস্ত্রটাই তুমি আমাকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করলে। একটা ব্যাপার কি জানো তুমি, যার যার লাইফের অ্যাচিভমেন্ট তার কর্মদক্ষতা আর যোগ্যতার উপর। আলী মর্তুজা যা অ্যাচিভ করেছে,তার জন্য সে চেষ্টা করেছে তাই সে পেরেছে। আমি যা চেষ্টা করেছি আমি তা পেয়েছি।

তুমি বল দেখি? আমি কি গন্ডমূর্খ ছিলাম? একটা পর্যায়ে অনেক কষ্ট পেয়ে,বুকভরা অভিমান নিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়া করে বিদেশ পাড়ি দিয়েছি। আমি জানি এটা নিতান্তই একটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না। দেশে করার জন্য অন্তত এক হাজারটা অপশন আমার হাতে ছিল। কিন্তু কেন যে এত দূরদেশে পরবাসী হলাম তার কোন কারনই আমি এখনও খুজে পায়নি। শতবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি কেন এখানে আসলাম? এখানে সবই আছে, আবার কিছুই নেই।

আমার নাড়ির বন্ধন,সকল আত্নীয়তার বন্ধন তো আমার জন্মভূমিতে। মাঝে মাঝে বুক ঠেলে অনেক কান্না পায়, কিন্তু আমার কান্নার আওয়াজ তো আমি নিজেই শুনিনা,অন্যেরা শুনবে কি করে? শুধু জানতাম তাসনীম, দেশে তোমার সমস্ত স্মৃতি রেখে আমাকে চলে যেতে হবে অনেক দূর। মাঝে মাঝে নিজেকে জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মত মনে হয়। মনে হয় সবকিছু ছেড়ে যদি ওপারে চলে যেতে পারতাম,সেই অনন্ত যাত্রার দিকে যে যাত্রার কোন শেষ নাই। আমি জানি,এসব বলেও এখন কোন লাভ নাই।

আমি এখন এসব কিছুর অনেক উর্ধ্বে। আমার জাগতিক কোন আনন্দ নেই, কোন কিছুই আমাকে আর মুগ্ধ করতে পারেনা। যে আমি প্রজাপতির ডানার বাহারি রঙ, মাছরাঙ্গা পাখির বর্ণীল আলোকছটা দেখে আনন্দে আত্নহারা হতাম, সেই আমি, নিজের চারপাশের পৃথিবীর রঙ পানসে মনে হয়। শুধু প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি তোমার সমস্ত স্মৃতি ভুলে থাকতে, কিন্তু কয় পারছি না তো। Nelly Faurtado আমার অনেক প্রিয় অসাধারন একজন Singer, তার একটা Singel আছে অনেক পপুলার।

“ Its All Right ” কতবার যে শুনেছি গানটা তার কোন ইয়ত্তা নাই। “ Oh you don’t mean nothing at all to me, No you don’t mean nothing at all to me, But you done what it takes the set me free, Oh you could be everything to me.” এই গানের কথাগুলো খুব সত্য মনে হয়, অন্তত আমার জন্য । মাঝে মাঝে মনে হয় এটাই কি নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাউকে ভালবাসার মানে? ভালবাসার অপর পিঠটা কি এতটাই কুৎসিত, কদর্য আর ছল-চাতুরী আর ভন্ডামিতে ভরা? সবার শেষে কামালের মত বলতে চায়, আর কাউকে ভালবাসতে মন সায় দেয়না। তারচেয়ে অনেক ভাল সবাইকে ভালবাসবো, ভালবাসা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে চাই তাহলে আর কষ্ট পেতে হবে না, শুধু মাঝে মাঝে বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়, সেটা কার জন্য ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। সবাইকে নিরন্তন শুভেচ্ছা।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------- এই লেখাটা আমার অসম্ভব প্রিয় দুইজন ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট আর চেয়ারমেন ০০৭ কে উৎসর্গ করলাম। এদের একজন বিবাহিত আর একজন এখনও বিয়ের জন্য মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে মানে সিঙ্গেল। হা হা হা!! পুনশ্চঃ এই লেখাটা শেষ করতে করতে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল বহদ্দারহাট আর আশুলিয়া ট্র্যাজেডির খবর শুনে। দুনিয়াটা কি নরক হয়ে গেল নাকি ? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.