সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ রমনী কোন ভেদাভেদ নাই। বিশ্বে যা কিছু মহান, সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর...........। আমি রক্তে, মাংসে গড়া অতি সাধারন এক মানুষ........... তবে আমি প্রচন্ড রকমের স্বপ্নবিলাসি। সেসব স্বপ্নের কিছ পর্ব- ১
পর্ব- ২
পর্ব- ৩
পর্ব- ৪
পর্ব- ৫
মাঝরাত, রাত আড়াইটা কি তিনটা বাজে।
তিতলি তার ঘরে পড়ছিল।
হঠাৎ করে তার কি যেন মনে হলো...........
> ফুপু বারান্দায় দাঁড়িয়ে কি করছো? ভেতরে আসো.......
কিছুক্ষন পর ফুপু তিতলির রুমে ঢুকলো।
> আচ্ছা তিতলি তুই কি করে বুঝলি, আমি বারান্দায় ছিলাম?
> এটা তো বলবো না। আমি ম্যাজিক জানি.........!
> কতো যে ভগি-চগি দেখাবি তুই........!
> ও তাই নাকি.....!?! ফুপু ভগি-চগি মানে কি?
> একদম ফাজলামি করবি না। আমি কি তোর ইয়ার ফ্রেন্ড লাগি নাকি........?
> তোমার ওপর মেজাজ কিছুটা খারাপ।
> আমি আবার কি করলাম?
> কিছু তো নিশ্চয়ই করেছো।
প্রথম কারন হলো, তুমি আমাকে বিয়ে দেবার জন্য অস্থির হয়েছো। বাবাকে এখন এব্যাপারে সমানে কানপড়া দিচ্ছো।
> দেখ মা, ইকবালের তো বয়স হয়েছে। আল্লাহ্ না করুক যদি কিছু হয়ে যায়। তাই বলছিলাম সুস্থ থাকতে থাকতে তোর বিয়ের ব্যাপারটা সেরে ফেলুক।
> বুড়ি তুমি তো দেখি মহাশয়তান........!!! মরার পরও দেখি তোমার শয়তানি কমে নাই.......!!!
> এই ছি, এসব কি বলিস............
> দেখো বুড়ি আমার সাথে চালাকি করতে আসবা না। এমনিতেই পরীক্ষার টেনশনে মাথা গরম!
> আচ্ছা ঠিক আছে যা আমি কিছুই বলবো না। তোর যখন ইচ্ছা তখন বিয়ে করিস.........
> ওহ্ হো, মেজাজ খারাপের দ্বিতীয় কারনটা তো বলা হলো না। ফুপু তুমি তো জানো, পড়ার সময় ডিসটার্ব করলে আমার ভীষন মেজাজ খারাপ হয়। তুমি জানো যে সামনে আমার পরীক্ষা, তারপরও কেন পড়ার সময় এসে ডিসটার্ব করছো?
> আচ্ছা যা সরি।
তোর সাথে কয়েকদিন যাবৎ কথা হয় না, তাই একটু এসেছিলাম...........
> সরি বললে তো হবে না। ফুল কনসানট্রেশন দিয়ে পড়ছিলাম। আর তুমি এসে আমার পড়ার ১২টা ২৪ বাঁজিয়েছো.........!!! আজকে রাতে আর পড়া হবে না। তোমার উপর ভীষন রাগ হচ্ছে। কি আর করা, যাও কড়া করে চিনি বেশী দিয়ে এক মগ চা বানিয়ে আনো তো..........
> তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে????????
> কেন কি হয়েছে?
> তুই কাকে কি বলছিস! তুই কি ভুলে গেছিস আমি যে এখন মৃত মানুষ.......????
> মৃত মানুষ হয়েছো তো কি হয়েছে? আমাকে তো সমানে জালাচ্ছো, আর সামান্য এক মগ চা বানাতে পারবে না..........???
> এত পকপক করিস না তো।
জীবিত এবং মৃত মানুষ দের কাজের মাঝে কিছু rules & regulations আছে। জীবিত মানুষ যা করতে পারে তার অনেক কিছুই মৃত মানুষ করতে পারে না। আবার মৃত মানুষ অনেক কিছু করতে পারে যা জীবিত মানুষরা করতে পারে না।
> বলো কি এসব.............!!!
> হুম। আমি যখন জীবিত ছিলাম তখন আমিও এসব জানতাম না।
মরার পর আস্তে আস্তে জানতে পেরেছি। এই বিষয়গুলো জীবিত অবস্থায় কোন মানুষই জানতে পারে না।
> দারুন ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার তো..........!!!
