আমি একজন ভাল ছেলে । গুণগত মান বজায় না রাখা এবং লাইসেন্স নবায়ন না করার কারণে এতদিন পর মাত্র ৭৫টি কোম্পানির সিএম (মান) লাইসেন্স বাতিল করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বাতিল করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৭২টিই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পানি উৎপাদন করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঢাকাসহ এর আশপাশের জেলাগুলোতে প্রচুর খাবার পানির চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক পানি উৎপাদনকারী কোম্পানি গড়ে উঠেছে। পানির চাহিদা বেশি, তাই ঢাকায়ই বেশিরভাগ কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লায়ও বেশ কয়েকটি কোম্পানি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিছু কোম্পানি প্রথমে মান নিশ্চিত করে বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স নিলেও পরে আর মান সংরক্ষণ করেনি। এছাড়া অনেক কোম্পানি রয়েছে, যারা কোনো ধরনের লাইসেন্স না নিয়ে উৎপাদন ও বিপণন করে আসছে।
জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জুড়ে রয়েছে ৪ শতাধিক ফিল্টার পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানেই ফিল্টার পানি নাম দিয়ে নোংরা পরিবেশে জার ভর্তি করছে ওয়াসার দূষিত পানিতে।
কোনো কেনো স্থানে আবর্জনার ভাগারের ওপরেই পাইপ দিয়ে অবৈধ লাইনের পানি জারে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই পানিই জারের মুখ প্লাস্টিকের আবরণে অটো রিক্সা, ভ্যান ও পিকআপ দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন দোকান, হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ফুটপাতের চায়ের দোকান, হোটেলসহ অন্যান্য ছোটখাটো দোকানে এর সরবরাহের পরিমাণ বেশি। সরবরাহকৃত এসব পানির প্রতি জারের মূল্য নেয়া হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে। এই পানি পানে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে।
এতে করে তারা আক্রান্ত হচ্ছে, জন্ডিস, ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ ও কিডনি ফেইলিউরের মত মারাত্মক রোগে।
জানা গেছে, শুধুমাত্র রাজধানীতেই দৈনিক বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজারেরও বেশী জারের দুষিত পানি। বিএসটিআই’র সি এম লাইসেন্সে পানি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের যেসব হাইজেনিক কন্ডিশন রয়েছে তা বেশিরভাগ বৈধ পানি কারখানার মালিকরাও মানে না। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় বেশকিছু ওয়ান লাইন ফিল্টারের হাউজহোল্ড টাইপ প্লান্ট বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ কারখানার অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল।
রাস্তার পাশে নোংরা এবং ঘিঞ্জি বসতিপূর্ণ এলাকায় তা গড়ে উঠছে। অধিকাংশ কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ওজন টেকনোলজি অথবা আল্ট্রাভায়োলেটসহ অপরিহার্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই। এছাড়াও ওইসব কারখানায় নেই নিজস্ব কেমিস্ট। উৎপাদিত প্রতি ব্যাচ পানির ল্যাবরেটরি রিপোর্ট সংরক্ষণ করা দূরের কথা, তা তৈরিও করা হয় না কখনো। নকল মনোগ্রাম ও ব্যাচ নম্বর ছাপিয়ে লেভেল লাগিয়ে নির্বিঘেœ মানহীন পানি বাজারজাত করা হচ্ছে।
প্রতিদিন ফুটপাতের টং দোকান ও খাবার হোটেল থেকে শুরু করে চাইনিজ রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালতে বোতল, জার ও প্লাস্টিক কনটেইনারে সরবরাহকৃত মিনারেল ওয়াটারের জমজমাট ব্যবসা জেঁকে বসেছে। জার বা কনটেইনারে সরবরাহকৃত প্রতি গ্লাস পানির দাম মাত্র ১ টাকা হওয়ায় মানুষ সরল বিশ্বাসে তা পান করছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনোটাই বিশুদ্ধ মিনারেল ওয়াটার নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারের বেশির ভাগ মিনারেল ওয়াটারে মাত্রাতিরিক্ত রোগ জীবাণু পাওয়া গেলেও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দেখার যেন দায়িত্বশীল কেউ নেই। পানির মতো অত্যন্ত কোমল ও স্পর্শকাতর মনুষ্য জীবন রক্ষাকারী একটি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন ভোক্তাদের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা করলেও খাদ্যপণ্যের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই দায়িত্বহীন উদাসীনভাবে দিন কাটাচ্ছে।
শুধু এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএসটিআই মাঝে মাঝে লোক দেখানো নামকাওয়াস্তে অভিযান চালায়। কিছু জরিমানা আদায় করে সিল করে দেয় এবং জড়িতদের বিভিন্ন দন্ড প্রদান করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে এ অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয় না বা নজরদারী করাও সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে দূষিত পানি সরবরাহও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অথচ পানির অপর নাম জীবন।
স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিশুদ্ধ পানির কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য রক্ষা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে সক্রিয় তো নয়ই এমনকী সচেতনও নয়। সরকারী উদাসীনতা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণেœর শামিল। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ।
সরকারের এ গাফলতির প্রতিবাদে জনগণকেই সচেতন হতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সবকিছু প্রতিহত করতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।