আমি ভালোবাসতে ভালবাসি
নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন শেখ সায়মা হোসেন পুতুল বলেছেন, “দেশের ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে অটিজম আজ আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণে পারিবারিক পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ মনোযোগই মূল হাতিয়ার। ”
তিনি বলেন, “মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে কোনোরকম হেলা না করে তার বিকাশের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাটুকু যাচাই করে তাকে সহযোগিতা করতে হবে। ”
অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব উত্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
‘অটিজম আক্রান্ত শিশু, তার পরিবারের জন্য আর্থ-সামাজিক সহায়তা’ শীর্ষক প্রস্তাব উত্থাপন উপলক্ষে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিশেষ সভা বসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর ইকোসক চেম্বারে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভুক জেরেমিক, মহাসচিবের বিশেষ দূত ও সহকারী মহাসচিব শামসাদ আকতার, ইকোসকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লুইস আলফনসো দ্য আলবা, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. জ্যাকব কুমারেসান, অটিজমকে স্বীকৃতি দেওয়ার চলমান আন্দোলন ‘অটিজম স্পিকস’ এর প্রতিষ্ঠাতা বব রাইট ও সুজান রাইট, জাতিসংঘে ফিলিপাইনের স্থায়ী প্রতিনিধি লিব্রান এন কাবাকতুলানসহ আরো অনেকে বক্তৃতা করেন।
সমাপনী বক্তব্যে সায়মা হোসেন বলেন, “অটিজম মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা, যা শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৮৮ জনের একজন এবং সারবিশ্বে ৭ কোটি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত।
”
তিনি আরো বলেন, “প্রতি বছর যে সংখ্যায় এইডস, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো রোগে শিশুরা আক্রান্ত হয়, তার চেয়ে বেশি সংখ্যায় যোগ হচ্ছে অটিস্টিক শিশু। আমাদের দেশে গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি অটিজম আক্রান্তদের জন্য দরকার বহুমুখি সহায়তা। ”
এ সময় বাংলাদেশের প্রস্তাবে মানসিক প্রতিবন্ধী সমস্যায় আক্রান্তদের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, “জাতিসংঘে এই রেজুলেশন গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের মনোযোগ, পক্ষান্তরে পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিক অবদান, সামাজিক অংশগ্রহণ এবং বৃহত্তর অর্থে বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ”
এ কারণে তিনি অটিজমের ব্যাপারে ব্যক্তি পর্যায় থেকে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের এই রেজুলেশন পাসের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা আশা করেন।
তিনি বলেন, “এটি প্রস্তাব আকারে গ্রহণের জন্য ১২৯টি দেশের সমর্থন দরকার। তবে প্রস্তাবের খসড়া বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মেক্সিকো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ, ক্যারিবীয় নয়টি দেশ, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশ কো-স্পনসর হয়েছে। ”
তিনি আশা করেন এটি প্রস্তাব আকারে গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দেশের সমর্থন মিলবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাওয়ায় তার শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন সহকারী মহাসচিব শামসাদ আকতার। বান কি-মুন তাঁর বার্তায় বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অটিজম আক্রান্তদের সহায়তায় আরো বড় পরিসরে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
তাত্ত্বিকভাবে আমরা যা বুঝতে সক্ষম, সব ক্ষেত্রেই এর চর্চা হয় না। শুরুতেই অটিজম আক্রান্তদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চাকরির জন্য উপযোগী করে তুলতে শিক্ষাক্ষেত্রেও সহযোগিতা দিতে হবে। ”
জাতিসংঘ মহাসচিব তার বার্তায় অটিজমসহ সব ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সবাইকে এগিয়ে আসারও আহবান জানান।
ভুক জেরেমিক বলেন, “এ বিষয়ে সচেতনতা ঘাটতি দূর করতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। ”
বাংলাদেশের খসড়া প্রস্তাবের পক্ষেও সমর্থন ব্যক্ত করেন অধিবেশনের সভাপতি।
তহবিল গঠনের বিষয়েও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভুক জেরেমিক জানান, “আগামী বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যার বিষয়বস্তু হিসেবে থাকবে মানসিক প্রতিবন্ধিতা। পাশাপাশি শিগগিরই এর জন্য সহায়তাকারী হিসেবে কয়েকজনকে নিয়োগ করা হবে। ”
সভায় উপস্থিত সকলে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে যুগোপযোগী অভিহিত করেন এবং আহবান প্রস্তাবে সায় দিতে জানান সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।