> হুম ইন্টেরেস্টিং তো বটেই। তবে তোকে এই ব্যাপারে আর বেশী কিছু বলা যাবে না।
> কেন কেন?
> এ ব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে।
আর এখন সব জেনে ফেললে তো মরার পর কোন মজাই পাবি না।
> হুম তা ঠিক। আচ্ছা ঠিক আছে, এখন শুধু বলো চা বানাতে কি সমস্যা?
> দাঁড়া দেখাচ্ছি..................
এই কথা বলেই ফুপু তাঁর একটা হাত বাড়িয়ে দিলো টেবিলে রাখা একটা বইয়ের দিকে। তিতলি অবাক হয়ে দেখলো ফুপু কোনভাবেই বইটা ধরতে পারছে না, বরং বইটার ভেতর দিয়ে ফুপুর হাত চলে যাচ্ছে।
> আচ্ছা ফুপু এমন কেন হলো?
> ঐযে বললাম rules & regulations...........
> ওয়াও, তুমি তো পুরো ক্যাসপার হয়ে গেছো..........!!!
> এটা আবার কি জিনিষ?
> এটা এক বিখ্যাত ভূতের নাম।
ক্যাসপার দ্যা ফ্রেন্ডলি ঘোস্ট..............
> কি যে বলিস যা তা, আমি কি ভূত নাকি.........!?!
> ভূত না তো কি? জালাতে তো কম জালাও না........!!! আচ্ছা যাকগে, তুমি অন্য কিছু ধরতে পারো না, কিন্তু আমাকে ধরতে পারো কিভাবে.............???
> এখানে একটা ব্যাপার আছে। তোর সাথে আমার একটা কঠিন আত্নিক সম্পর্ক আছে। সেটা অনেক আগে থেকেই। শুধু এই জনমেই না, এর আগে কালে কালে যখন আল্লাহ্ তোকে আর আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে তখন থেকেই তোর আর আমার আত্নার মাঝে এমন একটা সম্পর্ক বিদ্যমান। কালে কালে জীব সম্প্রদায় বিভিন্ন রুপে পৃথিবীতে এসেছে, কিন্তু আত্না একই থাকে।
আত্নার কোন পরিবর্তন হয় না।
> দারুন ব্যাপার তো! আমার মৃত্যুর পর আমিও কি এমন করে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবো?
> হ্যা পারবি। তোর বাবার সাথে তো তোর মা এভাবে যোগাযোগ করতে পারে।
> তাই নাকি?
> হুম তাই...............
> ফুপু আর ৫/১০ মিনিট পরই ফজরের আযান দিবে। তুমি কি চলে যাবে?
> হুম যাবো।
আর ঠিক ৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড পর চলে যাবো।
> আচ্ছা ফুপু তুমি দিনের বেলায় আসো না কেন?
> সূর্যের আলোতে আমি বের হতে পারি না। চোখ জ্বলতে থাকে আর চামড়ায় ভীষন চুলকানি হয়।
> হুম। আচ্ছা ফুপু তুমি কি কি খাও?
> খাই তো অনেক কিছুই।
> ফুপু তুমি কি চকলেট খেতে পারো?
> হ্যা পারি।
> আমি যদি তোমাকে এখন চকলেট দেই সেটা কি তুমি নিতে পারবে?
> চেষ্টা করে দেখি..................
তিতলি ফুপুকে তিনটা ক্যাডবেরি সিল্ক চকলেট দিল। তিতলি অবাক হয়ে দেখলো ফুপু চকলেটগুলো ধরছে না, কিন্তু চকলেটগুলো ফুপুর হাত থেকে ২ ইঞ্চি উপরে শূন্যে ভাসছে।
> তিতলি আমার যাবার সময় হয়ে গেছে। আমি তাহলে এখন যাই।
> আচ্ছা। খোদাহাফেজ।
হঠাৎ করে ফুপু ভ্যানিশ হয়ে গেলো। এই ব্যাপারটা তিতলি আগেও দেখেছে। কিন্তু আজকে যা কিছু ঘটলো আর ফুপু যা যা বললো, সেসব দেখে আর শুনে তিতলি ভয়াবহ রকমের অবাক হয়েছে।
কিছুক্ষন পর তিতলি রান্নাঘরে গিয়ে চা বানালো। এরপর চা খেতে খেতে বারান্দায় কিছুক্ষন পায়চারি করলো......................
ভোরবেলা বিছানায় যাবার পর তিতলি কিছুতেই ঘুমুতে পারছিল না। ফুপুর সেই ব্যাপারগুলো বারবারই তার মনে হচ্ছিল.............................
(চলবে.............) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।