আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেঙ্গু জ্বরের ইতিকথা

ডেঙ্গু জ্বর। এটি কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। বিভিন্ন ধরনের জ্বর হতে পারে। তবে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, নিউমোনিয়া, হাম, ফুসফুস এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ ইত্যাদি নানা কারণে জ্বর হতে পারে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ডেঙ্গু প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা খুবই কঠিন।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাস। ভাইরাসজনিত রোগের সাধারণত কোনো প্রতিষেধক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ডেঙ্গু অভিধান অনুযায়ী ইংরেজি শব্দটির প্রকৃত উচ্চারণ ডেঙ্গি, তবে ডেঙ্গু শব্দটি বহুল প্রচলিত। অন্যান্য ভাইরাল রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই।

লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও আপনা আপনি সেরে যায় সাত দিনের মধ্যে। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে এর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে। যদি সময়মতো ডেঙ্গুর যথাযথভাবে চিকিৎসা করা না যায়, তবে রোগীর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। দেখা দেয় ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু জ্বর।

সাধারণত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস মশার দেহে ঢোকে। সেই ভাইরাসবাহী এডিস মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস তাঁর দেহে ঢুকে পড়ে এবং আক্রান্ত হন ওই ব্যক্তি। কাজেই যেহেতু এডিস মশা এ রোগের বাহক, তাই আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশের এলাকাজুড়ে মশা মারার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রও ধ্বংস করতে হবে। লক্ষণ: হঠাৎ করে জ্বর।

কপালে, গায়ে, চোখে ব্যথা। চোখ নাড়ালে, এদিক ওদিক তাকালেও ব্যথা। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া। কালো কিংবা লালচে কালো রঙের পায়খানা, এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত বের হতে পারে।

ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক। মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কীভাবে বোঝা যাবে : অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নভাব, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। ফের রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।

প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে। পরিশুদ্ধ জল যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমারেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট, অথবা প্রয়োজনে হোল ব্লাড প্রয়োজন হতে পারে।

রোগীর মৃত্যু হয় কেন : অত্যধিক তাপমাত্রার জ্বরের জন্য দেহে দ্রুত জলশূন্যতা দেখা দেয়। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশেপাশের রক্তনালীতে চাপ পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ। ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশি মাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যায় কমে যায়। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।

ফলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় শক সিনড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটে। রোগীর মৃত্যু হয়।

কোন্‌ পরীক্ষা করতে হবে : রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। প্রথমদিন এন এস আই পরীক্ষা, চতুর্থদিনের মাথায় প্লেটলেট কাউন্ট করাতে হবে। এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা হলেও করতে হবে। সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৩-র বেশি) হয়, তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি রুটিন পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরী। যদি প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয়, তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা : বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ জল খাওয়া, বিশ্রাম ও তরল খাবার, ও আর এস, নুন চিনির জল খেতে হবে। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এই। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে অ্যাসপিরিন বা ক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ মোটেই নয়।

এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। কখন মশা কামড়ায় : ডেঙ্গু’র মশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। ভোরে সূর্যোদয়ের আধঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে।

আমরা যদি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকি, তাহলে ডেঙ্গুকে অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব। কাজেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজের ঘর ও আঙিনায় মশার উৎস ধ্বংস করুন। ফুলের টব, পুরোনো ক্যান বা পাত্র, এ সি মেশিনের জমা জল, গামলা, গাছের কোটরে জমা জল পরিষ্কার, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে বৃষ্টির জল জমে না থাকে— এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।