আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিলুয়া জীবনের নারীগণ

নিতান্ত কম বয়সে আমি প্রেমে পড়েছিলাম এক মেয়ের। তারপর তাকে নিয়ে একদিন গিয়েছিলাম দক্ষিণের বাদাবনে। মেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, এ গাছের নাম জান? বলেছিলামঃ গাছ, ফুল, পাখি ও নারী-- এ চারকে আলাদা আলাদা নামে আজো চেনা হয়ে ওঠেনি। ঃ তার মানে জগতের সব নারী তোমার চোখে আজও এক? সম্পর্কটা ভেঙ্গে গিয়েছিল সেদিনই। আমার চোখে সে যেকোন নারীর একজন-- এই অভিমান তার মন থেকে আমি শত যুক্তিতেও ঘোচাতে পারিনি।

পূর্ণ যৌবনে নদীকে নিয়ে একসন্ধ্যায় গিয়েছিলাম সাগরসঙ্গমে। পূর্ণযৌবনা নদীর আজন্মসাধের শীৎকারধ্বনি শুনতে শুনতে তার সফেন বুকে ভেসে আদিম উদ্দামতার ঝড় তুলতে তুলতে ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়াকালে সে বলেছিল, তুমি এই নদীটাকে চিনতে পার? আমি বলেছিলাম, না। শুধু জানি এ হিমালয় থেকে খসে আসা এক দুরন্ত হিরন্ময় কন্যে। ঃ হিমালয়দুহিতা নয়। আমি বলছি আমার কথা।

আমাকে বোঝ তুমি? ঃ পৃথিবীর সব নদীর চরিত্রই আমার কাছে একই ঠেকে-- ভিন্ন ভিন্ন উৎস ও বিস্তার কিন্ত উদ্দেশ্য সবেরই ঐ এক। ঃ উদ্দেশ্যটা কীরকম? ঃ কলকল করে বয়ে চলা, খলখল হাসি হাসা, মাঝে মাঝে দু’কুল প্লাবিত করা, সম্পদে সংহারমূর্তি ধারণ করা, বিপদে বিষণœতায় আক্রান্ত হওয়া আর এই নিরন্তর ছুটে চলার ক্লান্তি-অবসাদকে বয়ে নিয়ে সাগরের বুকে মিশে যাওয়া। ঃ তার মানে জগতের সব নদী কেবল তোমারই পিয়াসী? তোমার বুকে মিলতে পরলে তবেই তাদের শান্তি? আমি হেসেছিলাম। আমার পিতৃপ্রদত্ত সাগর নামটাকে কেন অসার্থক বলে ভাবব? নদী কিন্ত হাসেনি। আরো কত নদী আমার বুকে বিলীনতার সুখ অনুভব করেছে এই সংশয়ে সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল বহুদূর।

মধ্যবয়সে এক উদীয়মান তারকাকে নিয়ে গিয়েছিলাম সাগরকন্যার বুকে। নক্ষত্রখচিত আকাশতলে ভেজা বালুকে শয্যা বানিয়ে পৃথিবীর আদিমতার সবটুকু রস পান করতে করতে সে বলেছিল, ঐ তারাটার নাম কী জানেন? ঃ জগতের সব তারা আমার চোখে একই দেখায়, আলাদা করে এদেরকে আমি শনাক্ত করতে পারিনা। ঃ তার মানে আপনি আরো অনেককে আমারই মত........। কথাটা মিথ্যে নয়। তাই আমি তাকে বোঝাবার চেষ্টা করিনি কিছূই।

এই বৃদ্ধ বয়সে আমি আর কাউকে নিয়ে কোথাও যাইনা। জগতের কোন নদী কিংবা নারীকে আজো আমার চেনা হয়ে ওঠেনি। তাদের প্রশ্নমালার সদুত্তর দেবার যোগ্যতাও আমার অর্জিত হয়নি। পাছে তারা ভুল বুঝে আমায় ছেড়ে যায় এই আশঙ্কায় আমি আর তাদেরকে বুকে টানার ভরসা পাইনা। শুধু একেকদিন মধ্যরাতের অসহ্য নির্জনতায় মনে হয়ঃ জগতের সকল নারীকে আজো কেন আমার কাছে একই মনে হয়? কেন তাদের কেউ স্বকীয় যোগ্যতায় আমার মনে বিশিষ্টতার আসনটা দখল করে থাকলনা? অথচ ওদের সবাই হয়ত সেই বিশিষ্ট আসনটিই চাইছিল।

হায় নারী! বন্যপুরুষের লাগামটাকে তোমার আঁচলে না বেঁধে একনিষ্ঠতার দাবি করলে আমি অধম কীইবা দিতে পারি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।