ইবিতে শিক্ষক পেটাল ছাত্রলীগ
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া থেকে : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা হয়। উপাচার্য, উপ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতির ডাকে এই কর্মসূচি চলছিল। শিক্ষকদের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার সমর্থক সংগঠনটি।
‘নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষকরা। কর্মবিরতির পাশাপাশি গতকাল ছিল প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান কর্মসূচি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি এয়াকুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের কিল-ঘুষিতে অন্তত ৫ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে সমিতির সভাপতি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রুহুল কে এম সালেহ বলেন, শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিলেন, এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আমাদের ওপর নগ্নভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
একপর্যায়ে শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন এবং পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের নিরাপদে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিক্ষকরা প্রশাসন ভবনের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তখন ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীর একটি মিছিল প্রশাসন ভবনে যায়। শিক্ষকরা যেখানে বসেছিলেন, মিছিলটি সেখান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষকরা বাধা দেয়। তখন মিছিলকারীরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়।
শিক্ষকদের ওপর হামলার পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মী প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকের সামনে আধা ঘণ্টা ধরে সমাবেশ করে। ছাত্রলীগের সমাবেশ শেষ হলে শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেন, উপাচার্যের মদদেই শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। তারা ঘোষণা দেন, উপাচার্য, উপ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।
শিক্ষকদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামালউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই সমাবেশের সময়ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ইট ছোড়ে বলে অধ্যাপক এয়াকুব আলীর অভিযোগ। ওই সময় দায়িত্ব পালনরত তিন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। তারা হলেনÑ ভোরের কাগজের প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম, সকালের খবরের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আমার দেশের প্রতিনিধি ইমামুল হাসান।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ক ম তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হামলার সময় ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।
তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান দাবি করেছেন, হামলার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে কারা যেন হামলা চালিয়েছেÑ এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি এখন শান্ত।
হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক সমিতির সমাবেশে কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তা আমি জানি না এবং এই হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়।
তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন বলেন, একদল শিক্ষক ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল, আমরা এর প্রতিবাদে প্রশাসন ভবনের ভেতর একটি মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম, তারা আমাদেরকে বাধা দিতে চাইলে আমরা এর প্রতিবাদ করেছি মাত্র। হামলার নিন্দা জানিয়ে এর তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
ওসি সাংবাদিকদের বলেন, হামলার বিষয়ে বিকাল পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট উপাচার্য, উপ উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সচলের দাবিতে সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। এর আগে সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনের সামনে ছাত্রজোট সমাবেশ করে।
এতে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রকিব মো. হাসান ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক রাশিব রহমান। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।